২১ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১৭

ব্যাংকিং খাতে বেড়ে গেছে সন্দেহজনক লেনদেন

দুই মাসেই ঘটেছে সাড়ে তিন শ’টি লেনদেন

ব্যাংকিং খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়ে গেছে। একই সাথে বেড়েছে হুন্ডি প্রবণতা। গত দুই মাসে দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে সাড়ে তিন শ’টি। একই সাথে হুন্ডির তথ্য পাওয়া গেছে তিনটি। অবৈধ হুন্ডি তৎপরতা, বিদেশে অর্থপাচার এবং মানিলন্ডারিং তৎপরতা প্রতিরোধ ও দমনের কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের সভায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে সন্দেহজনক লেনদেন ও হুন্ডি তৎপরতা বাড়লেও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কোনো জরিমানা বা দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের তদারকি কার্যক্রমে দুর্বলতার কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। সেই সাথে আর্থিক খাতে অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। এ দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখানো হয়েছে, তিন বছরের ব্যবধানে হুন্ডি তৎপরতা বেড়ে ১০ দশমিক শূন্য চার শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশে উঠেছে।
জানা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে সন্ত্রাসী কাজে অর্থ লেনদেন বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট ব্যাংকগুলোতে তদারকি করে থাকে। কোনে া গ্রাহকের লেনদেন সন্দেহজনক মনে হলে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হয়। একই সাথে কোনো গ্রাহক একই দিনে ১০ লাখ টাকা বা তার অধিক টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করলে বা জমা দিলে তার তথ্যও (নগদ লেনদেন বা সিটিআর) মাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা পর্যালোচনা করে অস্বাভাবিক মনে হলে তা ব্যাংকগুলোতে তদারকি করবে। ওই তদারকিতে কোনো গ্রাহকের লেনদেনের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে নগদ জরিমানাসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর তদারকি করা হতো। এতে অনেক ক্ষেত্রেই গরমিল পাওয়া যেত। গড়ে প্রতি মাসেই ৫ থেকে ১০টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। এর ফলে সন্দেহজনক লেনদেন করতে অনেকেই ভয় পেতো। কিন্তু এখন লোকবলের অভাব ও আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের তদারকির দুর্বলতার কারণে অহরহ সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বড় প্রমাণ মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ৩৪৮টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া। একই সাথে হুন্ডির তথ্যও পাওয়া গেছে তিনটির।
এ দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক তথ্য থেকে দেখা যায়, হুন্ডি তৎপরতা দিন দিন বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যান মতে, ২০১৩ সালের ৬৭ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্স আসত ব্যাংকিং চ্যানেলে, বাকি ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ আসত নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে। এর মধ্যে ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ আসত হুন্ডির মাধ্যমে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে গত ২০১৬ সালে এসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাস আয়ের পরিমাণ ৬৭ দশমিক ৩২ শতাংশ থেকে কমে ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ হয়েছে। আর নন ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাস আয়ের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৯ দশমিক ২৮ শতাংশ হয়েছে। আলোচ্য সময়ে হুন্ডির তৎপরতা ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টাকা পাচার ও হন্ডি তৎপরতা বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। বিভাগের প্রকৃত কাজে কর্মকর্তাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে। অন্যথায় হুন্ডি ও টাকা পাচার সহসাই বন্ধ হবে না বলে ব্যাংকাররা মনে করেন।

 

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/237484