২১ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১২

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও প্রবল বর্ষণ

তলিয়ে গেছে খুলনা নগরী

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে প্রবল বর্ষণে খুলনা মহানগরীতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। প্রায় সব রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। প্লাবন ভূমির মতো সড়কের ওপর দিয়ে স্রোতধারা প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। পানির প্রবাহ বেড়েছে নদ-নদীতেও। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।


খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি নিম্নচাপের ফলে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। শুক্রবার (আজ) থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষ ঘরের বাইরে বের হননি। ফলে জলাবদ্ধ নগরী ছিল অনেকটাই ফাঁকা। রাস্তাঘাটে দু’একটি রিকশাভ্যান চললেও বড় গাড়ির চলাচল ছিল না বললেই চলে। এছাড়াও নগরীর বড়বাজারসহ অধিকাংশ মার্কেটের দোকান প্রায় বন্ধই ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের প্রায় পুরোটা পানির নিচে। কোথাও কোথাও ৩-৪ ফুট পানি জমে রয়েছে। ফলে যানবাহন বের হলেই পানিতে আটকে যাচ্ছে।

অতিবৃষ্টিতে মহানগরীর রয়্যাল মোড়, নিরালা, বাগমারা, লবণচরা, রূপসা, বড়বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, খালিশপুর শিল্পাঞ্চল, দৌলতপুর, নতুন রাস্তার মোড়, বয়রা, সোনাডাঙ্গা, গল্লামারি বাজার, পশ্চিম রূপসাসহ অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি প্রবেশ করেছে। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর অধিকাংশ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। যারা অফিস-আদালতে গেছেন, তাদের পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে।

রয়্যাল মোড়ের এক পথচারী শান্ত কাজি জানান, বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে বের হননি। তবে স্ত্রী অসুস্থ বোধ করায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। এ সময় গাড়িও পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে নিজেই বের হয়েছেন হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যেতে।

খালিশপুরের নতুন কলোনির বাসিন্দা তুহিন ভুঁইয়া জানান, প্রায় পুরো শিল্পাঞ্চলে বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় তাদের থালাবাসন ও হাঁড়িপাতিল পানির ওপর ভাসছে। তারা নারী ও শিশুদের নিয়ে খাটের ওপর জড়সড় হয়ে বসে দিন পার করছেন।

ফারদিন আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, সে পানিতে ভিজে দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যায়। এ সময় কোনো গাড়িও সে পায়নি।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, নগরীর অধিকাংশ ড্রেন ময়লায় ভরাট হয়ে আছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়না। সারা শহরই যেন ময়লার ভাগাড়। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলেন মানুষ। এছাড়া ২২টি খালের অধিকাংশেরই এখন অস্তিত্ব নেই। ফলে পানি দ্রুত নামতে পারে না। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের সব পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে সারা দিনই কাজে লাগানো হয়েছে। আর জলাবদ্ধতার জন্য অতিবর্ষণ আর নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াকে দায়ী করেন। তিনি আরও বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য নদীর সেেঙ্গ সংযুক্ত পাঁচটি স্লুইস গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া খাল দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া চালু আছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন সংলগ্ন বিভিন্ন মৌজায় যেসব খাল রয়েছে, তা মুক্ত করার ক্ষমতা আমাদের নেই বলে তিনি জানান।

 

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/21/141525/