৬ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৭

খুলনায় অপহরণ আতঙ্ক

পর পর অপহরণের ঘটনা উদ্বেগজনক : র্যা ব

ঢাকার শ্যামলী থেকে অপহৃত কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় ফুলতলা থানার নিকটবর্তী অভয়নগর এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে র্যা্ব-৬ এর টিম ফরহাদ মজহারকে নিয়ে ফুলতলা থানায় খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে। এ ঘটনার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপহৃত বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) লিয়াজোঁ অফিসের অডিট বিভাগের কর্মকর্তা রতন কুমারকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলার ফুলতলা থানা এলাকা থেকে রতন কুমারকে গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করে। এদিকে নগরীর খালিশপুর থানার নূরনগর এলাকা থেকে নিখোঁজ গৃহবধূ বিউটি বেগমকে তিন দিন পর বুধবার সকালে নগরীর ৫নং ঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সম্প্রতি খুলনায় কয়েকটি অপহরণের ঘটনায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অপহরণের পর অপহৃতের মোবাইল থেকে নিকটাত্মীয়দের ফোন করে চাঁদা দাবি করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, পুলিশ অপহরণকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে ব্যর্থ হওয়ায় অপহরণ বাড়ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বিজেএমসি খুলনা জোনে অডিট বিভাগের কর্মকর্তা রতন কুমার সোমবার বিকাল ৫টার দিকে খালিশপুর জুট মিলে কাজ শেষে বাসায় ফেরেননি। রাত ৯টার দিকে তার ফোন ব্যবহার করে খালিশপুর জুট মিলের হিসাব বিভাগের প্রধান সুলতান মাহমুদের কাছে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ সময় অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর জন্য একটি বিকাশ নম্বর দিতে চাইলেও তিনি নম্বরটি নেননি। এ ঘটনার পর ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে ফুলতলা থেকে রতনকে উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বুধবার উদ্ধার হওয়া বিউটি বেগমের ভাই আনিস জানিয়েছেন, নিখোঁজের পেছনে তার বোনের স্বামীর হাত থাকতে পারে।

সাম্প্রতিককালের অপহরণের ঘটনা : চলতি বছরের ১২ এপ্রিল গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিচয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে হুসাইন শিকদার ভিট্টু নামক যুবককে অপহরণ করা হয়। ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই খালিশপুরে বিআইডিসি রোডের সামনে থেকে মোস্তাফিজুর রহমান সিফাত নামে নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অপহরণ হয়। ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট নগরীর পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকা থেকে চাঁদার দাবিতে আবু রায়হান ও সারাফাত নামে হেফজখানার দুই মাদ্রাসাছাত্রকে অপহরণ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নগরীর মতিয়াখালী এলাকা থেকে মাইসা নামের দুই বছরের এক শিশুকে অপহরণ করা হয়। শিশুটির মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় দশম শ্রেণীর মাদ্রসাছাত্রীকে বাসার সামনে থেকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করা হয়। স্থানীয় সন্ত্রাসী সৌরভের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীকে অপহরণ করা হয় বলে থানায় অভিযোগ হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২ মার্চ আবদুস সাত্তার সরদার ও রাজু মল্লিক নামে দুই স্যানিটারি মিস্ত্রিকে ডিবি ও র্যা ব সদস্য পরিচয়ে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা মিস্ত্রিদের মারধর করে তাদের কাছে থাকা ৪৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।

বাংলাদেশের মানবাধিকরা সংস্থা খুলনা বিভাগের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, প্রকৃত অপহরণকারীদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। যার কারণে অপহরণকারীদের উৎসাহ বাড়ছে। অপহরণের পর অপহৃতের মোবাইল ফোন থেকে নিকটাত্মীয়দের ফোন করে চাঁদা দাবি করায় সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

র্যা ব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পর পর অপহরণের ঘটনা উদ্বেগজনক। অপহরণকারীরা দীর্ঘদিন থেকেই অপহৃতদের মোবাইল ফোন থেকে কল করে নিকটাত্মীয়দের কাছে মুক্তিপণের দাবি করে আসছে। এতে অপহরণকারীদের নতুন সিম সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় না।

http://www.jugantor.com/news/2017/07/06/137122