২০ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৪

ড্রেজার কিনতেই ৮ বছর পার দরপত্র মূল্যায়নে ৬ বছর

নদী ড্রেজিং প্রকল্প

নদী ড্রেজিংয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ড্রেজার কিনতেই প্রকল্পের আট বছর পার হয়ে গেছে। তিন দফায় সাড়ে চার বছর সময় বাড়িয়েও ছয় বছরে ডিসচার্জ ডায়ার কাটার সাকশন ড্রেজার, বিভিন্ন অশ্বশক্তির টাগ ও হাইস্পিড ইন্সপেকশন বোটও কেনা হয়নি। কারণ দরপত্র মূল্যায়নেই ছয় বছর লেগে গেছে। প্রকল্পের আওতায় কেনা আনুষঙ্গিক অন্য যন্ত্রপাতিও মানসম্পন্ন নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, ঠিকাদার সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি। যেখানে এতবার সময় বাড়িয়েও ড্রেজার কেনা সম্ভব হয়নি সেখানে আরো তিন বছর সময় বাড়িয়ে তা সম্ভব হবে কি না সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যানুযায়ী, নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে ছোট বড় ও মাঝারি আকারের প্রায় সাড়ে ৭০০টি নদী রয়েছে। কিন্তু ড্রেজিং না করা এবং অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপের কারণে দেশের প্রায় ২৩০টি নদী এখন মৃত। বর্তমানে নদীগুলো দূষণ, পলি পড়া তীর দখল, গতি ব্যাহত করা ইত্যাদি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার দেশের বেশির ভাগ শিল্প নদীর তীর ঘেঁষে স্থাপিত হওয়ায় প্রতিদিন ১০০ টন শিল্পবর্জ্য নদীতে পড়ছে।
এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহর ও শিল্পাঞ্চলগুলোর ৮০ শতাংশ পয়োবর্জ্য কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে নদীগুলোতে রাসায়নিক দূষণ বাড়ছে। নদীর স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হচ্ছে। নদীস্বাস্থ্যের অবনতির দিক থেকে শীর্ষে গঙ্গা অববাহিকার দেশ ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল। প্রতি বছরই নদীগুলো ড্রেজিংয়ের জন্য শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেয়ার পরও অনেক নদী মরে যাচ্ছে।
ড্রেজিংয়ের জন্য ড্রেজার কিনতে গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অনেক প্রকল্পই হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে এক হাজার ৩০৯ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০১২ সালের জুনে এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতাসম্পন্ন ২১টি ড্রেজার, ৭ সেট ডিসচার্জ কাটার সাকশন ড্রেজার, ৯ সেট বিভিন্ন অশ্বশক্তির টাগ, দু’টি হাইস্পিড ইন্সপেকশন বোট, ড্রেজিংয়ের বিভিন্ন সামগ্রী কেনার কথা। অথচ গত ছয় বছরে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪৫.২৫ শতাংশ। এই অগ্রগতি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনা সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ধীরগতির কারণ জানতে চাওয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে পাউবোর বক্তব্য হলো, টেন্ডার আহ্বান শেষে মূল্যায়ন করে বড় ড্রেজার পেতেই দুই বছরের বেশি সময় লেগে যায়। এরপর টেস্ট-ট্রায়াল করার জন্য সময় প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় একাধিকবার টেন্ডার বাতিল করা হয়। আরো তিন বছর বাড়তি সময় পেলে ক্রয়কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। ডিসচার্জ কাটার সাকশন ড্রেজার কেনার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো, দরপত্র আহ্বান করে মূল্যায়নের কাজ চলছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় ৭ সেট ৬৫০ মিলিমিটার (২৬ ইঞ্চি) ডিসচার্জ কাটার সাকশন ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনার নিয়ম রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ সেট ড্রেজার পাওয়া গেছে। বাকি ৪ সেট ড্রেজারের মধ্যে ২ সেট ট্রায়াল শেষ এবং ২ সেট ট্রায়ালের অপেক্ষায় আছে। সরবরাহকারী যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় বিলম্বিত হয়েছে। সরবরাহকারী পিপিআর অনুযায়ী যথাসময়ে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্য দিকে, ১০ সেট ২৫০ মিলিমিটারের (১০ ইঞ্চি) ডিসচার্জ কাটার সাকশন ড্রেজার কেনার কথা ছিল। ৯ সেট বিভিন্ন অশ্বশক্তির টাগ, ২টি হাইস্পিড ইন্সপেকশন বোট, ড্রেজিংয়ের বিভিন্ন সামগ্রী কেনার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার একটিও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
আইএমইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মেয়াদ সাড়ে চার বছর বাড়ানোর পরও পাউবো ক্রয়কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আরো বলেছে, যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে নি¤œমানের পণ্য সরবরাহ করেছে তাদের বিরুদ্ধে পিপিআর অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/237211