১১ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:১৩

সুন্দরবন নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বুধবার

বিয়েট্রিকা কালডুনবিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব বিশ্ব ঐতিহ্য রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণের অবস্থা জানতেই বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভা বসে। কোনো দেশের সম্পদ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত হলে তা ইউনেসকোর শর্ত ও নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হয়। ওই ঐতিহ্যগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে কি না, তা বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় পর্যালোচনা করা হয়। এই সভার সিদ্ধান্তগুলো শেষ দিনে গিয়ে চূড়ান্ত হয়।

জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি ও প্রধান বিয়েট্রিকা কালডুন এসব কথা বলেছেন। গতকাল সোমবার সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কাজের ধরন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, পোল্যান্ডের ক্র্যাকো শহরে ২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভা এখনো চলছে। আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাতে এটি শেষ হবে। তারপরই সুন্দরবন নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
বিয়েট্রিকা কালডুন বলেন, গত বছরের মার্চে ইউনেসকোর রিয়েকটিভ মনিটরিং মিশন নামের একটি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। তারা সুন্দরবনের অবস্থা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি প্রতিবেদন বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কাছে জমা দিয়েছে। সম্মেলন শুরুর আগে মে মাসে সুন্দরবনের ব্যাপারে একটি খসড়া সিদ্ধান্ত তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সুন্দরবন সংরক্ষণ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তা বাড়িয়ে ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ২১ সদস্যের মধ্যে অনেকে ওই সিদ্ধান্তের কিছু কিছু বিষয়ে সংশোধন চেয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সুন্দরবন নিয়ে কমিটি কী সিদ্ধান্ত নিল, তা বুধবার চূড়ান্ত হবে।
উল্লেখ্য, গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যাপারে আপত্তি তুলে নিয়েছে ইউনেসকো। কমিটির ২১ সদস্যের মধ্যে ১২ জন সদস্য রামপাল প্রকল্পের ব্যাপারে তাদের আপত্তি তুলে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। ইউনেসকো বাংলাদেশকে ২০১৮ সালের মধ্যে একটি কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) করতে বলেছে। এই সময়ের মধ্যে রামপাল প্রকল্পের কাজ চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কোনো আপত্তি নেই বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী কমিটির সভায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগে। কমিটির সভায় যে খসড়া সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হয়, তা বদলাতে হলে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সিদ্ধান্ত বদলাতেও এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। তবে কমিটির সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান ও সমীক্ষাভিত্তিক হতে হবে।
বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিয়েট্রিকা কালডুন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর তা কীভাবে রক্ষা করতে হবে এবং কী কী শর্ত পালন করতে হবে, সে বিষয়ে একটি পরিচালন নীতিমালাও (অপারেশনাল গাইডলাইন) আছে। বাংলাদেশ তা মেনে চলবে বলে সম্মতি দিয়েছে। এটাই ইউনেসকোর নিয়ম।
বিয়েট্রিকা কালডুন আরও বলেন, ‘রামপাল ছাড়াও সুন্দরবনের জন্য আরও অনেক হুমকির কথা বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় উঠেছে। কমিটি থেকে সুন্দরবন ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য একটি কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ তা করতে সম্মত হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগ নেওয়া এবং পশুর নদ খননের আগে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করার বিষয়ে সুপারিশ উঠেছে। তবে এটা বলতে পারি, বাংলাদেশ সুন্দরবন সংরক্ষণ ও বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষায় এখন অনেক বেশি সক্রিয়।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1246361