৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১১:২৩

চালের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রভাব

শুল্ক কমেছে ছয় টাকা, দাম কমেছে এক টাকা

চালের আমদানি শুল্ক ১৮ শতাংশ কমানোর ফলে প্রতি কেজি চালের আমদানি খরচ ছয় টাকা কমেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, আমদানি শুল্ক কমালে চালের দাম কমবে। শুল্ক কমানোর সুবিধা নিয়ে গত এক সপ্তাহে দেশে প্রায় ৬০ হাজার টন চালও আমদানি হয়েছে। কিন্তু খোদ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণেই দেশের বেশির ভাগ এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে মাত্র এক টাকা কমেছে।

গত বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি-বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারে চালের দাম কেজিতে ১ টাকা কমে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি চালের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে। তাঁরা মনে করছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম আরও কমে আসবে।
অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য বলেন, মোটা চালের দর ৪০ টাকার ওপরে গেলেই সাধারণত গরিব মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার প্রতিবছর খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম হাতে নেয়। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তরের গুদামে চাল সংকটের কারণে ওএমএসসহ বেশির ভাগ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।

জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভিয়েতনামের চাল দেশে পৌঁছাবে। বেসরকারি খাতে চাল আমদানির জন্য শুল্ক কমানোয় আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। আশা করছি, চালের দাম আরও দ্রুত কমে আসবে।’ খুব দ্রুত ওএমএস চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি গুদামে ৬ জুলাই পর্যন্ত চাল রয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে চাল ছিল ৪ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টন। ৯ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৬ জুলাই পর্যন্ত ৭১ হাজার টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকার।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেটের চালের খুচরা দোকানগুলোতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার খুব একটা ক্রেতাসমাগম দেখা যায়নি। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীকে ক্রেতার অপেক্ষায় অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো বাজার জমে ওঠেনি। ঈদের বন্ধের পর এখনো বাজারে ক্রেতাসমাগম খুব একটা বাড়েনি। ক্রেতাসমাগম বাড়তে আরও দু-এক দিন লাগবে।

রাজধানীর চালের বড় পাইকারি বাজার বাদামতলীর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজিতে মোটা ও মাঝারি সরু চালের দর দুই থেকে চার টাকা কমেছে। তবে মূলত ভারত থেকে আমদানি করা চালের দাম কমেছে। দেশের বিভিন্ন মোকাম ও হাট থেকে আসা মোটা চালের দাম খুব একটা কমেনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বৃহত্তম চালের পাইকারি বাজার বাবুবাজার-বাদামতলী চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে ভারতীয় চালের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে পাইকারি পর্যায়ে দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দাম আরও কমবে।’
তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে প্রতি কেজি চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা আগে বেশি দামে কেনা চাল বিক্রি করছেন। তাই দাম কমাতে পারছেন না। পুরোনো চাল শেষ হলে তারপর পাইকারি বাজার থেকে তাঁরা চাল কিনবেন। তখন নতুন দামে তাঁরা চাল বিক্রি করতে পারবেন।

এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। আগের দামে কেনা চাল নতুন দামে বিক্রি করতে গেলে লোকসান হবে। তবে অনেকে নতুন দামে চাল কিনতে শুরু করেছেন। এতে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে দাম কমতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1242496