১০ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১২:১৭

সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাল ডিবি

আরেকজনকে ছাড়া হল টাকার বিনিময়ে * ডিসি-ডিবিকে তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ আদালতের

ঢাকা থেকে রানা আহমেদ ও মো. আজাদ নামে দুই ব্যবসায়ীকে আটকের পর একজনকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া এবং অপরজনকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এক পরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এমনকি ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো ব্যবসায়ীকে ডিবি হেফাজতে শারীরিক নির্যাতন না করতে এক লাখ টাকা ঘুষ নেয়ারও অভিযোগ তুলেছেন স্বজনরা। এদিকে এসব অভিযোগ ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য আসামিপক্ষ আদালতে আবেদন করে। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের ডিসিকে তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। রোববার চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মো. নোমানের আদালত এ নির্দেশনা দেন। যে তিন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ, এসআই আবছার উদ্দিন রুবেল ও কনস্টেবল পাপ্পু। এ তিন পুলিশ সদস্য তাদের সোর্সের মাধ্যমে আটক দুই ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারেরও হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্য।

রোববার রানা আহমেদের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। আবেদনে বলা হয়, ‘গত ২ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় হালিশহর থানায় করা একটি মামলায় ঢাকার রামপুরা থেকে ব্যবসায়ী মো. রানা আহমেদ ওরফে জাহেদকে আটক করা হয়। একই দিন রাতে ঢাকার বাড্ডা থেকে একই মামলার আসামি মো. আজাদকেও সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। অভিযানের নেতৃত্ব দেন হালিশহর থানায় করা মামলা তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আবছার উদ্দিন রুবেল। আটক ব্যবসায়ীদের ৪ জুলাই ঢাকা থেকে সিএমপির গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া হয়। ওইদিন রাতে ব্যবসায়ী আজাদকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দিলেও রাত ১০টার পর রানা আহমেদকে পাঠানো হয় কোতোয়ালি থানা হাজতে। ৬ জুলাই বেলা ১১টার পর কোতোয়ালি থানা হাজত থেকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ওইদিন বিকালে পাহাড়তলী থানার একটি মাদক মামলায় রানা আহমেদকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’

এছাড়া ব্যবসায়ী রানা আহমেদের স্বজনরা যুগান্তরকে জানান, ৪ জুলাই রাতে পুলিশের দুই সোর্সের মাধ্যমে রানা আহমেদ ও আজাদকে ছাড়ানোর বিষয়ে কথাবার্তা হয়। পুলিশের দাবিকৃত টাকা রানার স্বজনরা দিতে না পারায় তাকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানো হয়। তবে আজাদের পরিবার টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। অন্যদিকে পাহাড়তলী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় পুলিশের এজাহারে বলা হয়, ‘৫ জুলাই রাত ৮টা ১৫ মিনিটে পাহাড়তলী থানাধীন একে খান এলাকার শাহী বাস কাউন্টারের বিপরীতে রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় রানা আহমেদকে আটক করা হয়। পরে দেহ তল্লাশি করে তার জিন্সের প্যান্টের পকেট থেকে ২টি নীল রঙের পলিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। সেখানে ২৫০ পিস করে ৫০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। যার মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’ এ মামলাটি করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আবছার উদ্দিন রুবেল।

তবে ব্যবসায়ী রানা আহমেদের স্বজনদের অভিযোগ, ঢাকা থেকে রানাকে আটকের পর চট্টগ্রামের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। একই সঙ্গে আটক আজাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে পুলিশ তাকে রাতেই ছেড়ে দেয়। ডিবি হেফাজতে রানাকে শারীরিক নির্যাতন না করার জন্য এসএ পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে তার (রানার) ভাই ৫ জুলাই এক লাখ টাকা রানার নামে পাঠান। যার রসিদ নম্বর- ইপি-২১৬৩১৯। রানা তখন ডিবি পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। এ টাকা পুলিশ তুলে নেয়। এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু যুগান্তরকে জানান, যে মামলায় ব্যবসায়ী রানা আহমেদ ওরফে জাহেদ ও মো. আজাদকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়, ওই মামলা তুলে নিতে ১৮ এপ্রিল আদালতে লিখিত দরখাস্ত দেন বাদী ইঞ্জিনিয়ার নাছিরুল কবির মনির। ওই দিন আদালতের আদেশসহ তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে আদালতের নির্দেশনা প্রেরণ করা হয়। তারপরও এ দু’জনকে ঢাকা থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি আরও জানান, ৫ জুলাই রাতে পাহাড়তলী থানা এলাকায় ইয়াবাসহ রানা আহমেদকে হাতেনাতে আটকের কথা বললেও রানাকে ২ জুলাই রাতে রামপুরা থেকে আটক করা হয়। ৪ জুলাই সকালে সিএমপির গোয়েন্দা কার্যালয়ে এবং ওইদিন রাতে কোতোয়ালী থানা হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়, যা সিএমপির সিসি ক্যামেরা এবং কোতোয়ালি থানায় প্রবেশে যে সিসি ক্যামেরা আছে তার ফুটেজে প্রমাণ পাওয়া যাবে। কিছু ফুটেজ তাদেরও সংগ্রহে আছে। এ প্রসঙ্গে নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ও এসআই আবছার উদ্দিন রুবেল যুগান্তরকে বলেন, আদালতে আসামিপক্ষ রোববার মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছে। গ্রেফতার আসামি রানা আহমেদকে ২ জুলাই ঢাকা থেকে নয়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানা এলাকা থেকে ৫ জুলাই রাতে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে আটক করা হয়। এসব ইয়াবা তার প্যান্টের পকেট থেকেই উদ্ধার করা হয়। এখন মামলায় সুযোগ নেয়ার জন্য তারা কাল্পনিক কথাবার্তা বলছে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। গ্রেফতার আসামি রানা আহমেদ একজন প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো কিংবা ঘুষ নেয়ার কথা সঠিক নয়। তবে ব্যবসায়ী আজাদকে আটক বা তাকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ও এসআই আবছার উদ্দিন রুবেল।

 

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/10/138236