২১ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১১:০৮

নদী ভাঙনে দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষত

চট্টগ্রামের নদ-নদী ফের ফুঁসছে, হালদা বিপসীমার উপরে : সুরমা ও কুশিয়ারার পানি আরো হ্রাস পদ্মার পানি প্রতিদিনই কমছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়াবহ ভাঙন : কাজ নেই, খাবার নেই, সর্বত্র হাহাকার

কমছে পানি, বাড়ছে ভাঙন। দেশজুড়ে লাখো লাখো বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ রেড়েই চলছে। এনজিওদের নিষ্ক্রিয়তায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বগুড়ায় যমুনায় পানি কমছে, বাড়ছে ভাঙন, দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি চিত্র। পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বশান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ। ফরিদপুরে পদ্মার পানি প্রতিদিনই কমছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়াবহ ভাঙন। প্রবল বর্ষণে নদীর পানি বৃদ্ধিতে মাদারীপুর শহর রক্ষ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। শিবচরে পানি কমলেও ভাঙন শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বন্যা ও ভাঙনে ১৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে ২৫টি বসত বাড়ি বিলীন হয়েছে। বন্যা-ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দি মানুষ খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। দেশে চলমান বানভাসি মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা তুলে ধরে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ সংবাদদাতা জানান, বিপদসীমার উপরে এবং কাছাকাছি থাকা নদ-নদীগুলোর পানি আরও হ্রাস পেয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। তবে বানের পানি ভাটির দিকে যতই নামছে প্রতিদিন একের পর এক গ্রাম-জনপদে ততই ভেসে উঠছে সর্বত্র বন্যার ক্ষতচিহ্ন। বসতঘর, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ আর বিস্তীর্ণ ফসল, ক্ষেত-খামারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বন্যার তোড়ে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামো প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি প্রশাসন বন্যার ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে এখন কোথাও তেমন কাজ নেই। নেই খাবারের জন্য রুজি-রোজগারের উপায়, জীবিকার অবলম্বন। এক-আধবেলা খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে লাখো মানুষ। সর্বত্র ত্রাণের জন্য হাহাকার অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু কোথায় ত্রাণ সাহায্য?
এদিকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল পর্যন্ত অতিবৃষ্টিতে ফের ফুঁসছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পার্বত্য অববাহিকার নদ-নদী। এরমধ্যে হালদা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এবার বর্ষায় ও এর আগে হালদা নদী সংলগ্ন বিস্তীর্ণ জনপদ দু’ফায় বন্যায় প্লাবিত হয়। অব্যাহত রয়েছে হালদা তীরে ভয়াবহ ভাঙন। তবে সিলেটে সুরমা নদীর পানি দীর্ঘদিন পর অবশেষে গতকাল বিকেলে বিপদসীমার নীচে নামে। আর ৩টি পয়েন্টে ঊর্ধ্বে রয়ে গেছে কুশিয়ারা নদী, যদিও তা কমতির দিকে। টাঙ্গাইলের এলাসিন পয়েন্টে ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর থেকে আরও নেমে এসেছে। তবে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি খরস্রোতা নদ-নদীগুলোতে পানি ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুসারে উত্তর চট্টগ্রামের হালদা নদীর পানি বিগত ৩০ ঘণ্টায় দ্রæত ৮০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ফটিকছড়ির নারায়ণহাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৫ সেমি উপর দিয়ে বয়ে যায়। নারায়ণহাটে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ মিলিমিটার। কক্সবাজারের টেকনাফে বৃষ্টিপাত হয় ১৮০ মিমি। ফেনীর পরশুরাম পয়েন্টে মুহুরী নদীর পানিও দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আজ (শুক্রবার) বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। অতিবর্ষণ অব্যাহত থাকলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের নদ-নদীগুলোতে পানি আরো বেড়ে যেতে পারে। তবে কর্ণফুলীতে তেমন পানি বাড়েনি। উত্তর জনপদে তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে আবারও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনো বিপদসীমার বেশ রয়েছে।
এদিকে গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হচ্ছে। তবে অতিবৃষ্টি চলতে থাকলে চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ কোথাও কোথাও ফের অবনতি ঘটতে পারে। পাউবোর মোট ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিনটি নদ-নদী ৫টি পয়েন্টে। পানি বৃদ্ধি পায় ২৭টিতে, হ্রাস পায় ৫৭টি পয়েন্টে। অপরিবর্তিত থাকে ২টি পয়েন্টে। টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদীর পানি কমে এখন বিপদসীমার মাত্র ৭ সেমি উপরে রয়েছে। সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি আরো হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার এক সেমি নীচে নেমে গেছে। কুশিয়ারা নদী তিনটি পয়েন্টেই বিপদসীমার উপর থেকে আরও হ্রাস পেয়েছে। ফেনীতে মুহুরী নদীর পানি গত ৩০ ঘণ্টায় ১৮৭ সেমি বেড়ে গিয়ে সর্বশেষ বিপদসীমার মাত্র ১৩ সেমি নীচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উত্তরের তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে কিছুটা বেড়েছে, বিপদসীমার ৪৫ সেমি নীচে রয়েছে।
দেশের নদ-নদী প্রবাহের পূর্বাভাসে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীগুলোর পানির সমতল আরও হ্রাস পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল হ্রাস আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এবং পদ্মা সদীর পানির সমতল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীর পানি হ্রাস আগামী ২৪ ঘন্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, গত তিন দিন ধরে কমছে বগুড়ায় যমুনার পানি। তবে পানি কমার সাথে সাথে বাড়ছে নদী ভাঙন। দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি। বগুড়ার বন্যা কবলিত সারিয়াকান্দি উপজেলা, আংশিক বন্যা কবলিত সোনাতলা ও ধুনট উপজেলা প্রশাসন, জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন দপ্তর সুত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বর্ষার শুরুতেই বর্ষন ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল ২০ জুলাই বগুড়ার প্রশাসন সুত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও অবকাঠামো খাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। কৃষি বিভাগ বলেছে, এবারের বন্যায় ৪ হাজার ৯শ’ ৩৫ হেক্টর জমি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে উঠতি আউশ ফসলের জমির পরিমাণ সবচে বেশি ১হাজার ৭শ’ ১০ হেক্টর। এছাড়াও ৩ হাজার ৭শ ’১০ হেক্টর জমির পাট, ৪৮ হেক্টরের আমন বীজতলা এবং ১শ৭ হেক্টর জমির শাকসব্জীর ক্ষতি হয়েছে। অবকাঠামো খাতে সবচে বেশি ক্ষতি হয়েছে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা বিল্ডিং এর। শিক্ষা বিভাগ সুত্রে জানান হয়েছে এবারের বন্যায় বণ্যা কবলিত ৩ উপজেলার ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়,৫টি হাইস্কুল ও ২টি মাদ্রাসা বিল্ডিং এ পানি প্রবেশ করে অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন সুত্রে বলা হয়েছে সারিয়াকান্দির বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধের পুর্ব প্রান্তের নীচু এলাকা এবং চরাঞ্চলে ৬শ বাড়িঘর বণ্যার পানিতে ভেসে গেছে। মাসের শুরুতে বন্যার সুচনা হলেও বগুড়ায় এখন পর্যন্ত কোন এনজিওকে ত্রান তৎপরতা চালাতে দেখা যায়নি। যা সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। এব্যাপরে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় কোন এনজিও ত্রান তৎপতায় অংশ নিয়েছেন বলে তাঁর নলেজে নেই। তবে তিনি বলেন, সরকার এনজিওদের মুখাপেক্ষি নয়। সরকারের ত্রাণ ভান্ডারে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সফল ভাবে সরকার ত্রান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মাহবুবুল আলম জানান, ভারত ফাঁরাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলের কারনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে এসব এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি, আমবাগান, আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ফলে ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার অনেক মানুষ। হুমকির মধ্যে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অনেক স্থাপনা। এতে করে নদী তীরবর্তী এলাকার সাধারন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক ভাঙন আতংক। অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ফাঁরাক্কা বাঁধের কিছু গেট খুলে দেয়ার পর থেকেই পদ্মা নদীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পয়েন্টে গত ১৫ দিন ধরে বাড়ছে পানি। আর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি থেকে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে পদ্মার তীব্র ভাঙন। ভাঙনে রোডপাড়া গ্রামটি এখন পদ্মা গর্ভে। বিপুল পরিমান আম বাগান ও ফসলি জমি ইতিমধ্যে পদ্মায় বিলিন হয়ে গেছে। পদ্মার ভাঙন রোধে এই এলাকায় ২ বছর আগে নির্মিত নদী তীর সংরক্ষন বাঁধের শেষ অংশেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, গত দুই সপ্তাহ থেকে পদ্মায় পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে গত এক সপ্তাহ থেকে ভঙ্গনের তীব্রতা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। তিনি বলেন, গোয়ালডুবি, বিশ^াসপাড়া, ফাটাপাড়া, মালবাগডাঙ্গা, ক্যাড়াপাড়া এলাকায় বর্তমানে ভাঙন চলছে। রোডপাড়া গ্রামের অর্ধ শতাধিক পরিবার ভাঙনের কারনে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। গত সাত দিনে ওই এলাকাটি পদ্মা গর্ভে চলে গেছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, বর্তমানে স্থানীয় ইউপি কার্যালয় ভবন, ইউনিয়ন ভুমি অফিস, ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২টি মাদরাসা, মসজিদ, ঈদগাহ ও চরবাগডাঙ্গা বাজার হুমকির মধ্যে রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম জানান, আকস্মিকভাবে উজান থেকে পানি ধেয়ে আসায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, চরবাগডাঙ্গা এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে এই এলাকার ভাঙন প্রতিরোধের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা হবে।
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, ফরিদপুরের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু হওয়ায় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন। ফরিদপুরে পদ্মা, আড়িয়ালখা ও মধুমতি নদীর বিস্তৃর্ণ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই নদী পাড়ের ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পদ্মার পানি ১৮ সে.মিটার কমেছে বলে জানা গেছে।
ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন, সরদপুর ও মধুমতি নদী বিভিন্ন অংশে গত কয়েকটি ধরে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ডিক্রির চর ইউনিয়নের আয়েজউদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গি ও পাশের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গি, চরভদ্রাসনের এমপি ডাঙ্গি, গাজিরটেক, সদরপুরের আড়িয়াল খা এবং মধুখালীর কামারখালী এলাকায় নদীর শুর হয়েছে। এসব এলাকার ফসলী জমি, ঘর-বাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীতে। স্থানীয়দের দাবি এই সকল ভাঙন কবলিত এলাকায় ভাঙন রোধে কর্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, ভাঙন কবলিত ও পানি বন্দি মানুষের জন্য এই পর্যন্ত সরকারি সহায়তা পেয়েছে ১শ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাক্ষ টাকা।
মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, বর্ষার প্রবল বর্ষনে ও পদ্মা, আড়িয়াল খা নদীর পানি বৃদ্ধিতে মাদারীপুরের শিবচরে বর্ন্যাত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। গত কয়েক দিনে নদীর পানি কমলেও নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় অনেক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ায় দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। এ পর্যন্ত প্রশাসনের নিকট থেকে আশ্বাস ব্যাতীত কোন ত্রান সামগ্রী পৌছেনি ফলে দুভোর্গের শিকার অসহায় মানুষের চরম ক্ষোভ বেড়েছে। নদী ভাঙন প্রবল বর্ষনে মাদারীপুর শহর রক্ষা বাধ হমকির মুখে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়,প্রবল বর্ষণ ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে মাদারীপুর শহর রক্ষা বাধসহ আশেপাশের এলাকা নদী ভাঙগনের হুমকির মুখে রয়েছে। প্রবল বর্ষন ও নদীর পানির স্রোত অতি দ্রæত বৃদ্ধি পাওয়ায় লঞ্চঘাটের গুরুত্বস্থাপনাসহ অনন্ত অর্ধশতবাড়িঘর যেকোন মুহুর্তে নদীগর্ভে তলিয়ে যাবার আশংকা করা হচ্ছে। শহর রক্ষা বাধে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চঘাটের মুল পয়েন্টে প্রায় ৫০টি বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙনের মুখে বাসিন্দা সাংবাদিক আলী আকবর খোকা জানান, শহর রক্ষা বাধের মূল পয়েন্টে নদীর পানির স্রোত বারবার আঘাত হানায় আমার বাড়িঘর এখন যে কোন মুহুতে নদী গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে তাই আমি আমার পরিবার পরিজন নিয়ে নিদ্রাহীন রাত্রী যাপন করছি।
এদিকে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁর ভাঙণে মাদারীপুর শিবচর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের শতাধিক বাড়ি ঘর, মসজিদ, ফসলী জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙণের মুখে রয়েছে স্কুল-মাদ্রাসাসহ অসংখ্য বাড়িঘর।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙন কবলিতদের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ত্রাণের চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করি দু‘এক দিনের মধ্যেই আমরা ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবো।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বন্যা ও যমুনার ভাঙনে ১৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ সরকারি সহায়তা বলতে মিলেছে মাত্র ২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা। অবশেষে নামমাত্র ত্রান নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন। আর বিতরণকৃত সামান্য ত্রান পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে ও উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্ষামৌসুমের শুরুতেই উপজেলার অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকায় ভাঙন দেখাদেয়। এতে অর্জুনা ইউনিয়নে ৬০৫টি পরিবার ও গাবসারা ইউনিয়নে ৬৬৯টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়। অপরদিকে যমুনায় বন্যা দেখাদেওয়ায় অর্জুনা ইউনিয়নে ৩ হাজার ৪৫২টি পরিবার, গাবসারা ইউনিয়নে ৫হাজার ২০০টি পরিবার, নিকরাইল ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার পরিবার ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ১ হাজার পরিবার পানিবন্ধী হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভাঙনে ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করলেও অসহায় পরিবারগুলোর সাহায্যে সরকারি-বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মাঝে খোঁজ-খবর নিলেও তাদের ভাগ্যেজুটেনি তেমন কোন সাহায্য-সহায়তা। জেলা প্রশাসকের পক্ষথেকে ভূঞাপুরের চারটি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। আর স্থানিয় প্রশাসন এ থেকে অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নে ৯ মেট্রিক টন করে এবং নিকরাইল ইউনিয়নে ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন অর্জুনা ইউনিয়নের তাড়াই, কুঠিবয়রা, অর্জুনা, জগৎপুরা, ভরুয়া, গোবিন্দপুর, তালতলা ও রামাইলে পরিবার প্রতি ১০ কেজি হারে বরাদ্দকৃত ৯ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেন। বিতরণকৃত সামান্য চাল পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অভাবি মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মোঃ নুরুল আমিন জানান, ‘ভূঞাপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি ত্রান মন্ত্রনালয়কেও অবহিত করা হয়েছে। ইউএনও এবং পিআইওকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই আরও বরাদ্দ দেয়া হবে।’
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোশেদ জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ি লৌহজং উপজেলার ৮/১০ টি গ্রাম পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়েছে। পদ্মা নদীর পানি কমার সাথে সাথে তীব্র স্রোতের কারনে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রবন এলাকা গুলো হলো মাওয়া, কান্দিপাড়া, যশলদিয়া, কবুতরখোলা,চাইরপাড়,খড়িয়া। গত এক সপ্তাহে এসব এলাকায় প্রায় ২৫টি বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে টঙ্গিবাড়ি উপজেলার কামারখাড়া, হাসাইল-বানারি, দীঘির পাড়, পাঁচগাঁও এবং লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া, কুমারভোগ ও মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ২০টি গ্রামে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে পদ্মার তীরঘেঁষে বালু উত্তোলন করায় ওইসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।মুন্সীগঞ্জে মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।নদী ভাঙনে ক্ষতি গ্রস্ত ৩৮টি পরিবারের মাঝে আথিক সহায়তা দেওয়া হয়। প্রতিটি পরিবার কে ৪হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

https://www.dailyinqilab.com/article/88410/