২১ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১৫

শাহবাগে লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পরে সাত কলেজে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা * গুরুতর আহত ২, আটক ১২ * ঢাবির মতো এসব কলেজেও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা নয়

কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে বৃহস্পতিবার শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণাসহ ৭ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর ৭ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ওই আন্দোলনে নামে। পুলিশের হামলায় এদিন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর। ওই সময় সেখান থেকে ১৮ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। তবে পরে ৬ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়।


এ ঘটনার পর কলেজগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, দু’দিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে তার কার্যালয়ে কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের বৈঠকে এসব তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই সভায় এসব কলেজে ভর্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যাতে সিদ্ধান্ত হয়- ঢাবির মতো এই ৭ কলেজেও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকছে না।

এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি এই সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, এর পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের পাঠ্যসূচি, পাঠ্যক্রম, পরীক্ষার দিন-তারিখ ও পদ্ধতি- কিছুই জানানো হয়নি। সে কারণে লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছিল তারা। এ নিয়ে কলেজগুলোকে বহুবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়ে দ্রুত পরীক্ষা নেয়াসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় জড়ো হতে থাকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১০টা থেকে জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। সমাবেশ শেষ করে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে শাহবাগ মোড় অবরোধ করতে যায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, লাঠিপেটা করে এবং ৭-৮ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। তবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাইমুর হোসেন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান গুরুতর আহত হয়। দু’জনকেই প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে সিদ্দিকুর রহমানকে সেখান থেকে আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, পুলিশের ছোড়া টিয়ারগ্যাস শেল সরাসরি চোখে লাগায় নাইমুর হোসেনের দুই চোখে মারাত্মকভাবে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তার চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম।

রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার যুগান্তরকে বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরে যেতে বলা হয়। কিন্তু তারা অনুরোধ উপেক্ষা করে। পুলিশ তাদের আধা ঘণ্টা সময় দেয়। তখন কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী শাহবাগ মোড়ের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। তাই পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় ১২ জনকে আটক করা হয়।’ তবে শিক্ষার্থীরা জানায়, ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

শাহবাগ থেকে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ কাঁটাবন দিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরির দিকে যায়। সেখানে তারা সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনের সড়কটি আধা ঘণ্টার জন্য অবরোধ করে রাখে। জানা গেছে, এখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরাতে সহযোগিতা করার কারণে ঢাকা কলেজের ৬ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

আটক শিক্ষার্থীরা হল : ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শফিউল, মাস্টার্সের মো. আসাদুজ্জামান, গণিত তৃতীয় বর্ষের রফিউল ইসলাম, হিসাববিজ্ঞান মাস্টার্সের শেখ কামাল, মো. ওয়াহিদুর রহমান, মো. রায়হায় হোসেন, চতুর্থ বর্ষের সিফাত, দ্বিতীয় বর্ষের ইয়াসিন, মাস্টার্সের মিজানুর রহমান, চতুর্থ বর্ষের আতিক হাসান, বাঙলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মো. সাইমুন হাসান এবং তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স তৃতীয় বর্ষের ইমরান শাহ।

সাত কলেজ হল : ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল ইসলাম কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং মিরপুর বাঙলা কলেজ। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল : ১. কলেজগুলোর বিষয়ের ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রকাশ (একাডেমিক সিলেবাস, পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রশ্নের ধরন, প্রশ্নের মানবণ্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কলেজগুলোর সম্পর্ক ইত্যাদি)। ২. সম্মান ২য় ও ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদেও মৌখিক/ব্যবহারিক পরীক্ষা অল্প সময়ে নিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশ। ৩. সম্মান ৩য় বর্ষ ও মাস্টার্স শেষপর্বের পরীক্ষা দ্রুত গ্রহণ। ৪. ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স শেষ পর্বের ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা। ৫. ডিগ্রির আটকে থাকা সব বর্ষের পরীক্ষা দ্রুত শেষ করা। ৬. অধিভুক্ত কলেজগুলোর সব তথ্যসংবলিত একটি ওয়েবসাইট তৈরি এবং ৭. শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সেশনজট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ‘তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সমাবেশ শেষ করে যাওয়ার সময় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় আমরা টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ করে কয়েকজনকে আটক করি।’

পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত : সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে তার কার্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সভায় বিভিন্ন পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের একটি সভা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অধ্যক্ষদের পরামর্শ ও মতামত অনুযায়ী বিভিন্ন পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষা শুরু হবে ১০ সেপ্টেম্বর। অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে ১৬ অক্টোবর। ডিগ্রি প্রথম ও তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৪ নভেম্বর। এ ছাড়া ডিগ্রি প্রথম বর্ষ, মাস্টার্স প্রথম ও শেষ পর্বের প্রাইভেট (রেজি) পরীক্ষা ২৫ জুলাই থেকে ২৯ আগস্টের মধ্যে হতে পারে বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়।’

মোয়াজ্জম হোসেন জানান, সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়- এখন থেকে অনার্সের খাতা মূল্যায়নে দু’জন পরীক্ষক থাকবেন। একই সময়ে সাতটি কলেজে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা কেন্দ্র ‘ইন্টার-চেঞ্জ’ হবে। এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পরীক্ষা দেবে। এ ছাড়া সাত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হবে। শুধু এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। ফলে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকছে না।

মোয়াজ্জম হোসেন আরও জানান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ডিনস কমিটির সভায় নিয়মনীতি ঠিক করা হবে। ২৩ জুলাইয়ের পর সেটি হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি নীতিমালা দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ছাড়া যে ৬ কলেজে পাস কোর্স রয়েছে তাদের বিষয়েও সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/07/21/141515/