সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক। জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী মধুরাই গ্রামের সড়কটি বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছবিটি গত বুধবার বিকেলে তোলা l
১০ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১২:৫১

বন্যায় কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটের নয় উপজেলার রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও পুকুরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি এখনো নামেনি। ফলে ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা যাচ্ছে না। তবে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে স্থানীয় প্রশাসন আশঙ্কা করছে।

প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যায় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের পুনর্বাসন অথবা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

৪ জুলাই জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর উপস্থিতিতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা হয়। এতে জানানো হয়, জেলার নয় উপজেলায় ৫৫টি ইউনিয়নের ৪৬৬টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টরের আউশ ধান ও ৩৫ হেক্টরের আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ৭ হাজার ২৯৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সভায় আরও জানানো হয়, বন্যায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তিনটি সড়ক আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়কের ছয় কিলোমিটার অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কার্পেটিং উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অধীনে থাকা গ্রামীণ রাস্তা। এ পর্যন্ত এলজিইডির প্রায় ২১৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলেও অতিবৃষ্টিতে বিশ্বনাথ উপজেলায় এলজিইডির কিছু রাস্তা বিনষ্ট হয়েছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, তাদের অধীনে থাকা চারখাই-বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ-মাইজগাঁও-পালবাড়ি এবং দাউদাবাদ-দাউদপুর-মানিকোনা-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক তিনটির ছয় কিলোমিটার অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে যাওয়া অংশে কার্পেটিং উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, ‘পানি এখনো সড়ক থেকে নামেনি। তবে আমরা সড়কগুলো পরিদর্শন করে দেখেছি, ডুবে যাওয়া অংশে কার্পেটিং উঠে গেছে। বন্যা শেষে সড়কগুলোর সংস্কারকাজ করা হবে।’

বন্যাদুর্গত এলাকার কয়েকজন বলেন, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও বেরিয়ে আসছে। বিশেষ করে কাঁচাপাকা রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো জায়গায় পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে কয়েক ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে কাঁচা রাস্তা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় পাকা রাস্তার ইট ও খোয়া স্রোতে ভেসে গেছে। মাটি বেরিয়ে পড়েছে। পানি আরও কমলে রাস্তাগুলোর পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে। পানি নেমে যাওয়ার পর দ্রুত ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কার করা না হলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে।

ফেঞ্চুগঞ্জের বাঘমারা গ্রামের ফয়সল আহমদ বলেন, কেবল রাস্তাঘাট নয়, বানভাসি মানুষ ফসল হারিয়েও অসহায় হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকার বহু খামারির পুকুর ডুবে যাওয়ায় অনেক মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের আবার ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি প্রণোদনা কিংবা বিশেষ সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া যেসব দরিদ্র পরিবারের কাঁচা ঘর বন্যার পানিতে ধসে গেছে, তাদের বসতবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

সিলেট এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২১৬ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলা। এখানে ৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বালাগঞ্জে ৪০, সিলেট সদরে ৩৫ দশমিক ৫০, গোয়াইনঘাটে ৩০ দশমিক ৭৫, গোলাপগঞ্জে ২২ দশমিক ৫০, কোম্পানীগঞ্জে ১৮, ফেঞ্চুগঞ্জে ১৫, জকিগঞ্জে ২ দশমিক ১৮ ও ওসমানীনগরে ২ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে বিশ্বনাথে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্ট না হলেও অতিবৃষ্টিতে ২ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম মহসিন বলেন, বন্যার পানি পুরোপুরি সরে যাওয়ার পর দ্রুত প্রাথমিক মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, এখন তা নিরূপণের কাজ চলছে।

সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পরপরই বন্যাকবলিত এলাকায় সড়ক সংস্কারের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যজীবীরা যেন আবার নিজেদের পেশায় পূর্ণোদ্যমে ফিরতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনে তাঁদের পুনর্বাসন অথবা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়াসহ নানামুখী সহায়তা করা হবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1245281