৫ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১২:৩৫

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি

আইন বিশেষজ্ঞদের অভিমত

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণে এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বলবৎ রয়েছে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় এখন পঞ্চদশ সংশোধনী বহাল রয়েছে। অর্থাৎ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান এখন বহাল। এখানে শূন্যতার কোনো প্রশ্ন নেই।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ফলে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি। তিনি বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল করা হয়। এখন সেই ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ১৫তম সংশোধনী অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরায় বহাল হবে। যে আইনে এই বিধান (সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল) বাতিল করা হয়েছিল সেই আইন এখন বাতিল হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো শূন্যতা নেই।

প্রবীণ আইনবিদ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বলবৎ রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধানের কোনো সংশোধনী অথবা কোনো আইন অবৈধ ও বাতিল ঘোষিত হলে পূর্বে যে বিধান বা আইন ছিল সেটি আপনা আপনি পুনর্বহাল হয়ে যাবে। এটিই জুডিশিয়াল প্র্যাকটিস ও জুরিসপ্রুডেন্সিয়াল ভিউ। বিষয়টি আপিল বিভাগের শুনানিতেও উত্থাপিত হয়েছিল।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনবিদ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সর্বোচ্চ আদালতে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা হওয়ায় সংবিধান আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হবে। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিষয়টি সেভাবে উল্লেখ থাকবে বলে আমরা মনে করি।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা কালে নিজস্ব ক্ষমতা খর্ব করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেছিলেন। তার আগে ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের এখতিয়ার থেকে রাষ্ট্রপতির হাতে নেয়া হয়। পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তা বাতিল করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার অশুভ উদ্দেশ্যে বিচারকদের অপসারণের মতা জাতীয় সংসদের হাতে প্রদান করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনে। এই সংশোধনী আদালত বাতিল করেছেন।
অন্য দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সংসদে বাতিল করা বিধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল হবে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, আমার মতে পুনর্বহাল হয়নি। সংবিধানের যে অনুচ্ছেদ সংসদ বাতিল করেছে সেটি আপনা-আপনি রেস্টোর (পুনঃস্থাপন) হবে না। এই অবস্থায় আমার মতে শূন্যতা বিরাজ করছে। সংসদের কাজ তো আর কোর্ট করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল সংবিধানের মূল ধারাতে ফিরে যাওয়া। সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম এবং ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলার রায়ের মাধ্যমে আমরা ফিরেও গিয়েছিলাম। কিন্তু আজকের রায়ে আমি অত্যন্ত হতাশ। আজকে এই রায়ের পরিপ্রেেিত আমাদের যে আশা ছিল, স্বপ্ন ছিল সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদ ৯৬-তে ফিরে যাবো, সেটি আর হলো না।

এই বিষয়ে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান রহিত করে সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল। যেহেতু আপিল বিভাগ পুরো সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে সেহেতু সংবিধান আগের অবস্থায় ফিরে যাবে অর্থাৎ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান পুনর্বহাল হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
রিটকারীপরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সংসদ পঞ্চদশ যে সংশোধনী করেছিল, সেখানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে প্রটেক্ট করা হয়েছিল, সেটিই বহাল থাকল। তিনি বলেন, শূন্যতার কোনো প্রশ্ন এখানে নেই। লিগ্যাল সিস্টেমে ১৬তম সংশোধনী বাতিল হয়েছে। এখন ১৫তম সংশোধনী আছে। তিনি বলেন, ১৬তম সংশোধনী বাতিল হওয়ায় শূন্যতা বিরাজ করছে, এ ধরনের কথা উদ্দেশমূলকভাবে বলা হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/233097