১৯ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১০:৪২

হাতিরঝিলের পানিতে দূষণ

দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ; ভ্রমণকারীদের সংখ্যা কমছে

পচন ধরেছে রাজধানীর সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবন্ধব এলাকা হিসেবে পরিচিত হাতিরঝিলের পানিতে। মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকায়। দুর্গন্ধের কারণে কমে গেছে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যা। টেকা দায় হয়েছে আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের। কাওরানবাজার, বাংলামোটর, পান্থপথ, কাঁঠাল বাগানসহ আশপাশ এলাকার ড্রেনের পানির পাশাপাশি স্যুয়ারেজের পানি হাতিরঝিলের মধ্যে চলে আসায় পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, হাতিরঝিলের সোনারগাঁও হোটেল প্রান্ত দিয়ে বাইরের পানি হাতিঝিলের ভেতরে ঢুকছে। ময়লা আবর্জনাসহকারে আসা এ পানি হাতিরঝিলে প্রবেশমুখে স্থাপিত বিশেষ পরিষ্কারকারী যন্ত্র এসএসডিএসের মধ্য দিয়ে আসছে। তবে সেখানে একটি স্থানে তিনটি যন্ত্র থাকলেও গতকাল বিকেলে একটি চালু থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া পাশে আরো দু’টি যন্ত্র থাকলেও তা বন্ধ ছিল। এ দুটি দীর্ঘ দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়। পুরো হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সোনারগাঁও হোটেল প্রান্তের পানি অত্যধিক কালো রঙ ধারণ করেছে এবং এ অংশের পানিতে দুর্গন্ধও বেশি। বিজিএমই ভবন পার হয়ে সাতরাস্তা-মগবাজার সড়ক অতিক্রমের পর পানির কালো রঙ কিছুটা কমলেও স্বচ্ছ নয়। এ অংশে পানি সবুজ রঙ ধারণ করেছে। এ ছাড়া পুরো হাতিরঝিলের পানিতে কুচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
জানা যায়, প্রতি বছর বর্ষা মওসুম এলেই হাতিরঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশ এলাকার ময়লা-আবর্জনাযুক্ত স্যুয়ারেজের পানি হাতিরঝিলে চলে আসায় দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
হাতিরঝিলসংলগ্ন দিলুরোডের বাসিন্দা তোতা মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতি বছর বর্ষাকাল এলেই হাতিরঝিলের পানি খারাপ হতে শুরু করে। অন্য সময় পানি পরিষ্কার রাখতে ওষুধ ছিটাতে দেখা গেলেও এ সময় তা দেখা যায় না।
মধ্য বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন নয়া দিগন্তকে বলেন, পুরো হাতিরঝিলজুড়েই ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে। বিকেলে এখানে একটু ঠাণ্ডা বাতাস খেতে আসি। কিন্তু তার উপায় নেই। হাতিরঝিলের পাশে বসা যায় না। এমনকি দুর্গন্ধে বাসায়ও থাকতেও কষ্ট হয়। এ জন্য হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা লোকজন কিছুক্ষণ থেকেই দ্রুত চলে যায়।
হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা তরুণ সোহম খান বলেন, একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য এখানে প্রায়ই আসি। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষা এলেই পানিতে দুর্গন্ধ হয়ে যায়। তখন এখানে বেশিক্ষণ থাকা যায় না।
সীমা দাস নামে এক গৃহবধূ বলেন, সময় পেলেই বাচ্চাদের নিয়ে এখানে আসি। কিন্তু দুর্গন্ধের কারণে বাচ্চাদের অসুবিধা হয়। তারা থাকতে চায় না। এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য টানাটানি করে।
হাতিরঝিলের প্রকল্প পরিচালক (রাজউক) জামাল আক্তার ভূঁইয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, আশপাশের ময়লা পানি চলে আসার কারণে বর্ষাকালে দুর্গন্ধ হচ্ছে। এ জন্য হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার রাখতে সম্প্রতি ‘সেপারেশন অব স্যুয়ার লাইন ফ্রম স্টর্ম ওয়াটার লাইন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্প অনুসারে হাতিরঝিলের বাইরে থেকে আসা পানির জন্য পৃথক লাইন করার কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্প অনুসারে ড্রেনের পানি ও স্যুয়ারেজের পানি আলাদা করা হবে। শুধুমাত্র ড্রেনের পানি হাতিরঝিলে ঢোকার সুযোগ দেয়া হবে। আর স্যুয়ারেজের ময়লা পানি পৃথক লাইন দিয়ে হাতিরঝিলের বাইরে দিয়ে যাবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তখন আর দুর্গন্ধের সমস্যা থাকবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/236918