সম্প্রতি রাজধানীতে প্রবল বর্ষণের সময় ফকিরাপুল এলাকার পানিধদ্ধতার দৃশ্য
৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১১:৩১

প্রাকৃতিক ব্যবস্থা নষ্ট ও আনাড়ি উন্নয়নে রাজধানীতে পানিবদ্ধতা

খালসহ পানির প্রাকৃতিক আধার ভরাট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্যুয়ারেজ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় একটু বেশি বৃষ্টিতে রাজধানীর রাস্তা-ঘাট, পাড়া-মহল্লা তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেক পুরনো। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে বর্তমান সরকারের আনাড়ি উন্নয়নের খড়গ। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা পানিবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা সাম্প্রতিক সময়ে চরমে উঠেছে বলে খোদ নগরবাসী অভিযোগ করছেন। আর নগর পরিকল্পনাবিদরা এর জন্য অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন ‘উন্নয়ন’কে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, এ সমস্যার কারণ জানা থাকলেও নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

এদিকে বিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ওয়াসা ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ-সংস্থাগুলো এর জন্য পরষ্পরকে দোষারোপ করছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রই সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করলেও তা দূরীকরণে কার্যকর উদ্যোগ-আয়োজন চোখে পড়ছে না।
দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খানাখন্দক ও খোঁড়াখুঁড়ির গর্তে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে আছে। কোথয় সমতল আর কোথায় খানাখন্দক বোঝার উপায় নেই। এ সব সড়কে প্রতিদিন অহরহ ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। গত মঙ্গল ও বুধবারের টানা বৃষ্টিতে মতিঝিল, মিরপুর, রামপুর, মৌচাক, বঙ্গবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও অলি-গলির কোথাও হাঁটু পানি, কোথাওবা কোমর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে পথচারি-নাগরিকদের পড়তে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কারণে মগবাজার-মৌচাক এলাকা ও মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে মিরপুর-আগারগাঁও এলাকা সামান্য বৃষ্টিতেই প্লাবিত হচ্ছে।

কয়েক বছর আগেও পানিবদ্ধতার জন্য পলিথিনকে দায়ী করা হতো। তবে এটা ছিল একটা নিছক অযুহাত। নগর বিশেষজ্ঞরা পানিবদ্ধতার জন্য যে সব কারণ চিহ্নিত করেছেন সেগুলো হচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নগরীর অভ্যন্তরীণ খাল দখল ও গতিপথ সংকচিতকরণ, নগরীর সলিড ওয়েস্ট অপসারণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, নিচু জলাশয়ে সলিড ওয়েস্ট ডাম্প করা, গৃহস্থালী বর্জ্য ড্রেনেজ নেটওয়ার্কে সরাসরি নিক্ষেপ করা, খালের গতিপথে আড়াআড়ি রাস্তা নির্মাণ, নগরীর অভ্যন্তরে খাল, জলাশয়, ডোবা ভরাট করে ফেলা, রাস্তা মেরামতে ড্রেনেজ লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়া, বহুতল ভবনের বালিসহ কাদামাটি ড্রেনে প্রবেশ, বিভিন্ন সংস্থার ইচ্ছামত ড্রেন সংযোগ, উন্মুক্ত স্থানের ময়লা যথাসময়ে পরিষ্কার না করা, শহর রক্ষা বাঁধের অভ্যন্তরে ক্যাচমেন্ট এলাকায় কম ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পিং ব্যবস্থা ইত্যাদি। পানিবদ্ধতার এসব কারণের সাথে ওয়াসা, ডিসিসি, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেলওয়েসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকলেও পানিবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসা ছাড়া অন্যরা তেমন ভূমিকা পালন করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আলোর মুখ দেখে না।
ভুক্তভোগী ও ওয়াকিবহালমহল বলছেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের শুরু থেকেই বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-রামপুরা-রাজারবাগ-শান্তিনগরের প্রধান সড়কের যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রাজধানীবাসীর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। তিন বছর ধরে চলা এ ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সময়ও পার হয়েছে বেশ কয়েকবার। তারপরও শেষ হয়নি কাজ, শেষ হয়নি জনভোগান্তি। সম্প্রতি সেই ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন চলা ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের কারণে এমনিতেই ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী, তার ওপর নতুন করে রাস্তা খোঁড়ার কারণে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ সড়ক ব্যবহারকারী লাখ লাখ নগরবাসীকে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে বিপুল কর্মঘণ্টা। সরেজমিন রাজারবাগ, মালিবাগ মোড়, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ রেলগেট, এফডিসি মোড় ঘুরে দেখা গেছে, একদিকে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। রাস্তা দিয়ে চলাচলের উপায় নেই। কোথাও চলছে ফ্লাইওভারের স্লাবের কাজ আবার কোথাও আই গ্রাডার, বিম, ঢালাইয়ের কাজ। নির্মাণ শ্রমিকরা জানিয়েছেন, যেভাবে কাজ চলছে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা বাসচালকরা জানান, ফ্লাইওভারের কাজ চলাতে সড়কের নিচে থাকা বিভিন্ন ড্রেন ও স্যুয়ারেজের লাইনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি জমে থাকে ও স্যুয়ারেজের ময়লা পানি সড়কের ওপর ভেসে ওঠে। কাদা পানিতে চলতে গিয়ে কিছুক্ষণ পর পর রিকশা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশার মতো ছোট গাড়ি নষ্ট হয়ে আটকে পড়ছে। আনাড়ি উন্নয়নের কারণে মিরপুর-পল্লবী এলাকায়ও এখন সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক জানিয়েছেন, মোটা দাগে পানিবদ্ধতার জন্য ৫টি কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে - রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসার পানি নিষ্কাশনে ৩৩৪ কিলোমিটার ড্রেন আছে। দুই সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন আছে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার। এ দু’টি সংস্থার পাশাপাশি গণপূর্ত অধিদফতর, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রাজধানীর পানি নিষ্কাশনে কিছু ড্রেনেজ এবং কিছু এলাকা রক্ষণাবেক্ষণ করে। দু’টি সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, গণপূর্ত অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতরসহ ১৫টি প্রতিষ্ঠান পানি নিষ্কাশনে কাজ করছে। কিন্তু এদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তিতাস, ওয়াসা, ডিপিডিসি, ডেসকো, বিটিসিএলসহ টেলিফোন কোম্পানি ও নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাস্তা কাটাকাটি করছে। রাস্তা কাটার জন্য অনুমতি দেয়ার সময় সমন্বয় করা হয় না। এছাড়া বর্তমানে ফ্লাইওভার নির্মাণের নামে রাস্তা কেটে কাজ চলছে। এভাবে যে যার মতো এলোপাতাড়ি কাটাকাটির ফলে মাটি, ইট, পাথর, বালি পড়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যতঃ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অর্থ ব্যয় হলেও ড্রেন সংস্কার করা হয় না।
আনিসুল হক আরো বলেন, পানি নামবে কোথায়? পানিবদ্ধতা কেন হবে না? এখন যে অবস্থা, তাতে লাখ লাখ লোক লাগানো হলেও ড্রেন পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। যেখানে যাচ্ছি, দেখছি যত্রতত্র নির্মাণ কাজ হচ্ছে। নির্মাণ কাজের জিনিসপত্র হয় ড্রেনে ফেলছে না হয় স্যুয়ারেজের ভেতরে ফেলছে। স্যুয়ারেজের মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ড্রেন পরিষ্কার করতে পারছি না। ড্রেনের ভেতরে সিমেন্ট জমে শক্ত হয়ে গেছে। কী করে পানিবদ্ধতা কমবে? এলাকায় কেউ হয় হাউজিং করেছে, না হলে রাস্তা-মাঠ দখল করে রেস্টুরেন্ট করে ফেলেছে। মাটি ফেলে লেকের মুখ, ড্রেনেজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা কতজনকে বলব? বর্জ্য ফেলার কোনো জায়গা নেই। আপনার বাড়ি থেকে যে বর্জ্য নিচ্ছে, সেটা কোথায় ফেলবে? আসলে মাত্র পাঁচ লাখ লোকের জন্য এই শহর তৈরি করা হয়েছিল। এখন দুই কোটি লোক বাস করে। সমস্যা তো হবেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, সব সংস্থাকে নিয়ে একটি সমন্বিত কর্তৃপক্ষ গঠনের চেষ্টা চলছে। এই সমন্বিত কর্তৃপক্ষ গঠন করে কাজ শুরু করতে পারলে পানিবদ্ধতার কারণগুলো নিরসন করা যাবে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে রাজধানীর খাল ও অন্যান্য নিচু জায়গা ও পানির প্রাকৃতিক আধারগুলো ভরাট করে অট্টালিকা গড়ে তোলা হয়েছে। বিদ্যমান খালগুলোও দখল-ভরাটে সংকুচিত হয়ে গেছে। ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থায় আন্তঃসংযোগ নেই। ফলে ড্রেন দিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর পানির গতি আটকে যাচ্ছে। সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে পানিবদ্ধতা। এছাড়া অধিকাংশ এলাকায় সরু ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ড্রেন উপচে পানি পড়ছে।
সাঈদ খোকন আরো বলেন, যেসব জায়গা দিয়ে পানি নেমে যাবে, সেখানে হাউজিং ব্যবসায়ীরা বাড়ি নির্মাণ করে পানি নামার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকা শহরে যে ড্রেন আছে, সেগুলো ১৪টি সংস্থার নিয়ন্ত্রণে। একটির সঙ্গে আরেকটির সমন্বয় নেই। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই জটিল। তিনি আরো বলেন, বক্স কালভার্টগুলো ভেঙে পরিষ্কার করা ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, কালভার্টের ভেতরে ময়লার স্তর জমে শক্ত হয়ে গেছে। পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বারবার জানানোর পরও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছে না। দুই সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা অফিসে বহু অভিযোগপত্র জমা পড়েলেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি রাজধানী ঢাকাকে শতভাগ পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে ঢাকা ওয়াসা যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তাও মুখ থুবড়ে বড়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, ঢাকা ওয়াসা বছরে ১ বার মাত্র ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে। ওয়াসার ড্রেনেজ সিস্টেমের আয়তন হলো ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ এলাকাতেই স্টর্ম ড্রেনেজ সিস্টেম নেই। জানা গেছে, গত প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে রাজধানীর মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এ সব লাইনের বেশিরভাগই এখন অকেজো। কর্তৃপক্ষ যেখানে লিকেজ পাচ্ছে, সেখানে সংস্কারের চেষ্টা করছে। স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের একটি মহাপরিকল্পনা ২০১২ সালে ওয়াসা নেয়। কিন্তু অত্যন্ত ধীরগতি ও পরিকল্পনা মাফিক কাজ না হওয়ায় এ প্রকল্পও অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়াছে।
তৎকালীন সময় প্রায় ১৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা (১৬০ কোটি ডলার) ব্যয়ে ডেনমার্কের গ্রন্টমিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার অধীনে প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ও ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) অঞ্চলের মোট ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনার এ মহাপরিকল্পনা তৈরি করে।
ওয়াসা জানায়, রাজধানী ঢাকায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিচারের মধ্যে ড্রেনেজ সিস্টেম রয়েছে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ওয়াসা জানায়, পানি নিষ্কাশনের জন্য আরও ১২০ কিলোমিটার ড্রেনেজ সিস্টেম দরকার। এ ছাড়া বক্স কালভার্ট রয়েছে ১২ কি.মি., ওপেন ক্যানেল রয়েছে ৬৫ কি.মি., ৩টি পাম্প স্টেশন এবং বৃষ্টির পানি (স্ট্রম ওয়াটার) নিষ্কাশনের জন্য ওয়াসার লাইন রয়েছে ২৫০ কি.মি. কিন্তু দরকার তারও দ্বিগুণ। উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় ড্রেনেজ সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, পানিবদ্ধতার জন্য দায়ী পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনেরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। প্রতিদিন গড়ে ১২ লাখ ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য উৎপাদন হলেও পরিশোধন হয় মাত্র ৬০-৭০ হাজার। বর্ষা মওসুমে এসব বর্জ্য পানির সাথে মিশে গিয়ে আবাস স্থলে ওঠে এবং এসব বর্জ্য ড্রেনেজ লাইনের সাথে একাকার হয়ে পানি সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে করে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ও ঘটে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য ঢাকা ওয়াসা নগরীর ৪৩টি খালের মধ্যে ১৩টি খাল অবৈধ দখল মুক্ত করার কথা বললেও তা শুধু মাত্র কাগজে কলমেই রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় খাল খনন ও পরিষ্কারের যে ঘোষণা আসে তাও আই ওয়াশ মাত্র।
ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন জানান, পানিবদ্ধতা নিরসনে তার সংস্থা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১০ কিলোমিটার নর্দমা পরিষ্কার এবং ২৩৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৪০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ জন্য ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক জেট অ্যান্ড সাকার মেশিনও কেনা হয়েছে।
ডিএসসিসির পূর্ব জুরাইন ও ডিএনডি বাঁধ এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তবে যেসব এলাকায় পাম্প ও ড্রেন বসবে বেদখল হওয়া সেসব এলাকায় প্রথমে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। এরপর পাম্পের মাধ্যমে পানি সেচ দিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলা হবে। ফলে এলাকার পানিবদ্ধতা কমবে বলে মনে করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। যদিও অন্যান্য বছরের মতো এবছরও এই এলাকাবাসীকে পানিবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
মূলত পানিবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। ১৯৮৯ সালে সংস্থাটিকে পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি একাজে যুক্ত হয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব পালন করলেও ঢাকা ওয়াসা তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে এখন কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। ওয়াসার এই ব্যর্থতার দায় যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের ওপরে। এ জন্য দুই সিটি কর্পোরেশন ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা তাদের অধীনে নিতে চায়।
ওয়াসা থেকে জানানো হয়, শুধু ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেই যে ঢাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর পিছনে আরও অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার প্রায় ৬৭টি খালের মধ্যে আমরা ২৬ খালের দেখাশুনা করি। বাকি খালগুলোর অবস্থা ব্যহাল। যে ২৬টি খাল দেখাশুনা ওয়াসা করে সেগুলোও অর্থনৈতিক ও লোকবলের অভবে নিয়মিত খনন ও পরিস্কার করা যাচ্ছে না। এছাড়াও দখলদারদের উৎপাত তো রয়েছেই। শুধু মাত্র ওয়াসার একক চেষ্টায় ঢাকা শহরের এ সমস্যার দূর করা সম্ভব নয়। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য নরগবাসীকেও সহযোগীতা করতে হবে।

http://www.dailysangram.com/post/290730