৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১১:৩৯

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাওর তীরের বানভাসি মানুষ

 নানা সমস্যা আর সংকট সঙ্গী হয়েছে হাওর তীরের মানুষের। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত তারা। তৃতীয় দফা বন্যায় এখন নতুন উপদ্রব পানিবাহিত রোগবালাই। বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চলের লোকজন এখন পানিবাহিত নানা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এর অন্যতম কারণ বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। বন্যার্তদের খাবার পানি বিশুদ্ধ করার জন্য দেয়া হচ্ছে ওষুধ। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। আর রান্না ঘর ডুবে যাওয়ায় বিকল্প পদ্ধতিতে রান্নার কাজে নিত্যপ্রয়োজনীয় রান্না ছাড়া পানি ফোটানোর পর্যাপ্ত সুযোগও নেই। অন্যদিকে টয়লেটগুলো পনিতে ডুবে যাওয়া চরম স্যানিটেশন সংকট সর্বত্র। এখন বন্যার পানিতে হাওর পাড়ের ঘরবাড়ি একাকার। চলমান ৩য় দফার বন্যায় ডুবিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সঙ্গে বিশুদ্ধ খাবার পানির উৎস টিবওয়েল। এনিয়ে হাওর তীরের বন্যাকবলিত লোকজনের দুর্ভোগের অন্ত নেই। বানের পানিতে বিশুদ্ধ খাবার পানির উৎস টিউবওয়েল ডুবে থাকায় তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে বানভাসি মানুষ এখন আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত নানা রোগে।  ডাইরিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, আমাশয়, চর্মরোগ, কৃমি ও পেট ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ তাদের পিছু নিয়েছে। চৈত্রের অকাল বন্যার পর ৩য় দফার চলমান বন্যায় এখন এমন স্বাস্থ্য অবস্থা হাওর তীরবর্তী বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর। আয় রোজগার নেই তাই হাতে টাকাও নেই। এমন অসহায়ত্বে রোগ সারাতে মনোবল আর ধৈর্য্যই একমাত্র পুঁজি। মাঝে মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণায় অধৈর্য্য হলে রোগ সারাতে স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা উপজেলা সরকারি হাসপাতালগুলোতে গেলে সেখানে মিলে না ডাক্তার কিংবা ওষুধ। হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজার অংশের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা ৩টি উপজেলার মধ্যে ২টি উপজেলায় রয়েছে সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু এই দু’টি হাসপাতালেও রয়েছে ডাক্তার, ওষুধ ও লোকবলসহ নানা সমস্যা ও সংকট। আর যা আছে তারও সদ্ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন বিপর্যয় এর আগে কখনো দেখেনি তারা। ঘরে যেমন খাদ্য নেই। তেমনি না থাকার তালিকায় আছে ওষুধ ও অনান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও। তাই হাওরজুড়ে এখন শুধুই হাহাকার। কর্মহীন মানুষগুলো পুরোপুরিই বেকার। এমন অভাব অনটনের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা অসুখ-বিসুখ। গতকাল সরজমিন হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা অংশের একাধিক ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে দেখা গেল বন্যাকবলিত মানুষের ঘরবাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বানভাসি অনেকেই জানালেন তারা বানের পানি যেমন খাচ্ছেন। তেমনি তা দিয়ে রান্নাবান্নাসহ অনান্য প্রয়োজনীয় কাজও সারছেন। কারণ তাদের টিউবওয়েল পানিতে ডুবে থাকায় বাধ্য হয়ে তা করতে হচ্ছে। আর পুরো গ্রামের মধ্যে যে দু’-একটি টিবওয়েল উঁচু স্থানে কোনোরকম ভেসে আছে সেখান থেকে বানের পানি ঠেলে গিয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করাও কষ্টকর। তারা জানালেন গেল কদিন থেকে তাদের পরিবারে সদস্যরা নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। ওষুধ কেনার সাধ্য নেই তাই ওরস্যালাইন খেয়ে রোগ তাড়াচ্ছেন। জানা গেল এখন প্রতিনিয়তই তারা আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, আমাশয়, চর্মরোগ, কৃমি ও পেট ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে। ওই এলাকার স্থানীয় হাটবাজারের ছোট-বড় ফার্মেসিগুলোর মালিকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল এখন তাদের ফার্মেসিতে পানিবাহিত রোগের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে অন্য সময়ের চাইতে তুলনামূলক বেশি। স্থানীয় চিকিৎসক ও সচতেন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন মহামারি দেখা দিবার আগে দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার। বানভাসি মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, এ বছর অকাল বন্যায় বোরো ধান পচে হাওরের পানি দূষিত হওয়ায় পর একাধিক বার বন্যা হচ্ছে। সর্বশেষ ৩য় দফার বন্যায় তাদের টিউবওয়েল ও স্যানিটেশন বিপর্যস্ত হয়েছে। তাই পানিবাহিত নানারোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের সার্বিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=73018&cat=2