১২ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১১:২২

চালের পর্যাপ্ত মজুদের বিকল্প নেই

গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে চালের মজুদ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে হাওরে ফসল নষ্ট হওয়া ছাড়াও অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিও থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, দেশে খাদ্যের অভাব নেই। তবে কিছুদিন ধরে চালের দাম বাড়ছে। চালের মজুদ যে খুব কম তা নয়। সরকারের অনুমোদিত মিলগুলোতে মজুদের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন। সরকারি গুদামে মজুদ আছে ১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। আর অননুমোদিত মিল, কৃষক পর্যায়ে, আড়তদার ও খুচরা বাজারে মজুদের পরিমাণ ৫০ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৬ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ১ কোটি ৬ লাখ ৫৮ হাজার ১২১ মেট্রিক টন খাদ্য (আসলে চাল) দেশে মজুদ আছে (প্রথম আলো, ২৯ জুন)।

চালের মজুদ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া তথ্য একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এক. সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) সরকারের চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের উৎপাদনের তুলনায় ১ লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট উৎপাদিত চালের মধ্যে প্রধান চাল উৎপাদনকারী ফসল বোরোর (দেশে মোট উৎপাদিত চালের ৫৬ শতাংশ আসে বোরো থেকে) অংশ ছিল ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩৮ হাজার মে. টন। প্রধানমন্ত্রী যে সময় জাতীয় সংসদে তথ্য উপস্থাপন করেন, তার মাত্র কয়েকদিন আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বোরো ধান কাটা-মাড়ার মৌসুম শেষ হয়। গত অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ কোটি ৯১ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সিলেট হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার কারণে ১৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন কম হলেও বোরোর উৎপাদন ১ কোটি ৭৬ লাখ মে. টনে দাঁড়ানোর কথা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রদানের তারিখে দেশে মোট চালের পরিমাণ সরকারি গুদাম, অনুমোদিত ও অননুমোদিত চালকল, কৃষক, আড়তদার, খুচরা বাজারে মজুদ- সব মিলে ১ কোটি ৬ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়ালে কেবল মৌসুমের বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৫ লাখ মেট্রিক টন কম হয়। আর হাওর অঞ্চলের ক্ষতি ১৫ লাখ মেট্রিক টন বাদ দিলে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০ লাখ মেট্রিক টন। এর থেকে কি ধরে নেয়া যায় না যে, সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে বোরোর উৎপাদন কম-বেশি ১ কোটি ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে নেমে এসেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কম। দুই. সাম্প্রতিক বছগুলোয় আমাদের চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে সক্ষম হচ্ছে কী? চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে কম হলে এবং বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে সে ঘাটতি পূরণ করা না হলে চালের দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক নয় কী? তিন. প্রধানমন্ত্রী চালের দাম বৃদ্ধিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘কারসাজি’ রয়েছে বল মনে করছেন। যদি তাই হয়, সরকার যথাসময়ে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি নস্যাৎ করে দিল না কেন? তাহলে, সাধারণ জনগণকে এযাবৎকালে চালের সর্বোচ্চ মূল্য ৪৮-৫২ টাকায় এক কেজি মোটা চাল কিনতে হতো না।

প্রধানমন্ত্রী চালের দাম বাড়ার জন্য মূলত হাওরে ফসল নষ্ট হওয়াকে দায়ী করছেন। তাছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিকেও সন্দেহের মধ্যে রেখেছেন। এসব ফ্যাক্টর অবশ্যই কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। যেমন সিলেটে হাওর এলাকায় বোরো ধানের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য সরকার এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। তবে ধারণা করা যায়, বোরোর ক্ষতি ১৫ লাখ টনের বেশি হবে না। হাওরে অকাল বন্যায় কমবেশি ১৫ লাখ টন চাল নষ্ট হওয়ায় ধানের সবচেয়ে বড় ফসল বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দামের এ রকম ঊর্ধ্বগতি ও রেকর্ড সৃষ্টি একজন সাবেক খাদ্যসচিব হিসেবে আমার বিশ্বাস করতে কষ্টই হচ্ছিল।

তাই চালের দাম বৃদ্ধির মূল কারণগুলো অন্যত্র খুঁজতে হবে। এক. বাংলাদেশ সার্বিক খাদ্যে (সার্বিক খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত প্রধান উপাদানগুলো হল চাল, গম, শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ ও ফলমূল) কোনোদিন স্বনির্ভরতা অর্জনের কাছাকাছি যেতে পারেনি। সাম্প্রতিককালে আমরা আমাদের প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে অনেকটা এগিয়ে যাই, যদিও খাদ্য হিসেবে সংজ্ঞাভুক্ত এমন প্রায় সব পণ্যের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেক কম। বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে আমাদের এসব পণ্যের চাহিদা মেটাতে হয়। খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বনির্ভর হয়েছি এবং শিগগিরই চাল রফতানিকারক দেশগুলোর কাতারে শামিল হব- শাসক দলের নেতাদের এমন আত্মতৃপ্তি ও প্রচারণা বর্তমান সংকট সৃষ্টির জন্য কিছুটা দায়ী। দুই. চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের মধ্যে ফাঁক রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি খাতের শস্য উপখাতে, বিশেষ করে চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার হতাশাব্যঞ্জক। গত কয়েক বছরের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১১-১২ থেকে ২০১৫-১৬ সময়কালে দেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক শূন্য থেকে ১ দশমিকের সামান্য ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে ২০১২-১৩ এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক। এর অর্থ দাঁড়ায়, এ সময়কালে আমাদের চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের (১ দশমিক ৩৭ শতাংশ) চেয়ে কম। একাধিক কারণে এটা হচ্ছে। প্রথমত, চাল উৎপাদনে শীর্ষস্থানে থাকা বোরোর উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমতে কমতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা মোটেই বৃদ্ধি না পেয়ে ঋণাত্মক হয়ে আসে। বোরো চালের উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য প্রধান কারণটি হল, শস্যভাণ্ডারখ্যাত দেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া। ভারত নানা অজুহাতে শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়ায় ওই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের সমূহ আশঙ্কা দেখা দেয়ায় সরকার বাধ্য হয়ে উত্তরাঞ্চলে সেচনির্ভর বোরোর আবাদ সংকুচিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বোরো উৎপাদনেও এর প্রভাব লক্ষ করা যাবে বলে বিশ্বাস। তিন. গত অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাল আমদানি প্রায় বন্ধ থাকে। গত কয়েক বছরের সরকারি তথ্যে দেখা যায়, সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করার ফলে চালের দাম স্থিতিশীল থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০-১১ অর্থবছরে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন (সরকারি খাতে ১২ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন এবং বেসরকারি খাতে ২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন), ২০১১-১২ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন (সরকারি খাতে ৪ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বেসরকারি খাতে ০.৫৯ লাখ মেট্রিক টন)। ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চাল আমদানি ন্যূনতম পর্যায়ে চলে এলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চাল আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার টনে। ২০১৫ সালে চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চালের আমদানি দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৭ হাজার টনে (সরকারি খাতে ১ হাজার ২৮ টন এবং বেসরকারি খাতে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬ টন)। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (২০১৬-২০১৭) চাল আমদানির ওপর শুল্কের হার ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করায় বেসরকারি খাতে চাল আমদানি ভীষণভাবে কমে যায়। বেসরকারি খাতে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টনে। এ বছর সরকারি খাতে চাল আমদানি করা হয়নি। চার. গত জুন মাসে সরকারের গুদামে চাল মজুদের পরিমাণ ২ লাখ টনের নিচে নেমে আসে। সরকারি গুদামে চালের মজুদ এমন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায় চালকল মালিকরা বুঝতে পারেন যে, সরকার সহসা ওএমএসসহ অন্য ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে চালু করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এ পরিস্থিতি চালকল মালিকদের খেয়াল-খুশি মতো চালের দাম বাড়াতে উৎসাহ জোগায়। প্রধানমন্ত্রী বোরোর ভরা মৌসুমে চালের অস্বাভাবিক দামের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। তবে পত্রপত্রিকায় যে অভিযোগটি উঠেছে তা হল, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির নেপথ্যে রয়েছেন সরকারি দলের লোকজন। এদের জন্য সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। পুরো বিষয়টির একটি তদন্ত হওয়া উচিত।

বর্তমানে আর যে বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হল, বন্যার পদধ্বনি। ৯ জুলাই যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ ৬ জেলার নিন্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে ১১ জুলাই প্রথম আলোর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির কারণে ১০ জুলাই উত্তরাঞ্চলে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কয়েক দফা বৃষ্টিতে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতির আশংকা করা হচ্ছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের উত্তরাঞ্চলে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির কারণে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে তাতে দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে। তখন সারা দেশ বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে, যা আমনের উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। চাল উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আমন বন্যা-ঘূর্ণিঝড়প্রবণ ফসল। আমাদের মনে রাখতে হবে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের কথা, যখন পরপর দুটি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আমনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের অভাব ও উচ্চমূল্যের কারণে চাল রফতানিকারক বেশির ভাগ দেশ চাল রফতানি নিষিদ্ধ করে। ফলে বাংলাদেশ সরকার নগদ অর্থে চাল ক্রয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল।

এদিকে পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চাল ও গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এটিকে আরেকটি অশনিসংকেত হিসেবে দেখতে হবে।

সবশেষে যা বলতে চাই তা হল, সরকারি গুদামে চালের মজুদ স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রাখতে হবে। সরকার অবশ্য ইতিমধ্যে একাধিক দেশ থেকে সরকারি পর্যায়ে চাল ক্রয়ের ব্যবস্থাদি সম্পন্ন করে ফেলেছে। বিশ্বে চালের দাম বাড়ার আগে এ ধরনের আরও চুক্তি সম্পাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যদিকে আমদানি শুল্ক হার কমিয়ে আনার সুযোগ নিতে বেসরকারি আমদানিকারকদের বলতে হবে। অবশ্য গত কয়েক দিনে বেসরকারি খাতে ১ লাখ মেট্রিক টনের সামান্য বেশি চাল আমদানি হওয়ায় বাজারে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি থেমে গেছে এবং অনেক স্থানে কেজিপ্রতি ১-২ টাকা দাম কমে গেছে। মোট কথা, যে কোনো মূল্যে সরকারি গুদামে প্রধান খাদ্য চালের মজুদ স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রাখতে হবে এবং বাজারে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক

latifm43@gmail.com

http://www.jugantor.com/window/2017/07/12/138948