রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ এক বাড়িতে ভোগান্তির রান্না।
৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ৩:৪৩

ঢাকার নিম্নাঞ্চলে বর্ষাজুড়ে থাকবে জলাবদ্ধতা!

সাত স্থানের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ঢাকায়

সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানী ঢাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে যাচ্ছে। মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়ক, অলিগলিতে যান চলাচলের অংশ কমে যাচ্ছে। হেঁটেও চলাচল করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মিরপুর, বাড্ডা, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের জন্য জলাবদ্ধতা নাগরিক অচলাবস্থায় বড় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরীর নিম্নাঞ্চলে জমা হওয়া পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় জলাবদ্ধতা বিস্তৃত হচ্ছে। আর ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে দোষাদুষিতে এ সংকট আরো বাড়ছে।
গত রবিবার ও গত সোমবার দফায় দফায় বৃষ্টিপাতে প্রায় ফাঁকা ঢাকায়ও তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয়েছে নগরবাসীকে। গতকালও ছিল যানজট।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থাসংক্রান্ত প্রাত্যহিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকার আশপাশে নদীর পানি গতকালও বেড়েছে। গত সোমবারের প্রতিবেদনে ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে সাতটি এলাকার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকায়। ঢাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৭ মিলিমিটার, ঢাকার চেয়ে বেশি ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে লামায়, ঢাকার চেয়ে কম বৃষ্টিপাত ৮৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে বরগুনায়।
পরিমাণ বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাজধানীতে তৈরি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। গত ঈদুল ফিতরের দিন কয়েক আগে থেকে টানা বর্ষণ হয়েছিল ঢাকায়। তাতে জলজট এবং সেই সঙ্গে দিনের বেলায় যানজটে নগরী অচল হয়ে পড়ে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুসারে, অন্যান্য বছরের চেয়ে জুনে বৃষ্টিপাত হয়েছে বেশি। সাধারণত ভারি বর্ষণ জুলাই থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হয়ে থাকে। জুলাই ও আগষ্টে অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টিপাত হয়। গত ১৮ জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি। আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেছেন, গত বছর ১৭ জুন মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ শুরু হয়েছিল, এবার শুরু হয়েছে ১২ জুন থেকে।

জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভরা বর্ষা শুরুর আগে থেকেই ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতায় চলাচলের অযোগ্য ও দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে মেয়র হানিফ উড়াল সেতুর নিচের সড়ক, নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক উড়াল সেতু প্রকল্প এলাকা, হাতিরঝিল ঘিরে রাখা সড়ক, রামপুরা, প্রগতি সরণি, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকা। বেশির ভাগ স্থানে রিকশা ডুবে যাচ্ছে, গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে পড়ছে। বেশি বিপদে আছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালকরা। গতকাল সকালে মৌচাক থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার দিকে যেতে যেতে কমপক্ষে ১০টি অটোরিকশা অচল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অটোরিকশাচালক মোসাহিদ আলী বলেন, এখানে পানি জমে বেশি, নৌকা চলতে পারে, অটোরিকশা চালানো যায় না।

শান্তিনগরে এবার গত বছরের চেয়ে জলাবদ্ধতা অপেক্ষাকৃত কম। তবে যাত্রাবাড়ী, কুড়িল, শনির আখড়া, ডেমরাসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা স্থায়ী ও বিস্তৃত হচ্ছে।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার খোলা ড্রেন ও প্রায় চার হাজার কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহের পাশাপাশি মহানগরীর ৩৯ শতাংশ ড্রেনেজ সিস্টেমকে সচল রাখতে পারে। এ জন্য ৬৫ কিলোমিটার খাল ও বক্স কালভার্ট আছে। তবে এসব কোনো ব্যবস্থাই জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজে আসছে না বলে নগরবাসীর অভিযোগ রয়েছে। গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী অংশে রাস্তায় জলাবদ্ধতায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল। যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কের কাছে দাঁড়িয়ে পিপাস রায় বলেন, রাজধানীর সব উড়াল সেতুর ওপর থেকে পানি পড়ে নিচের রাস্তায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে। মেয়র হানিফ উড়াল সেতুর নিচে ওপর থেকে যেভাবে পানি পড়ে তাতে দুর্ভোগ বাড়ে।

পূর্ব জুরাইন থেকে ডিএনডি বাঁধ পর্যন্ত প্রতিদিনই পানি জমে থাকে। এ অংশ দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী মোজম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিচু হওয়ায় আশপাশের এলাকাসহ বাসাবাড়ি থেকে পানি জমে থাকে রাস্তায়। ’

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/07/08/516685