১২ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১২:৪১

ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের বৈঠক আজ

আগামী নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইবে ইইউ

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদর দপ্তর ব্রাসেলসে বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের আজকের বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বে ঢাকা। নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন ও তার ভূমিকা নিয়ে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি শক্তি প্রয়োগ করে তুলে নেওয়ার পর গুম ও বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানাবে ইইউ। এ ছাড়া ইউরোপ থেকে বাংলাদেশি শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মেদ শাহাদাত হোসেন ই-মেইল বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, যৌথ কমিশনের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে যদিও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়টি নেই, তা সত্ত্বেও বৈঠকে ইইউর পক্ষ থেকে প্রসঙ্গটি তোলা হতে পারে। ইপিজেড আইন পাস করে সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন চালু, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, ইউরোপে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনা ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে আজকের বৈঠকে।

গত ২১ জুন ইউরোপীয় কমিশনের মহাপরিচালক (বাণিজ্য) সিন্ড্রা গিলানির সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এসব তথ্য জানিয়েছেন ব্রাসেলসে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।
ঢাকায় গত মে মাসে সাসটেইনেবলিটি কমপ্যাক্টের বৈঠকে বাংলাদেশ ইপিজেডসহ সব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর অঙ্গীকার করেছে। পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী কার্যক্রম বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইইউতে জিএসপি স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা দূর হয়। রাষ্ট্রদূত সরকারকে জানিয়েছেন, গত ৩১ মে ইউরোপীয় কমিশনের মহাপরিচালক (বাণিজ্য) সিন্ড্রা গিলানি তাঁকে একটি চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের শ্রম ইস্যুতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে—সরকার ইপিজেড শ্রম আইন নামে যে খসড়া তৈরি করেছে, তা আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে বিশ্ব শ্রম সংস্থাকে (আইএলও) দিতে হবে। সব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালুর জন্য বিদ্যমান শ্রম আইনের খসড়াও আগস্টের মধ্যে তৈরি করতে হবে। ‘আনফেয়ার লেবার প্র্যাকটিস’ বা অন্যায্য শ্রমচর্চা বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের স্বার্থে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করতে হবে। শ্রমিক অধিকার রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো ধরনের ঝামেলা ও আপত্তি ছাড়াই ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন দিতে হবে।

সিন্ড্রা গিলানি রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে আইএলওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে ইইউ পার্লামেন্ট আইএলওর অবস্থানকে জোরালোভাবে সমর্থন দিয়েছে। জবাবে রাষ্ট্রদূত গিলানিকে বলেছেন, আইএলওর জেনেভা সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন আইনমন্ত্রী নিজেই। এতেই প্রমাণিত হয় শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ যথেষ্ট আন্তরিক।

রাষ্ট্রদূতের পাঠানো ই-বার্তায় বলা হয়েছে, যৌথ কমিশনের বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো অভিবাসন ও শ্রম ইস্যু। ইউরোপে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। ঢাকায় সফরকালে ইইউ প্রতিনিধিদল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। গ্রিসের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সফরের ফল সম্পর্কে জানতে চাইবে। ইতালিও এ ব্যাপারে কথা বলতে আগ্রহী। ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইইউর মধ্যে লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কেও জানতে চাইবে ইইউ। ইউরোপে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য একটি তহবিল গঠন করতে বলেছিল ইইউ। এর অগ্রগতিও জানতে চাইবে তারা।

জেনেভায় অনুষ্ঠিত আইএলওর সম্মেলনে শ্রম ইস্যুতে বাংলাদেশের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রশ্ন করবে ইইউ। একই সঙ্গে সময় ধরে দিয়ে যে কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন করা হবে।
বৈঠকে মিয়ানমার থেকে শরনার্থী হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। রোহিঙ্গারা যেহেতু স্বল্প সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারবে না, তাই তাদের নিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইবে ইইউ। একই সঙ্গে ঠেঙ্গারচর বসবাসের জন্য উপযুক্ত এবং টেকসই নয় উল্লেখ করে ইইউর পক্ষ থেকে নিরাপদ কোনো স্থানে তাদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ইইউর সহায়তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের বিমানবন্দর ও বিমানে নিরাপত্তা বিষয়ে ইইউ বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে।
বাংলাদেশে জাতীয় নারী নীতি বাস্তবায়ন বিষয়ে ইইউর আগ্রহ রয়েছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কেও জানতে চাইবে ইইউ।

যৌথ কমিশনের দুই দিনের সভা গতকাল মঙ্গলবার ব্রাসেলসে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল এতে যোগ দিতে ব্রাসেলসে গেছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/07/12/518199