বাঁ থেকে : খানাখন্দকে ভরা রামপুরার হাজীপাড়া সড়ক; তেজগাঁও রোডে কার্পেট উঠে বেহাল অবস্থা
১১ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:০৯

রাজধানীর রাস্তার এ কী হাল!

সিটি করপোরেশন নির্বিকার

ভেঙেচুরে গেছে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়ক। কোথাও বড় বড় গর্ত, আবার কোথাও পানি জমে রয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে স্বাভাবিক চলাচলের উপায় নেই। ভাঙা সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অথচ সড়ক মেরামতে সিটি করপোরেশনগুলোর কার্যকর কোনো উদ্যাগ দেখা যাচ্ছে না।
এ বছর আষাঢ়ের আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আর বর্ষা মওসুম আসতেই শুরু হয় টানা বৃষ্টিপাত। এতে নগরীর সড়কে পানি জমে যায়। এ পানি এখনো বিভিন্ন সড়কে জমে রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বেশ কিছু সড়কে তৈরি হয়েছে গর্ত। অনেক সড়ক এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। কোনো কোনো সড়কে গাড়ি এমনকি পথচারীদের চলাচলও মুশকিল হয়ে গেছে।

মতিঝিল থেকে কমলাপুরগামী টয়েনবি সার্কুলার রোডের চৌরাস্তার মোড়ে রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও ফাইওভারগামী বিশ্বরোডে দীর্ঘ দিন থেকেই অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। পিচ উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। খিলগাঁও ফাইওভার থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত সড়কেও অসংখ্য বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খিলগাঁও ফাইওভার থেকে বাসাবো হয়ে নন্দীপড়া পর্যন্ত সড়কটি চলাচলের প্রায় অনুপোযুক্ত হয়ে গেছে। অসংখ্য ছোট বড় গর্ত পেরিয়ে চলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বৃষ্টি হলে এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। বাসাবো ওয়াসা রোডের অবস্থাও শোচনীয়। বিভিন্ন স্থানে পানি জমে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক স্থানে রাস্তা দেবে গর্ত তৈরি হয়েছে। উত্তর গোড়ান, সিপাহিবাগসহ আশপাশের এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। কোথাও রাস্তায় বড় গর্ত আবার কোথাও পানি জমে রয়েছে। বৃষ্টি হলেই গুলিস্তান থেকে বঙ্গভবনগামী সড়কে হানিফ ফাইওভারের নিচের রাস্তায় হাঁটু পানি জমে যায়। এ কারণে ওই সড়কটিও ভেঙেচুরে গেছে।

মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের দু’টি লেনই দীর্ঘ দিন থেকে ভেঙেচুরে আছে। হাজীপাড়া সিএনজি পাম্পের সামনে মূল সড়কে বড় গর্ত তৈরি হয়ে পানি জমে রয়েছে। এ অংশ পার হতে রিকশা, সিএনজি দুর্ঘটনায় পড়ছে। রাস্তার সামান্য অংশ পানির উপরে থাকায় এ অংশ দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
রামপুরা ব্রিজ থেকে ডেমরাগামী সড়কের মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত অংশ ভেঙেচুরে গেছে। মালবাহী ভারী গাড়ি চলার কারণে সড়কের সিটি করপোরেশন অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে যাচ্ছে। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছে। আসাদগেট থেকে গাবতলীগামী সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে অসংখ্য ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কল্যাণপুর, টেকনিকাল মোড়, মাজার রোড এবং গাবতলি পর্বত এলাকায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত সড়ক, প্রতিদিন কয়েক লাখ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল করে। এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ ছাড়া প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সাত রাস্তা ফাইওভার থেকে মহাখালীগামী সড়কেও একই অবস্থা। সড়কটিতে অসংখ্য বড় বড় গর্ত তৈরি হয়ে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। মিরপুরে মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তার দ্ইু পাশে বড় নালা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে ওই সড়কে দিনরাত যানজট লেগেই থাকে।
রাজধানীর সড়কগুলো এভাবে ভেঙেচুরে গেলেও মেরামতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না দুই সিটি করপোরেশনের। তবে রাস্তা ঠিক করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো: আসাদুজ্জামান। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, বৃষ্টিতে কয়েকটি রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে। এ কারণে রাস্তার কোথাও কোথাও গর্ত তৈরি হয়েছে। এগুলো সাময়িকভাবে মেরামত করা হচ্ছে। বর্ষা মওসুম শেষ হলে পুরোদমে রাস্তার উন্নয়ন করা হবে। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কুদরত উল্লাহ। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, বর্তমানে বৃষ্টির মওসুম চলছে। এ কারণে স্থায়ীভাবে মেরামত করা যাচ্ছে না। যেসব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো সাময়িকভাবে ইটের খোয়া দিয়ে ভর্তি করে দেয়া হচ্ছে। বর্ষাকাল শেষ হলে স্থায়ীভাবে সড়ক মেরামত করা হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/234771