বন্যাকবলিত চকরিয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ।
৬ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৬

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়িয়া ঢলে সুরমা-কুশিয়ারা তীরে বন্যা

সপ্তাহের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করবে যমুনা


ভারী বর্ষণে ও ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়িয়া ঢলের পানিতে সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তীরে বন্যার অবনতি হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এ দিকে সারা দেশে কিছুদিন বিরতির পর আবারো ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টার বর্ষণে নিচু এলাকায় পানি উঠে গেছে। জলাশয়গুলো প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য জলাবদ্ধতা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী শনিবার থেকেই বৃষ্টি কিছুটা হ্রাস পাবে। কিন্তু দু’দিন বিরতি দিয়ে আগামী সোমবার থেকে আবারো মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ শুরু হতে পারে। মওসুমি বায়ু বাংলাদেশের আকাশে বেশ সক্রিয়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। মওসুমি বায়ুর অক্ষ বর্তমানের বাংলাদেশের মধ্যভাগ অতিক্রম করে যাচ্ছে। এসব কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হচ্ছে।
গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশের সর্বত্রই মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে ২৭১ মিলিমিটার। বাংলাদেশের আকাশে মওসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় রয়েছে বলে প্রবল বর্ষণে দেশের সর্বত্র জমে গেছে পানি। অপর দিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মওসুমি বায়ু মাঝারি থেকে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। ফলে আরো দু’দিন জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যেতে থাকবে এবং মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে থাকবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে ভারী বর্ষণের পানি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে আসছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী হয়ে এ পানি সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। অপেক্ষাকৃত অগভীর হওয়ার কারণে এ দুই নদী বেশি পানি ধারণ করতে পারে না। ফলে সহজেই এ দুই নদীর তীরে উপচে পড়ে। এ মুহূর্তে দেশের বাইরের পানি ও অভ্যন্তরীণ বর্ষণে সুরমা ও কুশিয়ার নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যাপরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে, এ দুই নদীর পানি বর্তমানে স্থিতিশীল থাকলেও আবারো বাড়বে এবং বন্যার অবনতি ঘটবে।
অপর দিকে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এ এলাকার অন্যান্য উপনদীর পানি এসে যমুনায় পড়ছে। যমুনা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে বাহাদুরাবাদ ঘাটে ২২ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ৩৭ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ৫৩ সেন্টিমিটার এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্যা বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার, সুরমা দিরাই পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা শেরপুর-সিলেট সীমান্তে ২২ সেন্টিমিটার, সুরমা শেওলা পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জ সীমান্তে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।
গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত সুরমা নদী কানাইঘাটে ৭২ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা অমলশীদে ৭৮ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৬৮ সেন্টিমিটার, শেরপুর-সিলেট সীমান্ত পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার, হালদা নদী নারায়নহাটে ১০ সেন্টিমিটার, মাতামুহুরী নদী চিড়িঙ্গায় বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা নদীর পানি কয়েক দিন যাবৎ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে দেশীয় পানি প্রবাহের সাথে সীমান্তের ওপারের পানি এসে যোগ হচ্ছে। ফলে এ দুই নদীর পানি আরো বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া গঙ্গা-পদ্মায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তি পানি যোগ হবে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে ২৭১ মিলিমিটার। টেকনাফে ২২৩ মিলিমিটার, কুতুবদিয়ায় ১৯৭ মিলিমিটার, ফেনীতে ১৪১ মিলিমিটার, পটুয়াখালীতে ১১৩ মিলিমিটার, খুলনায় ৬৪ মিলিমিটার, গোপালগঞ্জে ৬৪ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ৮০, চাঁদপুরে ৬৭ মিলিমিটার, বগুড়ায় ৭৮ মিলিমিটার, মংলায় ৭৪ মিলিমিটার, খেপুপাড়ায় ৪৬ মিলিমিটার, মাদারীপুরে ৬৪ মিলিমিটার, ফরিদপুরে ৫৪, ঢাকায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

ভারী বর্ষণের কারণে গতকাল বুধবার বাতাসে এত বেশি আর্দ্রতা ছিল যে যথেষ্ট ঠাণ্ডা অনুভূত হতে থাকে সকাল থেকে। খুব কম বাসা-বাড়িতে বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরেছে গতকাল। আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে সারাদিনই বাসার ফোর ঘামতে শুরু করে। সারাদিন সূর্যের আলো না থাকায় কাপড় শুকানো যায়নি। শুকনো কাপড়-চোপড়গুলো বেশ ভেজা ভেজা মনে হয়েছে, পরিধান করে আরাম পাওয়া যায়নি ভেজা ভেজা অনুভূতি লাগায়। গতকালে বিকেলে ৮৪ শতাংশ সকাল ৯টায় রাজধানীতে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।

কক্সবাজার, কক্সবাজার দক্ষিণ ও চকরিয়া সংবাদদাতা জানান, চকরিয়ার বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে প্রায় পুরো পেকুয়া উপজেলা। এ ছাড়া কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। চকরিয়া ও পেকুয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বেশি কষ্টে আছে গরিব পরিবারগুলো। এসব পরিবারে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। সংসদ সদস্য হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছ চকরিয়া ও পেকুয়াকে অবিলম্বে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে জরুরি সাহায্যের জন্য সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
চতুর্থ দিনের মতো ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে বাড়ছে পাহাড়ি ঢলের পানি। এদিকে মঙ্গলবার সকালে অতি বৃষ্টিপাতে পাহাড়ের মাটি ধসে চাপা পড়ে মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা গ্রামের জুমপাড়ার মনোয়ার আলম (৩৮) মারা গেছেন। বাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে তিনি মাটিচাপা পড়েন।

এ ছাড়া ঢলের পানিতে ডুবে স্কুলছাত্রী উম্মে সালমা (৭) মারা গেছে। সে ইসলামাবাদ পূর্ব ইউছুপেরখীল এলাকার আলী আব্বাসের মেয়ে ও ইউছুপেরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি উপচে পড়ে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা ও শীলখালী ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা। সড়ক প্লাবিত হয়ে বন্ধ রয়েছে চকরিয়া-পেকুয়া সড়কে যান চলাচল।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ সব সড়ক। চকরিয়ার সাথে মহেশখালী, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলায় যেতে মগনামা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। শত শত গ্রামে পানি উঠে গেছে। চকরিয়া শহরক্ষা বাঁধ ও মাতামুহুরী ব্রিজ হুমকির মুখে রয়েছে, যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলার প্রধান নদী মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর তীরের ভাঙন আরো তীব্র হয়েছে। বুধবার মাতামুহুরী নদীর ঘুণিয়া এলাকায় ছয়টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বন্যায় চকরিয়া পৌরসভার কাছে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে করুণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কায়সার জানান, ইউনিয়নের সব এলাকা তলিয়ে গেছে। উঁচু স্থানে খিচুড়ি রান্না করে রিকশা ভ্যানে করে বিতরণ করা হচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ সামাল দেয়া যাবে বুঝতে পারছি না। জরুরি সাহায্য দরকার তার ইউনিয়নের জন্য।

একই অবস্থা হয়েছে পূর্ব বড়ভেওলা, হারবাং কাকারা ও কোনাখালী ইউনিয়নে। পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে খলিল উল্লাহ চৌধুরী নামে একজন তরুণ নেতা গত দুই দিন ধরে খিচুড়ি বিতরণ করছেন এলাকায়। দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় সাহায্য খুবই কম। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানান, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষেত্রপাল মন্দির এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন তীর সংরক্ষণ কাজ যথাসময়ে (জুন মাসে) শেষ করতে পারেনি। নদীতে ব্লক বসাতে দেরী করায় গত মঙ্গলবার ওই এলাকার অন্তত ছয়টি বসতঘর নতুন করে মাতামুহুরী নদীতে চলে গেছে। তিনি জানান, ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় একদিকে বৃষ্টির পানি অন্য দিকে পাহাড়ি ঢলে পৌরসভার প্রতিটি এলাকায় ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে এসেছে। মজিদিয়া মাদারাসা পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি ঢুকে ভোরে পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ এলাকার শতাধিক বসতঘর ডুবে গেছে।
সরেজমিন বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, তিন দিন ধরে বানের পানিতে ভাসছেন বন্যাদুর্গত মানুষগুলো। অনেক স্থানে বাড়ির চালা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকায় কেউ সড়কের ধারে, উঁচু টিলায় এবং বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। বেশি বেকায়দায় পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। কয়েক ফুট উচ্চতায় বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তিন দিন ধরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ১৮ ইউনিয়নের সাথে সদরের। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ এখনো নৌকায় চেপে যাতায়াত করছেন। লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা কবির আহমদ (৬৫) বলেন, বন্যার পানি বাড়ির চালা পর্যন্ত উঠেছে।

বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও ডুলাহাজারার চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, চার দিনে টানা বৃষ্টিতে এলাকার বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো তলিয়ে যাচ্ছে।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানিয়েছেন, সোমবার সকাল থেকে তার ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, তার ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী এলাকা তলিয়ে গেছে। কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কি ইকবাল হোছেন জানান, টানা বৃষ্টিতে তার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের খিলছাদক, ভরন্যারচর, বানিয়ারকুম গ্রামের মানুষ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুজিবুল হক জানান, মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চকরিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র বশিরুল আইয়ুব, ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকছুদুল হক মধু ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম জানান, তাদের এলাকার অন্তত ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে গত তিন দিন ধরে রান্নাঘরে আগুন জ্বালাতে পারছে না। মঙ্গলবার রাতে চকরিয়ার মাতামুহুরী তীরবর্তী রামপুরা, কুরুইল্যার কুম, বিবিরখিল, গোবিন্দুপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।

চিরিঙ্গা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার জন্য সরকারি দলের অনেক নেতা দায়ী করছেন তাদের দলের প্রভাবশালী এক নেতাকে। এই নেতা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগর ঘোনা পালাকাটায় মাতামুহুরী নদীতে বেআইনিভাবে বাঁধ দিয়ে মৎস্য প্রকল্প তৈরি করেছেন। এ অবস্থার জন্য এলাকার মানুষ চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমকে দুষছে। তিনি ওই বাঁধটি দিয়ে বিশাল মৎস্যঘের নির্মাণ করেছেন। সাবেক এক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জাফর আলমের অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এই এলাকায় আওয়ামী লীগের ইতিবাচক সব কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম জানান, বন্যা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের প থেকে শুকনো খাবারের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে কাছে জানানো হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, চকরিয়ার বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানিয়েছেন, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষেত্রপাল মন্দির এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন তীর সংরক্ষণ কাজ যথাসময়ে (জুন মাসে) শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নদীতে ব্লক বসাতে দেরী করায় গত মঙ্গলবার ওই এলাকার পানির প্রবল ধাক্কায় অন্তত ছয়টি বসতঘর নতুন করে মাতামুহুরী নদীতে তলিয়ে গেছে। মজিদিয়া মাদারাসা পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে গতকাল ভোরে পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ এলাকার শতাধিক বসতঘর ডুবে গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার স্টেশনের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, রোববার সকাল থেকেই ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। এটি মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অতি ভারী বর্ষণ হিসেবে অব্যাহত ছিল। রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩১ মিলিমিটার। এভাবে বর্ষণ আরো দু’দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
সদরের জালালাবাদ রাবার ড্যাম সংলগ্ন বিরাট এলাকা এখন ঝুঁকির মুখে। প্রবল স্রোতে স্থানীয় মনজুর মেম্বারের ঘাটা পয়েন্ট ভেঙে গেছে। ভাঙন এলাকা দিয়ে ঈদগাঁও খালের বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব লরাবাক, ছাতিপাড়া এবং বৃহত্তর পালাকাটা ও বাহারছড়া এলাকার শত শত ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। ডুবে গেছে ওই ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ড এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের তেলী পাড়া ও মাছুয়াপাড়ার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা। জালালাবাদের রাবার ড্যাম এলাকার ভাঙন এলাকাটি শিগগিরই মেরামতের ব্যবস্থা করা না হলে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক শ’ পরিবার নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছে স্থানীয়রা।
জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, ঈদগাঁও বাজার ফরাজীপাড়া সড়কের পূর্ব লরাবাগের হাফেজখানা পয়েন্ট দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ভেঙে গেছে জালালাবাদের পালাকাটা এলাকায় অনেকের বসতবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

উপকূলীয় জনপদ পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী গ্রাম জোয়ারের পানিতে আবারো তলিয়ে গেছে। ইসলামপুর, চৌফলদণ্ডী এবং ভারুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল এখন পানির নিচে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীর পানি ঢুকে তার ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতঘর প্লাবিত হয়েছে। বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে গতকাল সকাল থেকে পানি প্রবাহ বেড়েছে। এ অবস্থার কারণে নদীর শাখা খাল হয়ে তার ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদসহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এতে দুই ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার চিংড়িজোনের শত শত চিংড়ি প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমান জানান, ভারী বর্ষণে পুরো জেলার অধিকাংশ নিম্নœাঞ্চল ডুবে গেছে। সদরের বৃহত্তর ঈদগাঁও এলাকায় প্রায় দেড় শ’ ফিট বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। চকরিয়ার মাতামুহুরীর নদীর পানি ৯৬ সেমির উপরে বেড়েছে। প্লাবিত এলাকার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পানি কমলে সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা জানান, জেলায় বন্যাপরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলার ২০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। রমজানের দীর্ঘ ছুটির পর গত পয়লা জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হলেও বন্যাকবলিত এলাকায় শিক্ষাকার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ৬০ হাজার ছাত্রছাত্রী। আজ (৬ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা উপদ্রুত এলাকার ৪৮টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হচ্ছে না। বিগত এক মাসের স্থায়ী বন্যায় দিন দিন বাড়ছে জনদুর্ভোগ। স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে অভাব দেখা দিয়েছে। পরিবারপরিজন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই দুর্গত মানুষের দিন কাটছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় নিমজ্জিত একাধিক গ্রামীণ কঁাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার বড়লেখার ৩টি, জুড়ি উপজেলার ৬টি, কুলাউড়া উপজেলার ৭টি, রাজনগর উপজেলার ৪টি, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৪টিসহ ৫টি উপজেলার মোট ২৪টি ইউনিয়নের দুই লাখের অধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আবদুল আলীম গতকাল রাজনগর উপজেলার বন্যায় নিমজ্জিত বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, সদর উপজেলায় ৪, কুলাউড়ায় ৪৪, বড়লেখায় ৭০, জুড়িতে ২০, রাজনগরে ১৪টিসহ মোট ১৫২টি বিদ্যালয়ের ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রী কাস করতে পারছে না।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) আবু সাইদ মো: আবদুল ওয়াদুদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বানের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রী ৬ জুলাইর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কারণে পৃথক সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।
বিয়ানীবাজার (সিলেট) সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সিলেট জেলার আটটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত। দিন দিন পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লøাবিত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে বানভাসী মানুষের সংখ্যা। প্লাবিত প্রায় প্রতিটি গ্রামের সাথে উপজেলা ও জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হলোÑ বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ। এ ছাড়া দণি সুরমা ও কানাইঘাট উপজেলা আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় সড়কগুলো তিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ৪৬৬টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪৫টি পরিবারের ৬২৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন।

জেলা শিা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যার কারণে সিলেটের ২০৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২১টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্কুলের দ্বিতীয় সাময়িক পরীা ও টেস্ট পরীা স্থগিত করা হয়েছে।
সিলেটে জেলা দুর্যোগব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়। দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সভায় উপস্থিত ছিলেন। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের দাবির পরিপ্র্রেেিত নতুন করে আরো ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করার ঘোষণা দেন মন্ত্রী।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: শহীদুল ইসলাম চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যাপরিস্থিতি সার্বণিক নজরদারিতে রেখেছে জেলা প্রশাসন।

বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় বান্দরবানের নি¤œাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। লামা উপজেলায়ও বন্যাপরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নি¤œাঞ্চল থেকে পানি নামলেও লোকজন এখনো বাসায় ফিরতে পারেনি। ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে দুই শ’র বেশি পরিবার অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণসহায়তা দেয়া হয়েছে। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে লামায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। কিছু শুকনো খাবার ও খিচুড়ি ছাড়া দুর্গতদের মাঝে প্রয়োজনীয় ত্রাণ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দুর্গতরা।

পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম জানান, এক মাসের ব্যবধানে দুইবার বন্যা হওয়ায় দুর্গত মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ দিকে পাহাড়ধসের কারণে বান্দরবানের সাথে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সড়কের ওয়াই জংশনসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ওপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে। অন্য দিকে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক ও বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের কয়েকটি স্থানে পানি ওঠায় এ দু’টি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বান্দরবান শহরের ওয়াপদা ব্রিজ ইসলামপুর আর্মিপাড়া এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, দুর্গতদের জন্য ত্রাণ বিভাগ থেকে তৎক্ষণিক ২৩ মে. টন খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে যমুনা নদীতে পানি বাড়লে তা বুধবারও বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বাড়ার ফলে জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার পাঁচ শতাধিক মানুষ পানিবন্দী এবং জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি (চালুয়াবাড়ী, বোহাইল, চন্দনবাইশা, কর্ণিবাড়ী, কামালপুর ও কাজলা) যমুনা নদীর চর এলাকায় অবস্থিত। কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টি ও উজানের পানিতে এসব ইউনিয়নের ১৭০ হেক্টর জমির পাট, ৩০ হেক্টর আউশ, ৫ হেক্টর আমন বীজতলা ও ৩ হেক্টর জমির শাকসবজি নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া কামালপুর ইউনিয়নের দুই বাঁধের মাঝের ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, জেলা পরিষদ সদস্য শাহাদারা মান্নান ও উপজেলা কৃষি অফিসার শাহাদুজ্জামান পানিবন্দী এলাকা পরিদর্শন করেন।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলাসহ জেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী গ্রামে শনিবার সকালে দু’টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পয়েন্টে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিপদসীমার ১০ সে:মি: উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে।
পাউবো সূত্র জানায়, ভারত গজল ডোবা ব্যারেজের বেশির ভাগ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের বেশির ভাগ গেটই খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে তিস্তার পানিতে পাটগ্রামে বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকার ১০ গ্রামের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজ তলাসহ সবজি তে ডুবে গেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু জানান, চর এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। দক্ষিণ ধুবনী গ্রামে বাঁধের দু’টি স্থানে ভেঙে ওই এলাকায় বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ জানান, ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দোয়ানীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফিজুর রহমান জানান, আমরা বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করছি। দুর্গত এলাকায় ত্রাণসমগ্রী পৌঁছেনি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/233361