৬ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১২:৪০

চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার কাণ্ড!

চট্টগ্রামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাঁর সহকর্মী এবং একটি হোটেলের চার কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। পরিদর্শক পদমর্যাদার এই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছেন। এর আগে তিনি সদরঘাট ও খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন।

গত সোমবার রাতে নগরের আগ্রাবাদের একটি হোটেলে ওই পাঁচজনকে পরিদর্শক মাইনুল মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার তদন্তে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পরিদর্শক মাইনুল এর আগেও আরেকটি ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হন। গত বছরের নভেম্বর মাসে তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উর রহমান গতকাল বুধবার রাত ১০টায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হোটেলের ভিডিও ফুটেজে ওসি মাইনুলকে এলোমেলো অবস্থায় দেখা গেছে। তিনি পুলিশসহ কয়েকজন মারধরও করেন। এ ব্যাপারে ডবলমুরিং থানার ওসি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছেন। আরও তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আগ্রাবাদ এলাকার হোটেল সেন্ট মার্টিনের ৪১৫ নম্বর কক্ষে ওঠেন মাইনুল। তিনি ওই সময় হোটেল কর্মচারীদের কাছে নেশাজাতীয় পানীয় চান। কিন্তু দিতে দেরি হওয়ায় হোটেলের চারজন কর্মচারীকে মারধর শুরু করেন। এই হোটেলে অবস্থান করা বিদেশি কয়েকজন নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করতে তখন সেখানে যান ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আলম। হোটেলে গোলমাল হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় তাঁকেও মাইনুল মারধর করেন। একপর্যায়ে এসআই সৈয়দ আলম বিষয়টি ডবলমুরিং থানার ওসি এবং নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উর রহমানকে মুঠোফোনে জানান। পরে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন ডবলমুরিং থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন। ততক্ষণে মাইনুল তাঁর গাড়িচালককে নিয়ে হোটেল থেকে চলে যান।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। এসআই সৈয়দ আলম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

পুলিশসহ হোটেল কর্মচারীদের মারধর করার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন রাতে হোটেলে কী হয়েছিল মনে নেই, যা হওয়ার হবে।’
এর আগে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ সদরঘাট থানার ওসি থাকার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশবিষয়ক উপসম্পাদক আবদুর রহিম চট্টগ্রাম আদালতে মাইনুলসহ দুই পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজত মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। ১৯ মার্চ নগরের একটি হোটেলে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ছাত্রলীগ নেতা ও তাঁর স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে মাইনুলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরে তদন্ত শেষে একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওই ঘটনাকে ভুল-বোঝাবুঝি উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এরপর নভেম্বর মাসে তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হয়। কিন্তু তাঁকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1240181