১৯ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১০:১৫

এক রাজধানী দুই অংশ দুই মেয়র কাহিনী

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

ঢাকা সিটি করপোরেশন এখন দুই ভাগ-ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। উত্তরে আনিসুল হক আর দক্ষিণে সাইদ খোকন নামের একজন তুলনামূলকভাবে অর্থবানকে মেয়র পদে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আনিসুল হক এক বিরাট গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। এফবিসিসিআই-এর সভাপতি ছিলেন। আমরা দেখেছিলাম, এরা ঝাড়– দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করছেন। ড্রেন সাফ করছেন। সেগুলো আবার আওয়ামী টিভি চ্যানেলগুলো বড় মমতার সঙ্গে ফলাও করে প্রচার করেছে। যেন তারা মেয়র হলে সত্যি সত্যি এভাবেই রাস্তা-ড্রেন পরিষ্কার করবেন। তারা বলেছিলেন, ঢাকা মহানগরীকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দেবেন।

কিন্তু এখন শুনছি ভিন্ন কথা। দেখছি ভিন্ন দৃশ্য। ক’দিন আগে ধারাবাহিক বৃষ্টিতে ঢাকা মহানগরের উত্তর দক্ষিণ একেবারে তলিয়ে গিয়েছিল। আমরা আর মেয়রদের খুঁজে পাইনি। তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে নানারকম সারমন দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের ভাষ্য ছিল, এই যে মহানগরী তলিয়ে গেল, কোটি মানুষ কোমর ডুবিয়ে রিকশায় করে পথ পাড়ি দেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করলো, শিশুদের স্কুলে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লো, কর্মজীবীদের কর্মস্থলে পৌঁছনো অসম্ভব হয়ে পড়লো, কিন্তু দুই পাশের দুই মেয়র বলে বসলেন যে, এই পানি নিষ্কাশনের দায়-দায়িত্ব তাদের নয়। তারা পানি সরাতেও পারবেন না। পানি নিষ্কাশনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়লো না।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার দুই মেয়র কী করছেন? ঢাকা ওয়াসাই বা কী করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন যে, এ থেকে মুক্তির জন্য এক ধরনের বিপ্লব প্রয়োজন। ঢাকার খালগুলোর মধ্যে এখন দুইটাও বোধহয় নেই। খাল ভরাট করে সেখানে চার-পাঁচ তলা ভবন করা হয়েছে। পানি যাবে কোথায়? তবে তার দাবি, ‘এ জন্য সিটি করপোরেশন কোনোভাবেই দায়ী নয়। খালের মালিক জেলা প্রশাসন। আর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। তারা ২৫ বছরে এই খাল কী রক্ষণাবেক্ষণ করেছে, তার হিসাব দিক।’ আজব এক হীরক রাজার কবলে পড়েছে উত্তরের নাগরিকরা।
দক্ষিণওয়ালা আরও বড়। যখন পানি নিষ্কাশন দরকার, যখন ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধার দরকার, তখন তিনি নেমেছেন ফুটপাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক লুটপাটের আয়োজনে। ভালো ভালো সব ফুটপাত ভেঙে তার মধ্যে টাইলস বসানোর নামে কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আবার এগুলো করতে গিয়ে রাস্তার কিনারায় ফুটপাতের পুরানা টাইলসের স্তূপ। বালি, সিমেন্ট। সেসব বন্ধ করে দিয়েছে সকল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার মুখ। সেসব মুখ পরিষ্কার করার কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি। তিনিও খালের খবর রাখেন না। খালের আবর্জনা পরিষ্কার করলেই কোথায়ও কোথায়ও পানি নিষ্কাশনের জন্য সেগুলো উন্মুক্ত হতে পারে। আপনারা মার্কেট উচ্ছেদ করতে পারেন, বস্তি ভেঙে দিতে পারেন। কিন্তু খালের আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারেন না কেন? কিংবা উচ্ছেদ করতে পারেন না খালের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ছোট কোনো স্থাপনা। কেন? আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব ওয়াসার দিকে ঠেলে দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ। ইতিমধ্যে এই বৃষ্টির আগ থেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলো সেসব খালের ছবিও প্রকাশ করেছে। তাতে নাগরিকরা দেখতে পেয়েছেন, কত সামান্যে এই খালগুলো পুনরুদ্ধার সম্ভব। হীরক রাজাদের উদ্যোগী হতে দেখিনি।
ইতিমধ্যে রাজধানীজুড়ে দেখা দিয়েছে মহামারী আকারে চিকুনগুনিয়া জ্বর রোগ। প্রতি ১১ জন নগরবাসীর একজন এই রোগে আক্রান্ত। অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক এই রোগ নিয়ে হীরক রাজাদের কোনো ভাবনাই নেই। এইডস মশা এই রোগের কারণ। কিন্তু মশা মারার কোনো উদ্যোগই নেয়নি দুই সিটি করপোরেশন। অথচ মশা মারার ব্যয় তারা দেখিয়েছে ৩৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। কোথায় গেলো এত টাকা? নাগরিকরা টের পেলেন না। ওষুধ ছিটাতে কেউ আসে না। এত বড় ভয়াবহ আকারে এই রোগের বিস্তার ঘটে গেলেও দুই হীরক রাজা একেবারে চুপ। তবে কি মশা মারার ওষুধ খেয়ে তারা বিশাল ঘুম দিয়েছিলেন? হীরক রাজারা বললেন, এটা তাদের দায়িত্ব না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না, সিটি করপোরেশনের কাজ। কার কাজ নাগরিকরা সেটা বুঝতে চান না। চিকুনগুনিয়া জ্বরে তারা আক্রান্ত হতে চান না।
এর মধ্যে চিকুনগুনিয়া জ্বর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন উত্তরের আনিসুল হক। তাতে তিনি নাগরিকদের উদ্দেশে একেবারে বোমা ফাটিয়ে দিলেন। বললেন, ‘আপনাদের ঘরের ভেতরে যেয়ে আমি মশারি খাটাতে পারব না। আপনার ছাদের ওপরের চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ লাগাতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতরে যে সামান্য স্বচ্ছ পানিতে মশা জন্মাচ্ছে, সেটি আমি মারতে পারব না।’ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ তথা চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ডিএনসিসির নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করতে গুলশানে ডিএনসিসির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া আনিসুল হকের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে এই বক্তব্যকে করদাতা নাগরিকদের প্রতি জনপ্রতিনিধির তাচ্ছিল্য ও অবহেলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অনেকে একে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত দুজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আনিসুল হক বলেন, চিকুনগুনিয়া মহামারি হোক আর যা-ই হোক, এ জন্য কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন দায়ী নয়। চিকুনগুনিয়ার প্রধান কারণ ঘরের ভেতরে জন্ম নেয়া মশা। সে পর্যন্ত পৌঁছানো সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়রকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি বলছেন যে নির্মাণাধীন ভবনের চৌবাচ্চার পানিতে এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে। তাহলে ওগুলো মারছেন না কেন?’ জবাবে মেয়র বলেন, ‘মারছি তো। কিন্তু আপনার বাসার একটা মশা যে ২৫ জনকে এফেক্টেড করছে না, তার সার্টিফিকেট কে দেবে?’ মেয়র বলেন, ‘আপনার চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ দিতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতর সামান্য স্বচ্ছ পানিতে যে মশা জন্মাচ্ছে, সেটা আমি মারতে পারব না।’ চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে নাগরিকদের সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের ওপর জোর দেন তিনি। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি দুঃখ ও সমবেদনা জানিয়ে মেয়র তাঁর লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, এ বছর চিকুনগুনিয়া নিয়ে আগাম কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। পূর্বাভাস থাকলে এই রোগ প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হতো। এ সময় সংবাদকর্মীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসেই আইইডিসিআর ৩০ জন চিকুনগুনিয়ার রোগীকে শনাক্ত করেছিল। বিশেষজ্ঞরা তখন বলেছিলেন, এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। তখন কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না? জবাবে মেয়র বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আজই প্রথম শুনলাম।’
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মেয়রের পরিবারের কেউ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কি না? মেয়র ওই সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়েছে?’ জবাবে সাংবাদিক হ্যাঁ বললে মেয়র বলেন, ‘আমি বোধ হয় সেদিক থেকে একটু সৌভাগ্যবান। আমার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়নি।’ সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক একজন পরিচালক ও মহামারি বিশেষজ্ঞ এবং দুজন কীটতত্ত্ববিদ উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই ঢাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকে প্রতি মাসেই আইইডিসিআরে এই রোগ শনাক্ত করতে নমুনা পরীক্ষা চলছে। এ বছরের এপ্রিল থেকেই রাজধানীর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে। ভিড় বাড়তে থাকে সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। চিকুনগুনিয়া যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে এটা মহামারি কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী এটাকে মহামারি বলতে রাজি নন। চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার জন্য স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের ‘ব্যর্থতাকে’ দায়ী করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, চিকুনগুনিয়া মহামারি কি না? জবাবে মহামারি বিশেষজ্ঞ ও আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, চিকুনগুনিয়া যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যে পরিমাণ মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে এটা অবশ্যই মহামারি। কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট এলাকায় হঠাৎ করে কোনো রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হলে তা মহামারি। সেই হিসাবে এটা মহামারি।
বিশেষজ্ঞদের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আনিসুল হক বলেন, মহামারি হোক আর যা-ই হোক, এ জন্য কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন দায়ী নয়। তিনি বলেন, যে এডিস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ছড়ায় তা ড্রেন, ময়লা-আবর্জনা কিংবা জলাশয়ে বংশবিস্তার করে না। এডিস মশা মূলত বাসাবাড়ির ফ্রিজ, এসির ট্রে, ফুলের টব ও ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। এ ছাড়া পড়ে থাকা ভাঙা হাঁড়ি, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার ও বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে ব্যবহৃত চৌবাচ্চা এই মশার বংশবিস্তারের অন্যতম কারণ। এদিকে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে মশা নিধনের পাশাপাশি উপস্থিত বিশেষজ্ঞরাও জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এই ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান আক্রান্ত রোগীকে সব সময় মশারির ভেতর আলাদা করে রাখার পরামর্শ দেন।
নগর ভবনে আর এক মেয়র সাঈদ খোকন আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সাঈদ খোকন বলেন, দক্ষিণ সিটি এলাকায় চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে ছড়িয়েছে, এটা বলা যাবে না। এখানে চিকুনগুনিয়া মহামারির ধারেকাছেও নেই। আগামী তিন-চার সপ্তাহের মধ্যেই এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাঁর দাবি, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও কম। তিনি জানান, ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে এত দিন মশা মারার কার্যক্রম চলছিল। নতুন কর্মসূচিতে সব লোকবল ও যন্ত্রপাতি একত্র করে একেকটি অঞ্চল ধরে অভিযান চালানো হবে। অভিযানে ১৪৮টি ফগার মেশিন ও ২৭১টি হস্তচালিত মেশিন ব্যবহার করা হবে।
চিকুনগুনিয়া নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার তার বক্তব্যের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। আনিসুল হক গতানুগতিক জনপ্রতিনিধিদের মতোই এমন মন্তব্য করেছেন বেশির ভাগ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ার প্রাইম রিজন ঘরের ভেতরে জন্ম নেয়া মশা; সে পর্যন্ত পৌঁছানো সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সম্ভব নয়। আপনার ঘরের ভেতরে গিয়ে আমি মশারি টানাতে পারব না। আপনার চৌবাচ্চায় আমি ওষুধ লাগাতে পারব না। আপনার ঘরের ভেতর সামান্য স্বচ্ছ পানিতে যে মশা জন্মাচ্ছে, সেটা আমি মারতে পারব না।’
সাবরিন সাদিয়া নামে একজন লেখেন, ‘এটা মেয়র হবার আগে মনে ছিল না। তখন তো পারলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘরগুলো ঝাড়ু দিয়ে দেন।’ মো. ওবায়দুল হক সোহেল নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ক্ষমতা পাবার পূর্বে দায়িত্ব বড় মহান, অনেক সহজ; পাস করার পর দায়িত্ব অনেক কঠিন, বিরক্তির! এটা বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের চরিত্র।’
আনিসুল হককে উমর ফারুক (রা:)-এর জীবনী পড়ার পরামর্শ দিয়ে নূর শামিম নামের একজন লিখেছেন, আপনার কাছ থেকে এমন বক্তব্য প্রত্যাশিত নয়। মেয়র সাহেব, আপনি হয়তো ইসলামের খলিফাদের রাজত্ব পড়েননি। হযরত উমর ফারুক (রা:) রাতের অন্ধকারে, তারপরও ছদ্মবেশে তার প্রজাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর রাখতেন। বিশাল ক্ষমতার অধিকারী হয়েও নিজের পিঠে খাদ্যের বোঝা নিয়ে দরিদ্রের ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের জীবনী পড়–ন, তাদেরকে অনুসরণ করুন অনেক ভালো লাগবে ।’
অনেকে আনিসুল হককে উদ্দেশ করে দায়িত্বহীন, ব্যক্তিত্বহীনসহ বিভিন্ন অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করছেন। আবার কেউ কেউ তাকে মনীষীদের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ইকবাল হোসাইন লেখেন, ‘নির্বাচন-এর আগে তো বাড়ি বাড়ি ঝাড়ু নিয়ে ঘুরেছেন। এখন মশারি টানালে সমস্যা কোথায়।’ মোস্তফা কামাল লেখেন, এতদিন ভেবেছিলাম গাওয়া ঘি এখন দেখছি পুরোটাই পামওয়েল।’
মোহাম্মদ জসিম, মিস্টার মেয়র সাহেব, এমন নির্লজ্জ...(অশ্লীল শব্দ) টাইপের কথা বলার আগে ভেবে নেন তো, যেদিন মেয়র হিসেবে সিলেক্টেড হয়েছিলেন, একটি পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে কি বলেছিলেন? গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানুষের ন্যূনতম অধিকার যদি থাকতো রাস্তায় বের হতেই ... (অশ্লীল শব্দ) গণধোলাই কি ঠিকই টের পেতেন!’
নজরুল ইসলাম লেখেন, ‘মেয়র হওয়ার আগে তো বলেছিলেন মেয়র হতে পারলে ঢাকাকে সিংগাপুর বানাবেন। এখন দেখছি কবর ও শ্মশান বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।’ ইমরান হোসাইন লেখেন, ‘নির্বাচনের আগে জনগণকে দেয়া কথা ৬ মাসের মধ্যেই ভুলে গেলেন। বলেছিলেন ঢাকাকে সিংগাপুর বানিয়ে ফেলবেন, এখন এরকম কথা কেন?’ নূরু আলম লেখেন, ‘নির্বাচনের আগে তো মিষ্টি কথার ফুলঝুড়ি ছড়িয়েছিলেন কোকিলের মতো, এখন এত কর্কষ কেন? কাকের মতো!!’
মাহমুদুর রহমান লেখেন, ‘কোনো কাজ না পারলে করবেন না, চুপ থাকেন। তাতে মানুষ মাফ করবে। কিন্তু এসব কথা বললে পরের বার ঝাঁটা মারবে।’ আব্দুল হামিদ লেখেন, ‘উপদেশ সবাই দিতে পারে মাননীয় মেয়র, কিন্তু বাস্তবে কাজ করা কঠিন। তাই নির্বাচন এর সময় কথা চিন্তা-ভাবনা করে দিবেন, মানুষ কিন্তু এখন অনেক সচেতন।’
এমডি শহিদুল ইসলাম লেখেন, আপনাকে তো কেউ বলেনি, প্রত্যেকের সোবার ঘরে যেয়ে মশারি টানাতে। ফালতু লোক, মশা নিধনের ওষুধটা ঠিক মতো প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটা দেখুন। ওষুধ প্রয়োগ হচ্ছে নাকি ওষুধ এর নামে শুধু পানি স্প্রে হচ্ছে। চিকুনগুনিয়া কি জিনিস একবার হলে বুঝতে পারতেন। উত্তেজনামূলক কথা বলে মানুষকে উত্তেজিত করবেন না। নির্বাচনে আসার সময় নাকে খত দিয়ে আসবেন।’
পসি মনি লাল লেখেন, ‘চিকুনগুনিয়া ধরে নাই তাই এটা সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই, এখনও সময় আছে ধরলে হাড়ে হাড়ে টের পাবেন কি করতে হবে।’ স্বাধীন বিশ্বাস লেখেন, ‘ঘরে গিয়ে মশারি টানাতে হবে না জনাব, আগে নিজের দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করুন। ঠিকভাবে স্প্রে করুন, পানি না মিশিয়ে।’ আশরাফুল ইসলাম লেখেন, ‘ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট ভিক্ষা ঠিকই করতে পারেন। আর ঘরে ঘরে গিয়ে মশারি টানাতে আপনাকে কে বলেছে। মশা নিধনের ঔষুধটা ঠিক মতো দেন তাতেই চলবে।’
মোহাম্মদ হাবিবুল্লা লেখেন, ‘মশারি নয় শুধু, টয়লেটও পরিষ্কার করতে হবে। না পারলে সরে দাঁড়ান, যে পারবে জনগণ তাকেই চেয়ারে বসাবে।’ আব্দুল হক লেখেন, ‘মেয়র বলেছেন পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহর সিংগাপুর বানাবেন। এখন দেখি বাকশালী কায়দায় কথা বলছেন।’ এমডি রবি লেখেন, ‘মেয়র সাহেব ভোটের সময় মানুষের ঘরে ঘরে কেমনে যান? তখন আপনাদের একথাগুলো মনে থাকে না। ভোটটা চাইতে পারবেন, সেবা দিতে পারবেন না এটা তো হতে পারে না।’
সাইদুর আহমেদ লেখেন, আপনাকে তো কেউ মশারি টাঙাতে বলেনি। আপনাদের যেটা দায়িত্ব সেটাই করবেন আপনারা। দায়িত্ব অবহেলার কারণে জনগণের ক্ষতি হবে এর দায়ভার আপনাদের অবশ্যই নিতে হবে।’ তৌফিক হোসাইন লেখেন, ‘নির্বাচন এর আগে টিভিতে ঝাড়ু হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন। ওটা কি ছিল লোক দেখানো?’ রাবেয়া আক্তার লেখেন, ‘কারও ঘরে গিয়ে মশারি টাঙিয়ে দিতে না পারলেও ঢাকা মহানগরী পরিষ্কার রাখা সম্ভব।’
লাল আরফাত লেখেন, ‘কারণটা হল আপনি কারো ঘরের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত নন তাই।’ মাকসুদ আলম লেখেন, ‘নির্বাচনের সময়তো দেখছি রাস্তা ঝাড়ু দিতে। এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে নেই।’ দিদার হোসাইন লেখেন, ‘রাস্তাকে তো নদী করে দিতে পারছেন।’ সাইয়েদ মোহাম্মদ লেখেন, ‘দুর্নীতিবাজ মেয়র হলে যা হয় আর কি..।’ আশিক মাহমুদ লেখেন, ‘সিংগাপুর হতে আর কত বছর লাগবে স্যার?’ মোহাম্মদ আল আমিন লেখেন, ‘আগে ছিল কোকিল আর এখন কাক।’ আজীজ ভুইয়া লেখেন, ‘বিনা ভোটে পাস ঢাকাবাসীর সর্বনাশ।’
এরপর আমার আর কোনো মন্তব্য নেই।

 

http://www.dailysangram.com/post/292345