১০ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১:০২

প্রবাসী শ্রমিকদের কান্না

মালয়েশিয়া-মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের দেশে দেশে দুর্বিষহ জীবন

গার্মেন্টস পণ্য রফতানী আর প্রবাসীদের রেমিটেন্সে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড গড়ছে। এই রিজার্ভ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিমাসে সাফল্যের ‘বার্তা’ প্রচার করে থাকে। গার্মেন্টসের নাজুক অবস্থা সবার জানা। বিদেশী শকুনের থাবা এবং দেশী কিছু কুচক্রির অপরিণামদর্শীতায় ভুতের মতো পিছনের দিকে যাচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ। রেমিটেন্সের অন্যখাত প্রবাসী শ্রমিক। বিদেশে পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন যারা সেই প্রবাসীরা কি ভাল আছেন? থাইল্যান্ডের জঙ্গলের গণকবরের প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাড়-হাড্ডি ও মাথার খুলির কাহিনী সবার জানা।

মালয়েশিয়া, সউদী আরব, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, মালদ্বীপসহ ইউরোপের বহুদেশে প্রবাসীরা চরম দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। এ সব দেশে বন্দী আছে হাজারো শ্রমিক। যারা কাজ করছেন তাদের অনেকেই বৈষম্য আর জুলুম-নির্যাতনের শিকার। তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কি করছে? দেশের ভিতরে গ্রামে গ্রামে যে দালাল চক্র লোভে ফেলে নিরীহ শ্রমিকদের ভিটেমাটি বিক্রী করে বিদেশ গিয়ে বিপদে ফেলছে তাদের দৌড়াত্ম বন্ধে কি কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে? যে দেশের মানুষ কাজের সন্ধানে নৌকায় করে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যায়; যে দেশের মানুষ নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেস্টা করে সে দেশের জনসংখ্যা কি কোনো সমস্যা? এটাতো জনসংখ্যা নয় জনশক্তি। বিপুল এই জনশক্তিকে কাজে লাগাতে না পারার দায় কার?

দেশের কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন প্রবাসীদের নিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠান করেন। ওই সব অনুষ্ঠানে প্রবাসে কর্মরতদের উপস্থিত করে তাদের কথাবার্তাসহ সরাসরি ফোন করে বিদেশীদের মতামত প্রচার করা হয়। ওই সব অনুষ্ঠানে প্রবাসে কর্মরতদের দুঃখ দুর্দশার কাহিনী শুনলে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন। মানুষগুলো পশুর মতো জীবন যাপন করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে বিদেশে গিয়ে ১২ ঘন্টা থেকে ১৮ ঘন্টা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছেন; ঠিক মতো বেতন পাচ্ছেন না; পদে পদে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে; অথচ সে দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো থেকে সহায়তা পাচ্ছেন না। অথচ ভারত, শ্রীলংকা এমনকি নেপালের প্রবাসী শ্রমিকরা ওই সব দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পাওয়ায় তারা নির্বিঘেœ কাজ করছেন এবং সুন্দর জীবন যাপন করছেন। তাহলে প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে বাংলাদেশের ভ্রুক্ষেপ নেই কেন? জনগণের ট্রাক্সের টাকায় পরিচালিত বিদেশে স্থাপিত বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মররতা কি কাজ করছেন?

মালয়েশিয়ায় বিদেশী শ্রমিকদের গ্রেফতারের খবর প্রতিদিন মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে। ওই বিদেশী শ্রমিকদের বড় অংশ বাংলাদেশী শ্রমিক। গ্রেফতারকৃত শ্রমিকরা কারাগারে দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। আবার যারা এখনো গ্রেফতার হননি তারাও আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুধু মালয়েশিয়ায় নয়; বিশ্বের দেশে দেশে নানা ভোগান্তিতে দিনযাপন করছেন বাংলাদেশি শ্রমিক। চাকরিচ্যুতি, গ্রেফতার আতঙ্ক, কাঙ্খিত কাজ না পাওয়ায় স্বপ্নের প্রবাসে অনেকের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। সউদী আরব, ইরাক, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, কুয়েত, কাতার, ইয়েমেন, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে তারা এখন চরম বিপদাপন্ন। বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণ-টানাপড়েন, যুদ্ধাবস্থা এবং তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা যেমন এসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে; তেমনি কাজের চাহিদা না থাকলেও কিছু কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি নানা ফন্দি ফিকির করে সেসব দেশে কর্মী পাঠিয়ে বিপদে ফেলছে। বিদেশে কর্মী পাঠানো ব্যাপারে সুনিদৃষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে। কিন্তু প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে রিক্রুটিং এজেন্সিদের তত্ত¡াবধানে চাহিদা না থাকার পরও শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। এই শ্রমিক পাঠানোর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গ্রামে গ্রামে দালাল চক্র সৃষ্টি করেছে। ওই সব দালাল গ্রামের নিরীহ মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে যায়গা-জমি বিক্রী করে বিদেশে যেতে প্রলুব্ধ করছে। নিরীহ সহজ-সরল মানুষ না বুঝে লোভে পড়ে কাজের জন্য বিদেশ গিয়ে বিপদে পড়ছে। মিডিয়ায় খবর বের হয়েছে কাজের সন্ধানে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথে অনেক দেশের সীমানায় আটকে রয়েছে শ্রমিকরা। সা¤প্রতিক সময়ে যুদ্ধরত তুরস্কেই আটকা পড়েছে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি। কাজের সন্ধানে ইউরোপ পথের ওই শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ক’দিন থেকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিক ধরতে ব্যাপকভাবে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। গত ৩০ জুন থেকে চলা এই অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বিদেশি শ্রমিক গ্রেফতার হয়। যার মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছে প্রায় এক হাজার। অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা কারাম এশিয়ান দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হারুন-অর-রশিদের মতে, মালয়েশিয়া পুলিশ সারাদেশের অলিগলি, প্রতিটি শহর ও গ্রামে একযোগে অভিযান চালাচ্ছে। এতে বৈধ কাগজপত্র না থাকা বিদেশি শ্রমিকরা আতঙ্কিত। এই অবৈধ বিদেশিদের মধ্যে বড় অংশ বাংলাদেশি শ্রমিক। এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি শ্রমিকদের বৈধকরণের সুযোগ দেয়া হয়। বাংলাদেশী অনেক শ্রমিক এ সুযোগ গ্রহণে ব্যর্থ হয়। ভুক্তোভোগী শ্রমিকদের অভিযোগ বৈধকরণের কাগজপত্র ঠিক করতে যারা টাকা নিয়েছিল তারা সেটা করেননি। এতে তারা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। কাগজ বৈধ করতে সেখানেও দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে দালালচক্র সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রচারিত কয়েকটি টিভির সচিত্র খবরে দেখা গেল শ্রমিকরা ভিসার মেয়াদ বাড়াতে দালালের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও কোনো ফল পাননি। তাদের অভিযোগ দূতাবাসের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। অবশ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি তার দপ্তরে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ে বাংলাদেশীদের আতংকিত হবার কিছু নেই। গত ৩০ জুন অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের এক বছর মেয়াদী অস্থায়ী পাস ই-কার্ড ইস্যুর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্ত মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধতা লাভের জন্য রিহায়ারিং কর্মসূচি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে। রিহায়ারিং কর্মসূচিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার অবৈধ কর্মী অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশী।

বাংলাদেশের নাগরিক কোটি প্রবাসীর প্রায় অর্ধেকই থাকেন সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। সউদী আরবে দীর্ঘদিন জনশক্তি রফতানি বন্ধ ছিল। নারীশ্রমিকসহ নতুন করে শ্রমিক পাঠানো শুরু হলেও সউদী আরবে বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাকরি হারানো সংক্রান্ত নতুন ধাক্কা আসে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল। ওই দিন ‘শপিংমলগুলোতে প্রবাসীরা চাকরি করতে পারবেন না’ সউদী প্রশাসন এই নির্দেশিকা জারি করে। দেশটির নাগরিকদের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সেখানে শপিংমলে কর্মরত লক্ষাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। শপিংমলে কর্মরত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীর চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তারা চুক্তি নবায়ন করবে না জানিয়ে দিয়েছে। সউদী ভিশন-২০৩০ অনুযায়ী, শপিংমলের খুচরা দোকানগুলোতে বর্তমানে ১৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত। এদের মধ্যে সউদী নাগরিক মাত্র ৩ লাখ। শপিংমলে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা চরম অনিশ্চয়তায়। শুধু কি তাই; ৪ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করে সে দেশে যাওয়া বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাংলাদেশ ও সউদী আরবের এক শ্রেণীর দালালচক্রের যোগসাজশে ফ্রি ভিসার নামে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সউদী আরবে নিয়ে যাওয়া হয়। জমি-জমা বিক্রী করে বিদেশ গিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক এখনো কর্মহীন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দালালরা অনেক সময় ভুয়া কোম্পানির নামে ভিসা দেয়। এছাড়াও অনেক কোম্পানির নামে ভিসা দিচ্ছে যাদের কোনো কর্মীর চাহিদা নেই। ওই সব কোম্পানি টাকার বিনিময়ে এসব ভুয়া নিয়োগপত্র দিচ্ছে। ফলে সেখানে গিয়ে আয়-রোজগার করে দেশে পাঠানো দূরের কথা নিজেরাই খেতে পারছে না। অস্বাভাবিক হারে সউদী আরবে কর্মী গমনের কারণ অনুসন্ধানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি দল গত এপ্রিলে মাসে সউদী আরব সরেজমিনে তদন্তে যান। সেখানে তারা এসব সমস্যার সত্যতা পান। জানা যায়, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যেসব কর্মী নিয়ে যাচ্ছে তাদের অনেকের দূতাবাসের সত্যায়ন নেই। ফলে বিপদগ্রস্থ কর্মীদের খুঁজে পাওয়া দূতাবাসের জন্য দুস্কর হয়ে পড়ে। অবশ্য সউদী আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ ইনকিলাবকে বলেন, সউদী আরবে বাংলাদেশী কর্মীদের প্রচুর সুনাম ও চাহিদা রয়েছে। আগামী ১২ জুলাই সউদী’র সচিব পর্যায়ের চার সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। সউদী প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরকালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক বৈঠকেও মিলিত হবেন। কুয়েতে আতঙ্কে রয়েছে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। বকেয়া বেতন, ওভারটাইম ও অবকাশকালীন বেতনের দাবিতে স্থানীয় খৈতান ও জালিভ আল শুইয়ুখ নামের দুই কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা গত ২ জুন ধর্মঘট শুরু করে। ধর্মঘটের পরের দিন ৮ জন ও ২রা জুলাই আরো ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে ৯ জনের বিরুদ্ধে পলাতক দেখিয়ে মামলা করে স্থানীয় কুয়েত কোম্পানি। শ্রমিকদের অভিযোগ তাদের দিয়ে দাসের মতো কাজ করানো হয়। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। কিন্তু বেতন দেয়া হয় না। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার কাতার। সেখানে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। সেখানে নতুন শ্রম আইন তাদের বিপদে ফেলেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে করা নতুন আইনে বলা হয়েছে, অনুমতি ব্যতীত কোনো শ্রমিককে নিয়োগদাতা অন্য কোম্পানীতে কাজে লাগাতে পারবেন না। এই আইন অমান্য করলে শাস্তি ৫০ হাজার কাতার রিয়াল জরিমানা এবং ৩ বছর কারাদন্ড। ফলে শ্রমিকরা সুবিধা মতো মালিক পরিবর্তন করতে পারছে না। এ ছাড়াও বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণে কাতারের সঙ্গে সউদী জোটের ৬ দেশের সম্পর্ক ছিন্নের কারণে অনেক বাংলাদেশির মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের শঙ্কা এই ইস্যুতে তারা চাকরিচ্যুত হতে পারেন। অবশ্য কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস ওই শ্রমিকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানা গেছে। মুয়াম্ময় গাদ্দাফির পতনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় দীর্ঘদিন আতঙ্কে রয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকরা। কর্মস্থলে-বাসাবাড়িতে মিসাইল হামলায় শঙ্কার কারণে বর্তমানে দেশটিতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও থেমে নেই জনশক্তি রফতানী। দালালের খপ্পরে পড়ে কাজের জন্য এখনো অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ওই দেশে গিয়ে পড়ছেন বিপাকে। কাজ না থাকায় অর্থসংকটে দিনের পর দিন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। লিবিয়ায় কাজ করেন এমন একজন শ্রমিকের বড় ভাই এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান জানান, লিবিয়ার পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাড়ছে ছিনতাই। ফলে বাধ্য হয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই টাকা রেখেছিলেন ব্যাংকে। ওইসব ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় প্রয়োজনের সময় সেই টাকা তুলতে পারছেন না। নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রতিমূহুর্ত আতঙ্কিত থাকতে হয়। ইরাকের ক্ষেত্রেও এই অবস্থা। দালালকের খপ্পরে পড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ইরাকে গিয়ে বিপদে পড়েছেন কয়েকশ শ্রমিক। শ্রমের উচ্চ মূল্য হওয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের কাছে ইউরোপ হলো স্বপ্নের দেশ। য্দ্ধুবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভুমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গেছেন। ওইসব লোকজনের সঙ্গে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টায় তুরস্কে গিয়ে আটকা পড়েছেন প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। ইরান, লেবানন ও জর্ডানে বৈধভাবে কমর্রত বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে অনেকের অধিক মজুরীর প্রত্যাশায় ইউরোপে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় তুরস্কে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অথচ তুরস্কের সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ি। সেখানে আটকা পড়ছে বহু বাংলাদেশী শ্রমিক। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে চাপ দেয়া হচ্ছে ইইউ’র পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের যেসব নাগরিক ইইউভুক্ত দেশে কাগজপত্র ছাড়া বসবাস করছেন তারা আতঙ্কে আছেন। আবার যারা বৈধভাবে রয়েছেন তারাও অস্বস্তিতে পড়েছেন। গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স অনেক কমে গেছে। এর এক নম্বর কারণ হলো বহু লোক বিদেশে সেটেল করায় এখন দেশে পয়সা পাঠাচ্ছেন না। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের সেটেলমেন্টের ব্যবস্থা থাকায় তাঁরা সেখানে সেটেল হচ্ছেন। দুই নম্বর কারণ হলো প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ ফি দিতে হয়। সামনের মাসে সেটা কমিয়ে নামে মাত্র ফি করা হবে। যদি তাতে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হয় যোগ করেন অর্থমন্ত্রী। প্রশ্ন হলো যে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছে; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়াচ্ছে; সেই শ্রমিকরা প্রবাসে নির্বিঘেœ কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে সরকার কি উদ্যোগ নেবে সেটাই দেখার বিষয়। দেশের জিডিপির শতকরা ১২ ভাগ প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিটেন্সে হয়ে থাকে। প্রবাসে থাকা সেই শ্রমিকদের কাঁন্না শোনার কি কেউ নেই?

https://www.dailyinqilab.com/article/86890