২১ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৫০

ধনাঢ্য ছাত্র নেতৃত্ব

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

বেশ কয়েক মাস আগের কথা। আমার এলাকার এক ছাত্রনেতাকে প্রয়োজনে জাহাঙ্গীরনগরে ডেকেছিলাম। মোবাইল ফোনে তাকে বলছিলাম, বাসে এসে কোন গেটে নামবে। ছাত্রনেতাটি আমাকে বলল, তার নিজের গাড়ি আছে। গাড়িতেই সে আসবে। আমি তো শুনে থ! একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে প্রায় ৪০ বছর কর্মজীবনের পরে গাড়ির মালিক হতে পারিনি। এর মধ্যে আবার পাবলিক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলরও ছিলাম। এ জন্য কখনো ব্যক্তিগত হতাশা আসেনি। কিন্তু হতাশ হলাম ওই ছাত্রনেতার অর্জনে। একটি সরকারি কলেজের ছাত্রনেতৃত্বের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সে। বুঝতেই পারছেন তিনি সরকারি ছাত্রনেতা সুতরাং, এ অর্জন কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ছাত্রনেতাদের আন্দোলনসংগ্রামে এবং সঙ্কট সমাধানে যথার্থ ভূমিকা নিতে কারো কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা যখন বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখনই তারা গণমাধ্যমে আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গত সপ্তাহে তারা সংবাদপত্রে আলোচ্য বিষয় ছিল। স্বাভাবিক হলে কেউ গা করে না। কিন্তু যখন বিষয়টি তোলপাড় তোলে তখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। 

সংবাদ শিরোনামটি ছিল এ রকমÑ ‘বিলাসী জীবন নিয়ে প্রশ্নের মুখে ছাত্রলীগের নেতারা’। বিভিন্ন সংবাদপত্র এটি কমবেশি গুরুত্বের সাথে ছাপে। কোনো কোনো সংবাদপত্রে এ নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিলাসী জীবন, টাকার ভাগাভাগি, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ এবং কমিটির মেয়াদের বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে’। বিষয়টি সরকারবিরোধী কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন প্রকাশ করেনি। ১২ জুলাই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছাত্রলীগের এক সাধারণ সভায় এসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ওই সভায় কেন্দ্রীয় একাধিক সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাদের বক্তৃতায় বলেন, ছাত্রলীগকে বিভিন্ন সময় অনেক নেতা টাকা দিয়ে থাকেন। কিন্তু সেগুলো ছাত্রলীগের জন্য খরচ না করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের কাজে ব্যয় করেন। ৫৫ হাজার টাকা করে বাসাভাড়া দেন। ছাত্রনেতৃবৃন্দ এই টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চান। বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তাদের বিলাসী জীবনের অর্থের উৎস, সংগঠনের তহবিলে আসা অর্থের উৎস ও খরচের খাত জানতে চান। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ বা টেন্ডারবাজি করে টাকা উপার্জনের অভিযোগও সভায় উত্থাপিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের খরচের টাকা প্রধানমন্ত্রী দেন। সাধারণ সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রতি মাসে তাদের দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দেন। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধেও অনুরূপ অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। টাকার হিসাব চাওয়া নিয়ে সভায় একপর্যায়ে হট্টগোলও হয়। এর আগে ১৩ জানুয়ারি ছাত্রলীগের সভাপতি হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদীতে কর্মশালা ও সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বিপুলভাবে সমালোচিত হন। তখন বিলাসবহুল জীবন ও অঢেল অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যসভায় এর সমালোচনা করেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচার অনুযায়ী ছাত্রসংগঠনগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। অথচ বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির রয়েছে মহান ঐতিহ্য। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায় রয়েছে ছাত্রসমাজের ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্দোলনের দৃষ্টান্ত। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের পরে ছাত্রসমাজের সেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভাটা পড়ে। ‘মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগকে’ ছাত্রসমাজের ক্ষমতাশ্রয়ী অংশ ‘ভোগে পরিণত করার’ অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। মুক্তযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনীতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবক্ষয়ে এর প্রমাণ মেলে। এর প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয় অনেক ছায়াছবি ও নাটক। খান আতাউর আহ্বান জানান, ‘আবার তোরা মানুষ হ’। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনে ছাত্রসমাজের গৌরবদীপ্ত ভূমিকা ছাড়া তাদের তেমন কোনো অর্জন নেই। ২০০৭-০৮ সালে সামরিক সমর্থিত সরকারের আমলে প্রতিক্রিয়ামূলক ছাত্র আন্দোলনও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যে গণতান্ত্রিক সময়কালে গোটা জাতি ছাত্রদের একটি নিয়মতান্ত্রিক, গঠনমূলক ও শিক্ষামূলক আন্দোলনের আশা করেছিল সে সময়ে তারা জাতিকে হতাশ করে।
১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক চেহারা ছাড়া তেমন কোনো অর্জন চোখে পড়ার নয়। এ সময়ে ছাত্ররা সরকারের ‘ঠ্যাঙারে বাহিনী’ হিসেবে কাজ করে। প্রতিপক্ষকে দলন করাই তাদের একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষাঙ্গনগুলোতে যে যখন ক্ষমতাসীন সে দলের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। বিরোধীদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়ন করা হয়। তাদের অস্তিত্ব ঘোষণাও একটি অপরাধ বলে গণ্য হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তারকারী দুটো রাজনৈতিক শক্তিই ছাত্রদেরকে গণতান্ত্রিকতা, সহনশীলতা ও সহযোগিতার পথে নিতে ব্যর্থ হয়। সাধারণ শিক্ষকেরা একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার প্রয়াস নিলেও পদে পদে তা ব্যর্থ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারি প্রশাসনে প্রশ্নহীন তোষণকারীতে পরিণত হয়। ওই সময়ে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে আমার অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়। ভাইস চ্যান্সেলরদের সংগঠনে সার্বিক আলোচনায় এ মতামত উঠে আসে যে, ছাত্রনেতারা তাদের রাজনৈতিক গডফাদারদের নির্দেশেই চলেন। ভাইস চ্যান্সেলর, প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষকেরা কখনো কখনো তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। বর্তমানে অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনটি সব আইনকানুন, রীতি-রেওয়াজ উপেক্ষা করে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। গত আট বছরের ক্ষমতাসীনদের খতিয়ান নিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই যেখানে তাদের কর্তৃত্বে ক্ষতবিক্ষত হয়নি। তাদের ভয়ঙ্কর অবস্থা প্রধানমন্ত্রীকেও একসময়ে বিচলিত করে। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল কাদের অনেকবার তাদের গালমন্দ করেছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ১১ জুন ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় বলেন, টাকার জন্য কোনো অপকর্মে যাওয়া যাবে না। টাকার দরকার হলে আমার কাছে আসবে। আমি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। ওবায়দুল কাদেরের এই ব্লাংকচেক নিয়েও কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলেছেন। সে যা-ই হোক ছাত্রলীগ যে তার কথা শোনেনি গত আট বছর নয়, বরং জুন-পরবর্তী মাসগুলোতে শুধু পত্রপত্রিকার রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যায়, ওই নেতাদের একমাত্র উদ্দেশ্য টাকা উপার্জন করা।
জুন-পরবর্তীকালে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, ছিনতাই, পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর, শিক্ষক লাঞ্ছনা, অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত, খুনখারাবিসহ ৩৭টি ঘটনায় ছাত্রলীগ গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি ঘটনায় দু’টি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত আধিপত্য বিস্তার। আর আধিপত্য বিস্তারের অর্থ হচ্ছে টাকা হাতিয়ে নেয়া। দরপত্র ভাগাভাগি নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে এরা। দরপত্র যাতে ছিনতাই করে না নিতে পারে এ জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিজিটাল দরপত্র গ্রহণের পদ্ধতি চালু করা হলেও বাস্তবে কোনো ফল হয়নি। গত ছয় মাসে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও চুয়াডাঙ্গায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তিনজন নিহত হয়েছে। এ বছরের শুরুতে ঢাকা কলেজের আশপাশে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চাঁদার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা সাতটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। তখন কলেজ শাখার আহ্বায়কসহ ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলিস্তানে ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদের সময় মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ারী থানার সাধারণ সম্পাদক পিস্তল উঁচু করে গুলি ছোড়েন। ওই ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তাদের বহিষ্কার করা হয়। নেতাদের চাকরি না দেয়ায় গত ৩ মে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এরা ১৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তিন নেতাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। গত ছয় মাসে চট্টগ্রামে কয়েক দফা নিজেরা নিজেরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, লিপ্ত হয়েছে সংগঠনটি। বিভিন্ন উন্নয়নকাজের ভাগ পাওয়া, চাঁদাবাজির কর্তৃত্ব ও মাদক ব্যবসায়ের নিয়ন্ত্রণই এসব সংঘর্ষের কারণ বলে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারে ছাত্রলীগের কর্মী ইয়াসিন আরাফাত প্রাণ হারান। সংগঠনটি এতই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যে, এরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এদের দ্বারা পুলিশ লাঞ্ছিত হওয়ার অসংখ্য ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিগত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুলের নির্মাণ নিয়ে এরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। আরো প্রকাশিত অপরাধের মধ্যে রয়েছে, ছাত্রলীগের বাধায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বৈঠক পণ্ড। কেরানীগঞ্জের সালিস চলাকালে এক ব্যক্তিকে কোপানো। সংসদ সদস্যদের কার্যালয়ে গুলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে সংঘর্ষ এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ আসছে এদের নেতাদের বিরুদ্ধে। আরো গুরুতর অভিযোগÑ হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধে তারা জড়িয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাতেনাতে ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিগত ১৫ জুলাই প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাস আবার ভাঙচুর হয়েছে। ডাইনিংয়ে ‘ফাও খাওয়া’ আর ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রাবাসে ভাঙচুর করা হয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১২ সালের ৮ জুলাই এমসি কলেজে শিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জেরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল ছাত্রাবাসটি। এ ঘটনার তদন্তে গঠিত অ্যাকাডেমিক এবং পুলিশি তদন্ত উভয় ক্ষেত্রেই এ জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়। ১৮ জুলাই প্রকাশিত অপর এক খবরে দেখা যায়, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। একই দিন রাজশাহী ও পাবনায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া ১৬ জুলাই বরিশালে বানারীপাড়ায় স্বামীকে আটক রেখে এক নববধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ধরনের লুটপাট ও খুনখারাবির পরে প্রায়ই দেখা যায় যে সংগঠন ব্যবস্থা নিয়েছে। পরবর্তীকালে সেসব বহিষ্কার আদেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে মনে হয় অর্থবিত্তই তাদের রাজনৈতিক কালচারে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পরিচয় পেলেই ‘সাত খুন মাফ’ মনে করে। বিচারিক ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ তৈরি হয়েছে।
ছাত্রনেতাদের অর্থমুখী নেতৃত্ব সম্পর্কে খবর নিতে আমার দু-একজন ছাত্রের সাথে কথা বলি, যারা ক্ষমতাসীনদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তারা যে তথ্য দেয়, তা আরো ভয়ঙ্কর। ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতৃত্বের প্রতিটি পর্যায়ে অর্থের বিনিময়ে পদ বিতরণ করা হয়। পদ যত বড় অর্থের অঙ্ক ততই বড়। পরিমাণের কথা শুনলে অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। অথচ তা-ই সত্য। সামগ্রিকভাবে গোটা জাতির নৈতিকতায় যে ধস নেমেছে এটি তারই একটি অংশ। আইন করে অপরাধ দমন করা যায় কিন্তু মন-মগজে যখন এ রকম অনৈতিকতা বাসা বাঁধে তখন মেরামতটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ছাত্ররাজনীতির অর্থ-অনর্থ এবং ভয়ঙ্কর আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে অনেকবার। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা তাদের ক্ষমতার স্বার্থে তা হতে দেননি। কোনো একটি রাজনৈতিক দল যদি ছাত্ররাজনীতি অনুমোদন না করে, অপর দলটি হয়তো করবে। তারা রাজনীতিক আধিপত্যে এগিয়ে যাবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা এভাবে বখে যেতে দিতে পারি না।
লেখক : সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
mal55ju@yahoo.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/237443