কয়েকদিনের টানা বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ছবিটি নাজিমউদ্দীন রোড থেকে তোলা
১২ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১২:৪৫

বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা

গতকাল দিনভর বৃষ্টিতে রাজধানীর মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই গেছে জমে পানি। অনেক সড়ক থেকে বৃষ্টির পানি ৫-৭ ঘণ্টা পরও সরেনি। এ কারণে সৃষ্টি হয় যানজট। ফলে বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও যানজটে নাকাল হতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। শুধু গতকালই নয়, বর্ষা মওসুম হোক আর অন্য সময়ই হোক ভারী বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন বা ঢাকা ওয়াসার কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল দুপুরের বৃষ্টির পরই রাজধানীর মতিঝিল, নয়াপল্টন, গুলিস্তান, নাজিমউদ্দিন রোড, আরামবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মালিবাগ, কাকরাইল, কাওরানাবাজার, মিরপুর-১০, বেগম রোকেয়া সরণি, কালশী, মহাখালী, তেজগাঁও, খিলগাঁও, রামপুরা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, উত্তরা বিমানবন্দর মোড়, আশকোনা হাজীক্যাম্প রোডসহ আশাপাশ এলাকা তলিয়ে গেছে। রাস্তা ও ফুটপাথের ওপর দিয়ে ড্রেনের ময়লা ও বৃষ্টির পানি থৈ থৈ করছে। বৃষ্টির পানি লোকজনের বাসাবাড়ি, দোকানপাট এবং অফিস চত্বরে ঢুকে পড়েছে।

এলাকাবাসী জানান, বৃষ্টির ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পরও পানি নামছে না। বৃষ্টিতে আটকে পড়া লোকজন ময়লা পানির মধ্যেই জামা-কাপড় ভিজিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। স্কুল-কলেজের শিার্থী, অফিস-আদালতের লোকজনসহ লাখ লাখ নগরবাসী এভাবে চমর দুর্ভোগে পড়েন। জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন অতিমাত্রায় খোঁড়াখুঁড়ি, খানাখন্দে ভরা রাস্তা ও ফুটপাথের অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, গলিপথের রাস্তাও ময়লা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। সহজে বোঝার উপায় নেই- কোথায় গর্ত আর কোথায় গর্ত নেই। পুরো রাস্তা, গলিপথ ও ফুটপাথ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির মধ্যে দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক গাড়ি বিকল হয়ে যায়। এ ছাড়া পানির মধ্য দিয়ে ধীরগতিতে চলতে গিয়ে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের।
জানা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রতি বছর রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিপুল অর্থ খরচ করছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। রাজধানীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ওয়াসা ড্রেনেজ বিভাগের মাধ্যমে দুই যুগে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সংস্কার ও উন্নয়নকাজ করেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিগত পাঁচ বছরেই পানি নিষ্কাশনকার্যক্রম চালাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। এর বাইরেও এ সময়ে ড্রেনেজ উন্নয়নের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। তারপরও রাজধানীর ২৬টি খাল, তিন হাজার কিলোমিটার ড্রেন ও জলাশয়গুলো ভরাট থাকছে আবর্জনায়। বেদখল হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই সড়কে-গলিতে জমছে হাঁটু থেকে কোমর পানি।

এবারের বর্ষায় রাজধানীর জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়ে ঢাকার দুই মেয়র ও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তৃতা করেছেন। খাল দখলমুক্ত অভিযানও চালাতে দেখা গেছে। কিন্তু কার্যত টেকসই নিরসন হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল কারণ দীর্ঘমেয়াদি ও সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়াই এসব কাজ করা হয়েছে। খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযানসহ অন্যান্য কার্যক্রম কার্যত লোকদেখানো কাজে পরিণত হয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা প্রতি বছর কযেক শ’ কোটি টাকা খরচ করে এসব আবর্জনা পরিষ্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়ন করলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না রাজধানীবাসীর।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতা, অপরিকল্পিত, অদূরদর্শী কার্যক্রম এবং নগরবাসীর অসচেতনতার কারণে এত খরচের সুফল মিলছে না। জনসচেতনতার ঘাটতি বড় সমস্যা হলেও এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম নেই।


সম্প্রতি বাজেট বক্তৃতাকালে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, রাজধানীর ২৬ টি খাল কোনোভাবেই উদ্ধার করা সম্ভব নয়। কারণ খালগুলো ভরাট করে বাসাবাড়ি করে ফেলা হয়েছে। তা ছাড়া এ খাল উদ্ধারে সিটি করপোরেশনের করণীয় কিছু নেই। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ড্রেন নির্মাণ, পরিষ্কার এবং সাকার মেশিন দিয়ে ড্রেনের কঠিন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে।

ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। কিন্তু তারা সঠিকভাবে না করায় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এ বছর শান্তিনগর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষের পথে। এ কাজ শেষ হলে ওই এলাকাসহ আশপাশের জলাবদ্ধতাও কমে যাবে। এ ছাড়া নাজিম উদ্দিন রোডের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি প্রকল্প গ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী বছর এর সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এ বছর নতুন করে মতিঝিল, গুলিস্তানসহ কয়েকটি জায়গায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এগুলোও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পর্যায়ক্রমে এসব স্থানের জলাবদ্ধতা নিরসনেও উদ্যোগ নেয়া হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/235011