রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নিচে অবৈধভাবে মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে। গতকাল ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তোলা ছবি l
১০ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১২:৫৬

উড়ালসড়কের নিচে অবৈধ দোকান, পার্কিং দেখার কেউ নেই

ভাতের হোটেল, ঘোড়ার আস্তাবল, পার্কিং, ইট-পাথরের ব্যবসা—এগুলোর সবকিছুরই দেখা মিলবে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার ও কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচেও গড়ে উঠেছে অবৈধ পার্কিং।

ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে অনেকেই হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ওই দখলের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ আছে। ওই তিনটি উড়ালসড়কসহ ঢাকার যানজট নিরসনে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঁচটি উড়ালসড়ক আছে। বাকি বনানী ফ্লাইওভার ও মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচের অংশ ফাঁকা আছে। এ দুটি উড়ালসড়কসহ কুড়িল ফ্লাইওভার ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার (একাংশ) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন। হানিফ ফ্লাইওভার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশ ঘোড়ার আস্তাবল ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ডিএসসিসিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের নিচে নাগরিকদের জন্য বাগান, ব্যায়ামাগার, গ্রন্থাগার ও বসার স্থান নির্মাণ করতে হবে; যেভাবে বনানী ফ্লাইওভারের নিচের অংশ দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার

২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার চালু হয়। চার লেনবিশিষ্ট এই উড়ালসড়ক কাজলা থেকে নিমতলী পর্যন্ত বিস্তৃত।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে নিমতলী পর্যন্ত হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন অংশে দুই শতাধিক চা ও ফলের দোকান এবং ভাতের হোটেল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে উড়ালসড়কের নিচে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের পাশে শাক-সবজির দোকান এবং পশ্চিমে আনন্দবাজারে ইট-পাথরের ব্যবসা চলছে। বঙ্গবাজার, টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেট ও সায়েদাবাদ এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে ছিন্নমূল মানুষের বাস। কাপ্তানবাজার অংশে মুরগির খাঁচা ও বর্জ্যের কারণে দুর্গন্ধে উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে চলাই দায়।

গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া অংশে অস্থায়ী জুতার দোকান, ফলের দোকান, ভাতের হোটেল বসেছে। ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে ভাড়ায় মোটরসাইকেলের পার্কিং গড়ে উঠেছে। বঙ্গবাজার থেকে নিমতলী গেটের আগ পর্যন্ত ঘোড়ার আস্তাবল আর ময়লার ভাগাড়। বঙ্গবাজার ও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দুপাশে চার সারিতে শতাধিক বাস রাখা আছে। এতে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এই এলাকায় এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে রিকশাভ্যান। আনন্দবাজার ও কাপ্তানবাজারে উড়ালসড়কের নিচে ময়লা রাখার ঘরও নির্মাণ করেছে ডিএসসিসি।

প্রায় এক বছর ধরে ফুলবাড়িয়ায় উড়ালসড়কের নিচে অবৈধভাবে ভাড়ায় মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের ব্যবসা করছেন ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মিয়া। গতকাল এই পার্কিংয়ে প্রায় ২৫টি মোটরসাইকেল দেখা গেছে। এখানে নিয়মিত মোটরসাইকেল রাখেন আশপাশের মার্কেটের দোকানিরা।

ভাড়ার টাকা ওঠানোর দায়িত্ব পালন করছেন নূর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, এই পার্কিংয়ে সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মোটরসাইকেলপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। তবে বাচ্চু ভাই-ই সব দেখভাল করেন। তিনি বাচ্চুর সন্ধান ও তাঁর মুঠোফোন নম্বর দিতে রাজি হননি।

আনন্দবাজারে উড়ালসড়কের নিচে ইট-বালুর ব্যবসা করছেন বংশাল থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মোহাম্মদ মিন্টু। সড়কের পাশেই তাঁর দোকান গোলাপ রহমান অ্যান্ড সন্স। এই জায়গা ব্যবহারে সিটি করপোরেশনের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মিন্টু বলেন, তাঁর মতো অনেকেই উড়ালসড়কের নিচে মালামাল রাখছেন। কেউ বাধা দেয় না। তাই অনুমতি নেওয়াও হয়নি।

বঙ্গবাজারের দক্ষিণ অংশে উড়ালসড়কের নিচে কাপড়ের শামিয়ানা ও বেড়া দিয়ে ভাতের হোটেল দিয়েছেন মোহাম্মদ হোসেন, নাম রবিউল ইসলাম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। তবে দোকানে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ১৩ বছর বয়সী দোকানকর্মী আল আমিন বলেন, হোসেনের সিদ্দিকবাজারের বাসা থেকে খাবার রান্না করে এখানে বিক্রি করা হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই হোটেল চলে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল প্রথম আলোকে বলেন, উড়ালসড়কের নিচে গড়ে ওঠা দোকানগুলো অবৈধ। সেখানে পরিকল্পিতভাবে সৌন্দর্য বর্ধন করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। অনেকেই উড়ালসড়কের নিচের অংশ সবুজায়নের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, উড়ালসড়কের নিচের অংশ সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা অনেক ব্যয়বহুল। তা বাস্তবায়নের পর তত্ত্বাবধান করাও অনেক কঠিন। শিগগিরই মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সঙ্গে আলোচনা করে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার: গতকাল মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ওয়্যারলেস এলাকা থেকে নিউ ইস্কাটন রোডের জনকণ্ঠ ভবন পর্যন্ত উড়ালসড়কের নিচে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ১৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি ও পিকআপ ভ্যান রয়েছে। অধিকাংশ গাড়িতে চালক ছিলেন না। এ ছাড়া চায়ের দোকান গড়ে উঠেছে তিনটি।

মো. মোস্তফা নামে এক দোকানি বলেন, কোথাও দোকান ভাড়া নেওয়ার মতো তাঁর সামর্থ্য নেই। তাই এখানে দোকান বসিয়েছেন তিনি।

কুড়িল ফ্লাইওভার: কুড়িল উড়ালসড়কের নিচে ব্যস্ততম রাস্তাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে পিকআপ ভ্যান, লেগুনা স্ট্যান্ড। চলছে গাড়ি ধোঁয়ামোছা ও মেরামতের কাজ। পূর্ব পাশের রাস্তা দখল করে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। এগুলো ঢোকা ও বের হওয়ার সময় সড়কে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।

পিকআপচালক মো. শফিক বলেন, বিকল্প স্থান না থাকায় এখানে তাঁরা গাড়ি রাখেন। এতে কারও কোনো সমস্যা হয় না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

মহাখালী ও বনানী ফ্লাইওভার: এ দুটি উড়ালসড়কের নিচের অংশে কোনো অবৈধ স্থাপনা বা পার্কিং নেই। এর মধ্যে বনানী ফ্লাইওভারের বিভাজন সবুজ গাছে ভরা। এই বিভাজনে বিভিন্ন নকশা করা হয়েছে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1245326