১১ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:১৪

দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে বন্যা

দেশের উত্তরাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল ও ভারতের আসাম, বিহার এবং সিকিমে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে আগাম বন্যা। সাধারণত মধ্য এপ্রিল থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত বন্যা শুরুর মৌসুম হলেও মাসের শুরুতে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সারা দেশের ৮টি জেলা। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও কক্সবাজার জেলার মধ্যে কোনো জেলার পুরোপুরি আবার কোন জেলার আংশিক বন্যাকবলিত হয়েছে। অন্যদিকে ভারত ও বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ইতিমধ্যে তিস্তা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের পানি নেমে আগামী ২ দিনের মধ্যে ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও মানিকগঞ্জ এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ভারতের আসাম, বিহার ও সিকিমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এটি আরও ৪/৫ দিন অব্যাহত থাকবে। এসব অঞ্চলের পানি কুশিয়ারা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে নেমে যায়। এবারও সেটা হওয়ায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিহার ও সিকিমের বৃষ্টির পানি গ্যানগেজ-ফারাক্কা হয়ে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী দিয়ে নেমে সংশ্লিষ্ট এলাকা প্লাবিত করবে। এসব নদীর পানি আরো ১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-বাপাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, উত্তরাঞ্চলের ১২টা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর মধ্যে শুধু যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ স্টেশনে পানি হ্রাস-বৃদ্ধির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। নিম্নমুখী হচ্ছে একই নদীর সারিয়াকান্দি স্টেশনে। এ ছাড়া সবগুলো স্টেশনের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ‘বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা’র রিপোর্টে বলা হয়, রোববার সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ১৪৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ডালিয়া স্টেশনে ১৩২ মিলিমিটার, নোয়াখালীতে ৯৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার ও টেকনাফে ৪৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৫ টি নদ-নদীতে। হ্রাস পেয়েছে ২৫টি নদ-নদীতে। বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১২টি স্টেশনে। অপরিবর্তিত রয়েছে মাত্র ৩টি স্টেশনে।

এদিকে গত কয়েকদিনে উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রোববার ও সোমবারে জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ২৫টি চর ও গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ উপজেলার নদী বেষ্টিত চর ও গ্রামগুলোও প্লাবিত হয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু অঞ্চলের বসতভিটায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। গাইবান্ধায় নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ। বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি বেড়ে রাস্তা-ঘাট, বাড়ির আঙিনা, স্কুলমাঠ প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=73515