৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১১:১৪

এবার বন্যার অজুহাতে সবজির দাম বেড়েছে

‘বলা হয়, বাঙালির হাত তিনটি। ডান হাত, বাম হাত এবং অজুহাত। ব্যবসায়ীরা সবসময় অজুহাতের অপেক্ষায়ই থাকেন। আর প্রকৃতি তাদেরকে সুযোগও করে দেয়।’ কথাগুলো বলছিলেন খিলগাঁও কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা সরকারি কর্মচারী মোর্শেদ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার অজুহাতে সবজির দাম বাড়িয়ে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। সব ধরনের শাকসবজির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, আলু এবং মাছেরও। আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়ার প্রেক্ষিতে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরা বিক্রেতারা দাম এখনো কমাননি। তাদের অজুহাত, বেশি দামে কেনা চাল কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই।

গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, শাকসবজির সরবরাহ স্বাভাবিকই আছে। তবে দাম বেশি। ৪০ টাকার বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকার করলা-ঢেঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, পটোল প্রভৃতি ৩০-৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজারে গতকাল প্রতিটি লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, জালি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলার হালি ২৪ থেকে ৩০ টাকা, বরবটির কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ থেকে ৯০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং কচুমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করতে দেখা যায়। আলুর কেজি ২ টাকা বেড়ে হয়েছে ২২ থেকে ২৪ টাকা।

সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কথা উল্লেখ করে মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা সোলায়মান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বন্যার কারণে সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সবজির আমদানি কম। তিনি বলেন, আমরা কম দামে কিনতে পারলে কম দামেই বিক্রি করি। বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক খুচরা বিক্রেতা দোকান খুলতেই সাহস পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজ গতকাল ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হয়। বিক্রেতারা জানান, মওসুমের শেষের দিকে এসে মজুদদারদের মজুদ ফুরিয়ে আসায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তবে রসুনের দাম গতকাল কিছুটা কমেছে বলে জানান বিক্রেতারা। খুচরা বাজারে গতকাল দেশী রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

মাছের বাজারে গিয়ে চোখে পড়ে চাষের, নদীর এবং সামুদ্রিক মাছের ছড়াছড়ি। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক বাড়তি। এক কেজি গুঁড়া চিংড়ির দাম ৫৬০ টাকা। মাঝারি আকারের চিংড়ির কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা দরে। গুইলশা মাছের কেজি হাঁকা হচ্ছে ৭০০ টাকা। রূপচাঁদা, বাইন, বেলে, পাবদা, কোরাল প্রভৃতি তো কেবলই বড়লোকের খাবার। চাষের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। কমের মধ্যে পাংগাসের কেজি ১৪০ থেকে ১৬০, মৃগেল ১৫০ থেকে ১৮০, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ এবং চাষের কৈ পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়ার কারণে পাইকারিতে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা কমলেও খুচরায় এর তেমন প্রভাব পড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা এখনো মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৬ এবং সরু চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের চালবিক্রেতা আবুল হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, শুনেছি পাইকারিতে দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমার দোকানে এখন যে চাল আছে সেগুলো আগের কেনা। বেশি দামে কিনতে হয়েছে বলে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে নতুন দামে কেনার পর তিনিও দাম কমাবেন বলে জানান আবুল হোসেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/233871