৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১১:১৪

হঠাৎ করেই হাজীদের বিমানভাড়া বাড়ল তিন হাজার টাকা

হজ ফাইটের মাত্র ২০ দিন আগে হঠাৎ করেই প্রায় তিন হাজার টাকা বিমান ভাড়া বাড়িয়েছে বাংলাদেশ বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্স। হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় বিমান ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে সৌদি আরবে প্রদত্ত ‘আইও’ ট্যাক্স ভুল ক্রমে না ধরার অজুহাতে এ টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব।

তারা জানান, হজযাত্রীদের কাছ থেকে নতুন করে অতিরিক্ত এ টাকা আদায় করতে গিয়ে এজেন্সি মালিকদের সাথে হজযাত্রীদের মনোমালিন্য ও অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। এ জন্য হাব নেতারা হজ প্যাকেজে ঘোষিত বিমান ভাড়ায় হজযাত্রীদের পরিবহনের আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ সালের হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এতে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ধরা হয় এক লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা ২১ পয়সা। এর মধ্যে মূল বিমান ভাড়া এক লাখ ১৮ হাজার ৭৩৭ টাকা ৫০ পয়সা, জেদ্দা ডিপারচার ট্যাক্স এক হাজার ৭৫ টাকা, হজ টার্মিনাল সার্ভিস চার্জ ৬৪৫ টাকা, এম্বারকেশন ফি ৫০০ টাকা, এম্বারকেশন ফি’র ওপর ১৫ শতাংশ ট্যাক্স ৭৫ টাকা, এক্সাসাইজ ডিউটি এক হাজার টাকা, সৌদি সরকারের সিকিউরিটি চার্জ ৩২২ টাকা, ট্রাভেল এজেন্ট কমিশন দুই হাজার ১২ টাকা ৫০ পয়সা এবং বিমান ভাড়ার ওপর উৎসে কর ৩৫৬ টাকা ২১ পয়সা। এ ক্ষেত্রে ডলার ৮০ টাকা ৫০ পয়সা এবং সৌদি রিয়াল ২১ টাকা ৫০ পয়সা ধরা হয়। পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখাসাপেক্ষে ১ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ পালনের সম্ভাবনা ধরে ২৪ জুলাই থেকে বাংলাদেশ থেকে হজ ফাইট শুরু হবে। এর মাত্র ২০ দিন আগে ৪ জুলাই হঠাৎ করেই হাজীদের পরিবহনকারী বাংলাদেশ বিমান হজযাত্রী প্রতি ২৮৬৭ টাকা বাড়িয়ে টিকিটের মূল্য ঘোষণা করে। এতে বর্তমানে হজযাত্রী প্রতি এক লাখ ২৭ হাজার ৫৯০ টাকা খরচ হবে। বিমানের চেয়ে আরো ২৩৩ টাকা বাড়িয়ে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স এবার ৪৫ দিনের প্যাকেজ দিয়ে হজ টিকিটের মূল্য ঘোষণা করেছে জনপ্রতি ১ লাখ ২৭ হাজার ৮২৩ টাকা।

জানা যায়, বাংলাদেশ বিমান এ বছর ৬৩ হাজার ৫০০ হাজী বহন করবে। এতে এ হজযাত্রীদের অতিরিক্ত ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। সাউদিয়া ৬৩ হাজার ৬৯৮ জন বহন করলে তারা অতিরিক্ত বিমান ভাড়া আদায় করবে ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এতে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে বিমান ও সাউদিয়ার পকেটে যাবে অতিরিক্ত ৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া সাউদিয়ার শর্ট প্যাকেজের হজ টিকিট ক্রয় করতে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা আরো অতিরিক্ত বকশিস গুনতে হবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় বিমান ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে সৌদি আরবে প্রদত্ত ‘আইও’ ট্যাক্স ভুলক্রমে না ধরার অজুহাতে এ টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে বিমান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকেরা। এ ব্যাপারে হাবের পক্ষ থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গত বৃহস্পতিবার পাঠানো এক চিঠিতে হজ প্যাকেজে ঘোষিত বিমান ভাড়া অনুযায়ী হজযাত্রী পরিবহনের আহ্বান জানিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, হজ প্যাকেজ অনুসারে ইতোমধ্যে হজযাত্রীদের কাছ থেকে বেসরকারি এজেন্সি মালিকেরা বিমান ভাড়া আদায় করেছেন। হজ ফাইটের সন্ধিক্ষণে হজযাত্রীদের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়া আদায় করার সুযোগ নেই। সঙ্গতকারণেই এ বর্ধিত বিমান ভাড়া এজেন্সি মালিকদের বহন করতে হবে, যা ন্যায়নীতির নিরিখে বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য নয়। হজযাত্রী প্রতি বর্ধিত বিমান ভাড়া পরিশোধ করা এজেন্সিদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

চিঠিতে আরো বলা হয়, হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় ডলারের মূল্য ধরা হয়, ৮০ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ বর্তমানে ডলারের মূল্য রয়েছে ৮০ টাকা ২০ পয়সা। এ কারণে বিমান ভাড়া না বাড়িয়ে বরং আরো ৪৫০ টাকা কমানো উচিত।
হাবের মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, তারা ভুল করেছে আর আমাদের খেসারত দিতে হবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। হজযাত্রীরা নতুন করে বাড়তি টাকা দিতে চাইবেন না। এজেন্সি মালিকেরাই বা এত টাকা কোথা থেকে পাবেন। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে এজেন্সি মালিকদের সাথে হজযাত্রীদের মনোমালিন্য হবে। পবিত্র হজ সেবা করতে গিয়ে যা আমাদের কখনো কাম্য হতে পারে না।

বেসরকারি হজ এজেন্সি ইউরো এয়ার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মাওলানা মাহমুদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা প্যাকেজ অনুযায়ী হজযাত্রীদের কাছ থেকে বিমান ভাড়া নিয়েছি। এখন নতুন করে প্রায় ৩ হাজার টাকা আদায় করতে গেলে তাদের সাথে ঝামেলা হবে। অনেকে দিতেও চাইবে না। এতে চরম সঙ্কট সৃষ্টি হবে। আর যদি কোনো হাজী না দেয় তাহলে দেখা যাবে সৌদিতে তার সেবার মান কমে যাবে।

তিনি বলেন, শুধু বিমান ভাড়াই নয়, গত বছরের চেয়ে এ বছর সারা বিশ্ব থেকে ৬-৭ লাখ হাজী বেশি আসবেন। এ কারণে ঘর ভাড়াও বেড়ে গেছে ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া সৌদি আরবে প্রদত্ত বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও পরিবহন ফি (মোয়াল্লেম ফি) বাবদ হজযাত্রীদের কাছ থেকে ২৩ হাজার ৪১৩ টাকা নিলেও এখন ফেরত দেয়া হচ্ছে ২০ হাজার ৩৫১ টাকা। এখানেও হাজী প্রতি ৩ হাজার ৬২ টাকা কম দেয়া হচ্ছে। এভাবে সব কিছুতে ব্যয় বাড়লে হাজীদের সেবার মান কমে যাবে।
বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নাসের নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্স মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হজ প্যাকেজ-২০১৭ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হজযাত্রীদের টিকিট প্রতি প্রায় তিন হাজার টাকা করে বৃদ্ধি করেছে। তিনি বাড়তি টিকিট মূল্য ঘোষণা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরো বলেন, মন্ত্রিসভার পাসকৃত হজ টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করতে হলে ফের মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন; অন্যথায় এটি আইনগত অপরাধ। তিনি অবিলম্বে হজ টিকিটের বাড়তি টাকার ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/233869