৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১১:৩৬

পরোয়ানার আসামি চিফ হুইপের সঙ্গে

পটুয়াখালীর বাউফলে পুলিশের উপস্থিতিতেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আনিচুর রহমান ওরফে আবদুর রব (ডান থেকে তৃতীয়) ক্ষমতাসীন দলের চিফ হুইপ ও স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের (ডান থেকে দ্বিতীয়) সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি l প্রথম আলোতিনি আওয়ামী লীগের নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। পুলিশ বলছে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি পলাতক। অথচ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যোগ দেন প্রশাসনের উপস্থিতিতেই। গতকাল শুক্রবার তাঁকে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের চিফ হুইপ ও স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের সঙ্গে। তখনো পুলিশ উপস্থিত ছিল।

দলীয় একাধিক সূত্র এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই নেতার ফেসবুক আইডিতে তিনি আ স ম ফিরোজের সঙ্গে থাকা ছবিও পোস্ট করেছেন।
তিনি হলেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগদলীয় চেয়ারম্যান ও ধুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনিচুর রহমান ওরফে আবদুর রব।
দলীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ধুলিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় নদীভাঙন পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন আনিচুর। এ সময় বাউফল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লুৎফর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে পটুয়াখালীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার, জেলা পরিষদের সদস্য মো. জহির উদ্দিন বাবর, ধুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুরমায়ূন কবির প্রমুখ ছিলেন।

পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনিচুরের নেতৃত্বে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ধুলিয়া ইউপির আলোকী চাঁদকাঠি ঝাউতলা খেয়াঘাট এলাকায় তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বারের ওপর হামলা চালানো হয়। আবদুল জব্বারসহ তাঁর তিন কর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে এ ঘটনায় আবদুল জব্বার বাদী হয়ে আনিচুরকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে পটুয়াখালী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত করে পুলিশ ওই বছরের ১ জুলাই আনিচুরসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ৫ অক্টোবর আনিচুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

জানতে চাইলে, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও আনিচুরকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। আনিচুরের হুমকির কারণে তিনিসহ (আবদুল জব্বার) তাঁর শতাধিক কর্মী এলাকায় যেতে পারছেন না।
তবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান বলেন, ‘চিফ হুইপের সঙ্গে ছিলাম। তবে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই।’
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আযম খান ফারুকী বলেন, ‘চেয়ারম্যান আনিচুর অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তবে তিনি পলাতক, আত্মগোপনে আছেন।’ যদি আত্মগোপনেই থাকেন, তাহলে আজকে তো (গতকাল শুক্রবার) পুলিশের উপস্থিতিতেই তিনি (আনিচুর) চিফ হুইপের সঙ্গে ছিলেন। তখন গ্রেপ্তার করা হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1242326