৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ৩:৪৫

আট সংস্থার সমন্বয়হীনতায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতা

আট সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা কাটছে না। সামান্য বৃষ্টিতেই হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর উপর রয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন আর ওয়াসার সীমাহীন ব্যর্থতা।

নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি এবং নিরসনের সঙ্গে আটটি সংস্থার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। সংস্থাগুলো হচ্ছে: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, ভূমি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জমা হওয়া পানি নগরীর বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য ২৫০টি পাম্প ব্যবহারের কথা বলা হলেও সচল পাম্পের সংখ্যা ১৫৬টির বেশি হবে না, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। সামান্য বৃষ্টিপাতের পর পানি ধরে রাখার মতো জলাধার নেই রাজধানীতে। পানি প্রবাহের সব খাল-নালা কোথাও না কোথাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টিপাত হলেই বন্ধ ড্রেন-নালা উপচে পানির স্রোত বইতে থাকে সড়কে। নিমজ্জিত হয় নিচু এলাকার বসতি।

কদমতলা, জুড়াইন, খিলগাঁও, বাড্ডার নিম্নাঞ্চলে বহু মহল্লার বাড়িঘরের ভিতরে কোমর পানি ঢুকে পড়ে। বক্স কালভার্ট নির্মাণে ঢাকা ওয়াসার অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নগরবাসীর জন্য আরেক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমাতে তিনটি স্থানে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ বক্স কালভার্ট নির্মাণ করেছিল ওয়াসা। কিন্তু আবর্জনা নিয়মিত অপসারণ না করায় এসব বক্স কালভার্টের ভিতরে পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য জমে নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় রুদ্ধ হয়ে আছে। ফলে জলাবদ্ধতা দূর করার বদলে এসব এখন জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওয়ার্ড ও মহল্লার পানি ও বর্জ্য বের করে দেওয়ার দায়িত্ব ঢাকা সিটি করপোরেশনের। দীর্ঘদিনেও নগরীর বর্জ্য অপসারণে গতি আনতে পারেনি এই সংস্থাটি। নগরীতে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব বর্জ্যের সব অপসারণ করতে পারে না সিটি করপোরেশন। বৃষ্টি হলে ওই সব বর্জ্য ড্রেনেজ লাইন ও বক্স কালভার্টে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।

বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সিস্টেম বিনষ্ট করে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, পানি প্রবাহের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া, অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে বক্স কালভার্ট নির্মাণ, খাল-জলাশয় জবরদখল ও ভরাটের কারণে পানিতে ডুবছে ঢাকাবাসী। সাত থেকে নয় মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই পুরো রাজধানীতে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, জলাধার বিলীন, অতিরিক্ত বর্জ্য, বর্জ্য নিষ্কাশন ও ব্যবস্থাপনা সংকট, খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ । আর সমস্যা নিরসন না হওয়ার পিছনে রয়েছে ছয় মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত আটটি সংস্থার সমন্বয়হীনতা। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ‘ইত্তেফাক’কে বলেন, সরকারি এই সংস্থাগুলোর সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমেই জলাবদ্ধতার অভিশাপ দূর করা সম্ভব। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে রাজউক, ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ না থাকায় বছরের পর বছর অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন। তবে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ততৎপরতামূলক কর্মকাণ্ড এখনো দেখা যাচ্ছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. সাঈদ খোকন বলেন, নগরীর আবর্জনা পরিষ্কার সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কাজ। এছাড়া আমরা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসার সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি খাল উদ্ধার করা হয়েছে যৌথভাবে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, এক সময় রাজধানীতে ৪৭টি খাল ছিল। এখন ২৬টি খালের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৩টি খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। বাকি ১৩টি খালের মালিক ঢাকা জেলা প্রশাসন। মূলত নগরীর খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়াতে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই ঢাকার ভিতর প্রবহমান অনেকগুলো খাল উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি খালগুলোও উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসব খাল স্থায়ীভাবে উদ্ধার করে সংস্কারের ব্যবস্থা করতে পারলে ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে।

http://www.ittefaq.com.bd/capital/2017/07/08/119611