৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১১:০৮

পৃথিবীতে ফ্যাসিজম টিকে আছে আজো

তানভীর আহমেদ

৭ মে ২০১৭ সালে ইউরোপে বেশ ঘটা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের স্মরণে ভিক্টরি ডে পালিত হলো, জার্মানির আত্মসমর্পণ ও পরাজয়ের ৭২ বছর উদযাপিত হলো। ফ্রান্সের নরম্যান্ডি ও রাশিয়ার মস্কোতে বেশ জমজমাট সামরিক কুচকাওয়াজের মধ্যে দিনটি পালিত হয়েছে।

১৯৪৪ সালের ৬ জুন উত্তর ফ্রান্সের নরম্যান্ডি শহরে মার্কিন ও ব্রিটিশ ছত্রীসেনাদের অবতরণের মধ্য দিয়ে জার্মান নাৎসিবাহিনীর পরাজয় ও পশ্চাৎ অপসারণ শুরু হলো। যুদ্ধের মোড় ঘুরতে শুরু করে। এক বছর পর ৭ মে ১৯৪৫ সালে হিটলারের আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে জার্মানির পরাজয় ঘটেছিল। যদিও জাপানের পরাজয় ঘটতে একটু সময় লেগেছিল। জাপানের পরাজয় ঘটে ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালে।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মিত্রশক্তি জয় লাভ করে। ইতালির পতন ঘটে আরো এক বছর আগে ৪ জুন ১৯৪৪ সালে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয় দু’টি শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধজোটের মধ্যে। এক পক্ষে অর্থাৎ মিত্রপক্ষে ছিল গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া (সোভিয়েত ইউনিয়ন) ও যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দিকে, অক্ষশক্তিতে ছিল জাপান, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগাল।
১৮৭০ সালে ইউরোপের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক বিসমার্কের নেতৃত্বে প্রুশিয়ার একত্রীকরণ ঘটে, যা ইতিহাসে জার্মান পুনঃএকত্রীকরণ নামে খ্যাত। বিসমার্ক খণ্ডিত জার্মান অঞ্চলগুলোকে একত্র করে আধুনিক জার্মানির গোড়াপত্তন করেছিলেন। সে জন্য বিসমার্ককে বলা হয় ‘আধুনিক জার্মানির স্থপতি’।
ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, ১৯১৮ সালের প্রথম মহাযুদ্ধের পর যে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে, তার মাঝেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল।
প্রথম মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি ও রাশিয়ার জোটের বিরুদ্ধে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও তুরস্কের মধ্যে। যুদ্ধে দ্বিতীয় পক্ষের পরাজয় ঘটে। ভার্সাই চুক্তিতে জার্মানির ওপর ক্ষতিপূরণ এবং অনেক অন্যায্য শর্ত চাপিয়ে দেয়া হয়।
জার্মান চ্যান্সেলর হিন্ডবার্গ মিত্রশক্তির অন্যায্য শর্ত মেনে নিয়ে জার্মানির জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি করেছেন বলে হিটলার ও তার নবগঠিত ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট পার্টি বা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল প্রচার করতে থাকে। এই ভার্সাই চুক্তির অন্যায্য শর্তগুলোকে পুঁজি করে জার্মানিতে অ্যাডলফ হিটলারের উত্থান ঘটে।
হিটলার জার্মান জাতীয়তাবাদ ও জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্বের আর্য কৌলীন্যকে পুঁজি করে উগ্র জাতীয়তাবাদী মতবাদকে নাৎসিবাদের নামে জনপ্রিয় করে তোলেন। অন্য দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইতালিতে মুসোলিনি তার ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দর্শনকে জনপ্রিয় করে ক্ষমতায় আসেন ১৯২৯ সালে।
প্রাচীন রোমের ঐতিহ্য শৌর্ষবীর্য ফিরিয়ে আনার কথা বলে তার ফ্যাসিস্ট পার্টি বা জাতীয় সংগ্রামী দলকে ক্ষমতায় আনেন। জার্মানির নাৎসি ও ইতালির ফ্যাসিস্ট পার্টি উভয়ই উগ্র জাতীয়তাবাদী ও জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল।
নাজিবাদের বা নাৎসিবাদের জনক হলেন আলফ্রেড রোজেনবার্গ। তার বিখ্যাত বই ‘ÔThe Myth of Twentich CenturyÕ. ’. বইতে তুলে ধরেছেন নাৎসিবাদের দর্শন। তাকে বলা হয় নাৎসিবাদের ‘পয়গম্বর’। অন্য দিকে ভিলফ্রেড প্যারোটো আলোচিত সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদ। তিনি তার বই Mind and Society তে ফ্যাসিজমের রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরেন। সে জন্য তাকে বলা হয় ফ্যাসিজমের প্রফেট বা ‘পয়গম্বর’। তিনি মার্কসের শ্রেণিসংগ্রামের তত্ত্বকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, শ্রেণিসংগ্রাম নয়। পৃথিবীর ইতিহাস হলো অভিজাতদের ইতিহাস। আরো বলেছেন ÔHistory is the graveyard of elite classÕ. ইতিহাস হলো অভিজাতদের সমাধিক্ষেত্র।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে ইউরোপে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনেতিক মন্দাভাব দেখা দেয়। মন্দাভাব থেকে ফ্যাসিজম ও নাৎসিইজমের জন্ম হয়। ইউরোপে প্রথম মহাযুদ্ধের শেষে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। যুদ্ধে পরাজয় জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাকে আরো উসকে দেয়।

বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশদের কর্তৃত্ব, প্রভুত্ব, সর্বোপরি বাজার দখল ও বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়। মূলত প্রথম মহাযুদ্ধের অন্তর্নিহিত কারণগুলো থেকেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। বিশ্বের কাঁচামাল, প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজসম্পদ ও দাস ব্যবসায়ের ওপর ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে নিরপেক্ষ ছিল। ৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে জাপান হাওয়াইয়ের পার্ল হারবারে মার্কিন নৌঘাঁটিতে হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র এতে ুব্ধ হয়ে নিরপেক্ষতার অবসান ঘটিয়ে মিত্র পক্ষে যোগ দেয় এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শুরুতে সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপের মধ্যে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরে ১৯৪১ সালের ২২ জুন জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে চুক্তি ভেঙে যায়। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়। নভেম্বর ১৯৩৯ সালে রাশিয়া পোল্যান্ড আক্রমণ করে দেশটির পূর্বাঞ্চল দখল করে নেয়।
১৯৪০ সালে রাশিয়া বাল্টিক রাষ্ট্র এস্টোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া দখল করে নেয়। জার্মানির অগ্রাভিযানের সুযোগ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভিন্ন অঞ্চল দখল ও অঙ্গীভূত করে নেয়। কিন্তু অস্ত্র কিংবা সৈন্য দিয়ে লজিস্টিকস দিয়ে কোনো সহায়তা জার্মানিকে করেনি। এতে হিটলার ক্ষুব্ধ হয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন।

অক্ষশক্তির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। জাপান জার্মানিকে সমন্বিতভাবে সহযোগিতা দিতে পারেনি। তবুও ১৯৪১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে অনাক্রমণ চুক্তি করে বসে। জাপান, জার্মানি ও ইতালির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসান ঘটে। অক্ষশক্তি পরাজিত হয়। মিত্রশক্তি জয়লাভ করে পৃথিবীর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
লিগ অব নেশনসের ধারাবাহিকতায় জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করে বিজয়ী শক্তি। প্রায় দুই কোটি লোকের মৃত্যু অনাহার ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিল। বিশ্ববাসী আশা করেছিলÑ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে; হানাহানি সঙ্ঘাতের অবসান হবে। বাস্তবে তা হয়নি। বরং বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে; পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার ঘটেছে। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তার চেয়ে আরো বহু গুণ শক্তিশালী পরমাণু বোমা এখন মজুদ আছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন, রাশিয়ার কাছে। ভারত, ইসরাইল, উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের কাছেও আছে পরমাণু অস্ত্র।
মহাযুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে আমেরিকা। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মানবজাতিকে ধ্বংসের জন্য মজুদ আছে হাইড্রোজেন ও নিউট্রন বোমা।
প্রতি বছরই প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে চলছে শক্তিশালী দেশগুলো। স্টকহোম পিস ইনস্টিটিউটের মতে, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির ১৩ শতাংশ ব্যয় করেছে সামরিক খাতে। চীন করেছে জিডিপির ৪.৫ শতাংশ, রাশিয়া ৪.৮ শতাংশ, ভারত ৫ শতাংশ ও পাকিস্তান ৪ শতাংশ। অথচ পৃথিবীর ১০০ কোটি লোক চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। সে দিকে তাদের কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই।
সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, উপসাহারা অঞ্চলের বেনিন, টোগো, শাদ, নাইজার দুর্ভিক্ষপীড়িত। খরায় সেখানে ফসলহানি হচ্ছে। সে দিকে জাতিসঙ্ঘের তেমন দৃষ্টি নেই।
জার্মানির পাপের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হলো ফিলিস্তিনে আরবদের ওপর। ইহুদি নিধন করল হিটলারের জার্মানি; অথচ খেসারত দিতে হলো ফিলিস্তিনিদের। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া হলো জায়নবাদী ইসরাইল রাষ্ট্রকে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর পৃথিবীতে দেশে দেশে সামরিক শাসন চাপিয়ে দেয়া হলো। কমিউনিজম ঠেকানোর নামে দেশে দেশে সামরিক জান্তাদের মদদ জোগাল যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ। পিনোচেট, নরিয়েগা, দুভালিয়েব, বাস্তিতা, সুহার্তো, রেজা শাহ পাহলভি ও মার্কোসের মতো সামরিক বেসামরিক স্বৈরাচারীকে মদদ দেয়া হয়। একপর্যায়ে আফ্রো-এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার ১০০টি দেশে সামরিক শাসন দেখা গেল। তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ফ্যাসিস্ট শাসন। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে পদদলিত করা হলো।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্নায়ুযুদ্ধের অবসানে পৃথিবীবাসী আশা করেছিল, এবার বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু হলো না। বরং ২০০১ সালে নাইন-ইলেভেনের পর পৃথিবীতে নতুন করে যুদ্ধের পদধ্বনি শুরু হলো। মার্কিন নেতৃত্বে কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলো। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ৫৮টি দেশের জোট আক্রমণ করল আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়া। আফগানিস্তানে নিহত হলো পাঁচ লাখ, ইরাকে ১০ লাখ ও সিরিয়ায় সাত লাখ মানুষ। ধ্বংস হলো প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান। সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হলো আধুনিক মিসরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসিকে, যেভাবে ১৯৫৩ সালে সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র উৎখাত করেছিল ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ড. মোসাদ্দেককে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে মিসরের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে। এর বিপরীতে, নির্লজ্জভাবে স্বাগত জানানো হলো সেনাশাসক জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ সিসিকে। মিসরবাসীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হলো ভয়াবহ ফ্যাসিজম; যে কায়দায় ১৯৯১ সালে আলজেরিয়ায় ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্টকে নির্বাচিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় বসতে দেয়নি ক্ষমতালোভী জান্তা। জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হলো সামরিক শাসন।
এভাবে পাশ্চাত্য নীরব সমর্থন জোগাচ্ছে স্বৈরশাসনকে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকারের বড় বড় বুলি এখানে অকার্যকর। তাই এ ক্ষেত্রে তারা নীরব। বুশ, ব্লেয়ার, ডিক চেনি যেভাবে আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা চালিয়েছেন, তাদের বর্বরতা হিটলার, মুসোলিনি, তোজো, ফ্রাংকোকে হার মানিয়েছে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর ওপর সামরিক শাসন ও বেসামরিক স্বৈরশাসক চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, পেরু, চিলি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, এল সালভেদর, হন্ডুুরাস, গুয়েতেমালা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিসরের জনগণ তাদের হারিয়ে যাওয়া, গুম হওয়া স্বজনদের খুঁজছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মানুষ রাজপথে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা হত্যা করেছে পৃথিবীর জাতীয়তাবাদী নেতাদের; ইরানের ড. মোসাদ্দেক ও ড. ফাতেমি, ঘানার নত্রুমা, চিলির আলেন্দে, কঙ্গোর প্যাট্রিক লুমুম্বা ও তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারেসকে। এটা ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে।

ফ্যাসিজমের পরাজয়ের ৭২ বছর পরও পৃথিবী ওদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি। দেশে দেশে ফ্যাসিস্টরা আছে বলে আমাদের বারবার বলতে হয় আমরাও মানুষ। কথায় কথায় হিটলার, মুসোলিনি তোজোকে গালি দিলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের আচরণ ফ্যাসিস্টদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কোথাও বৃহৎ শক্তি বা আঞ্চলিক শক্তির সহায়তায় ফ্যাসিজম টিকে আছে। যেমন মিসরে আমেরিকা ও ইসরাইলের সমর্থনে জান্তার সেনাশাসন টিকে আছে। কোনো কোনো দেশে আঞ্চলিক শক্তির সহায়তায় গণতন্ত্রের বুলি আউড়ানো দলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার টিকে আছে।

পৃথিবীতে অনেক দেশে ফ্যাসিজম বহাল তবিয়তে টিকে আছে। মার্কিন শ্রেষ্ঠত্বের নামে পৃথিবীতে নব্য ফ্যাসিবাদ টিকে আছে। সেই সাথে জায়নবাদ, বর্ণবাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদ নতুন উদ্যমে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/233781