১০ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ৬:০২

পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও তলানিতে

দেশের মোট রপ্তানি আয়ের মতো তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিও তলানিতে ঠেকেছে, যা গত দেড় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৮১৫ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধির হিসাবে মাত্র ০.২০ শতাংশ। এর আগে মাত্র একবার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সেটা ছিল ২০০১-০২ অর্থবছর। এ সময় ৪৫৮ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৬৮ শতাংশ। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কম হলেও সামগ্রিকভাবে সদ্য শেষ হওয়া (২০১৬-১৭) অর্থবছরে দেশ থেকে ৩ হাজার ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অথচ এ অর্থবছরের জন্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬.০৩ শতাংশ বা ২০০ কোটি ১৫ লাখ ডলার কম রপ্তানি হয়েছে। আর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছর দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৬৮ শতাংশ। পোশাক খাতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সার্বিকভাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের মন্দায় পোশাকের মূল্য কমে যাওয়ায় এ বছর রপ্তানি অর্ডার কম থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ ছাড়া ইউরোর দরপতনও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার পেছনে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া পণ্যের গড় মূল্য হ্রাস, পোশাক কারখানাগুলোতে চলমান অবকাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম, অর্থনৈতিক মন্দাভাব, আমদানিকারক দেশগুলোতে চাহিদার কমতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন তারা। ইপিবি তথ্য অনুসারে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৮১৫ কোটি ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় মাত্র ০.২০ শতাংশ বেশি। এটি ৩ হাজার ৩৮ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.৩৪ শতাংশ কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছিল ২ হাজার ৮০৯ কোটি ডলার।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গেল অর্থবছরের রপ্তানিতেও সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে নিটওয়্যার ও ওভেন খাত। পোশাক খাতের রপ্তানিতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৭.৩৪ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে। এ খাতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৮১৫ কোটি ডলার। ওভেন খাতে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি ডলার আয় হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ২.৩৫ শতাংশ বেশি। নিটওয়্যার খাতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫ কোটি ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.১ শতাংশ। এর বাইরে রপ্তানি পণ্যে যেসব পণ্যের ভূমিকা বেশি থাকে সেগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় সার্বিক রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এই নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দেশের তৈরি পোশাক খাতের বাস্তবতারই চিত্র। এতে আমরা খুব অবাক হইনি কেননা, এ খাত এখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে রয়েছে কারখানাগুলোয় অবকাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম, ইউরোর দরপতন ও বছরের মাঝা-মাঝি শ্রমিক অসন্তোষের মতো বিষয়। তিনি বলেন, এ খাতে বর্তমান সহযোগিতাগুলো অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারের উচিত বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। আগামী দুই বছরের জন্য জাহাজীকরণে ৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনারও দাবি জানান তিনি।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় ১.৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পণ্যের গড় মূল্যহ্রাস ও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে এ ভাটা দেখা দিয়েছে। বিপরীতে আমাদের প্রতিযোগীরা ভালো করছে। তিনি তৈরি পোশাক পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের তাগিদ দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ও সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, রপ্তানি আয় আরো বাড়াতে প্রচলিত বাজার ছাড়াও অনেক নতুন বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=73374