৪ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:২৪

এখনো বাড়িভাড়া সম্পন্ন হয়নি ॥ সরকারি অবশিষ্ট কোটার স্থানান্তর কাল শেষ

আগামী ২৪ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের পবিত্র হজ্ব ফ্লাইট। বাংলাদেশ বিমান ও সৌদিয়া এয়ার এ হজ্ব ফ্লাইট পরিচালনা করবে। কিন্তু এখনো অধিকাংশ এজেন্সি হজ্বযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করেনি। এদিকে সরকারি কোটার অবশিষ্ট ৫ হাজার ৭শ প্রাক নিবন্ধিত হজ্বযাত্রীদেরকে বেসরকারি এজেন্সিদের নিবন্ধন করার জন্য গতকাল সোমবার পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। গতকাল এ সময়সীমা বৃদ্ধি করে আগামীকাল বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সাথে কোটা পূরণ করার জন্য ৮২৮ জন হজ্বযাত্রী বৃদ্ধি করে ক্রমিক নং ২ লাখ ২৭ হাজার ৪১৪ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে সরকারি কোটার অবশিষ্ট ৫ হাজার ৭শ হজ্বযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় স্থানান্তর করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আর তাতে প্রাক নিবন্ধনের ক্রমিক নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ২০ হাজার ৮৮৫ থেকে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৫ পর্যন্ত। গতকাল সময়সীমা শেষে আগামীকাল বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্রমিক নং ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ থেকে ২ লাখ ২৭ হাজার ৪১৪ পর্যন্ত স্থানান্তর করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন না করা হলে তারা ২০১৭ সালে হজ্জে গমনে অনাগ্রহী হিসেবে পরিগণিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে পবিত্র হজ্ব পালনের লক্ষ্যে চলতি বছর নিবন্ধিত হজ্ব গমনেচ্ছুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান কার্যক্রম ১২ জুলাই শুরু হচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিকিৎসকরা প্রত্যেক হজ্বযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন।
এসময় প্রত্যেক হজ্বযাত্রীকে দুই ধরনের (ম্যানেনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা) টিকা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সনদ (হেলথ সার্টিফিকেট) প্রদান করা হবে। এছাড়া ১৬ জুলাই আশকোনা হজ্বক্যাম্প মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র খোলা হবে।
জানা গেছে, ঢাকা জেলা ও মহানগরীর হজ্বযাত্রীরা বিভিন্ন হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া ও বাংলাদেশ সচিবালয় ক্লিনিকে টিকা প্রদান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাবে।
অন্যান্য জেলার হজ্বযাত্রীরা বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা শহরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টিকা প্রদান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারবেন। স্বাস্থ্য সনদটি বিমানবন্দরে প্রদর্শনের জন্য প্রত্যেক যাত্রীকে সংরক্ষণ করতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ্বযাত্রীদের বাড়িভাড়া সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যবস্থাপনার বাড়িভাড়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। অধিকাংশ হজ্ব এজেন্সি এখনো সৌদি আরব গমন করেনি। বাড়িভাড়া সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে সৌদিআরব গিয়ে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে জেদ্দার বাংলাদেশ হজ্ব অফিস থেকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত ১১ জুন জেদ্দা থেকে এই চিঠি পাঠানো হয় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।
বাংলাদেশ হজ্ব অফিসের কাউন্সেলর (হজ্ব) মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়-
রাজকীয় সৌদি সরকার চলতি বছর শতভাগ ই-হজ্ব সিস্টেম বাস্তবায়ন করবে। ই-হজ্ব সিস্টেমের সকল কাজ সঠিকভাবে এবং নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে হলে বেসরকারি হজ্ব এজেন্সির মোনাজ্জেমদের অবশ্যই যথার্থ আইটি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মোনাজ্জেমদের ল্যাপটপ সহ সৌদিআরব আগমণ করতে হবে। উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হজ্ব চুক্তি অনুযায়ী এজেন্সিসমূহের ১০ জুনের মধ্যে বাড়িভাড়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু অদ্যাবধি ১০ থেকে ২০টি এজেন্সির মোনাজ্জেম সৌদিআরব গমণ করেছেন। যে কোনো ধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে হজ্ব কার্যক্রম পরিচালনাকারী এজেন্সিসমূহের মোনাজ্জেমদের সৌদিআরবে প্রেরণের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হলো।
হজ্ব অফিস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি হজ্ব পালনের জন্য সৌদিআরবে যাবেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৬৩৫টি হজ্ব এজেন্সিকে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ্বযাত্রীরা তাদের হজ্ব প্যাকেজের টাকা সংশ্লিষ্ট হজ্ব এজেন্সির ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়েছেন। হজ্বযাত্রীরা যে পরিমাণ টাকা জমা দিয়েছেন তার থেকে সৌদিআরবে বাড়িভাড়া, খাওয়া খরচ ও মোয়াল্লেম ফি বাবদ ৬ হাজার টাকা আইবিএএন-এর মাধ্যমে সৌদিআরব পাঠাতে হবে এবং সেখনকার একাউন্ট থেকে এসব অর্থ সৌদিআরবের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রদান করতে হবে। কিন্তু সব এজেন্সি এখনো আইবিএন-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সৌদিআরবে টাকা পাঠায়নি। এজন্য অনুমোদিত এজেন্সিগুলোর মালিক বা প্রতিনিধিকে জরুরি ভিত্তিতে সৌদিআরব গমণ করে মক্কা-মদিনায় হজ্বযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া ও মাশায়ের আল মোকাদ্দাসার ক্যাটারিং সার্ভিসসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গত ১২ জুন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়।
হজ্ব এজেন্সি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তছলিম বলেন, বেশির ভাগ এজেন্সি বাড়িভাড়া সম্পন্ন করেছে। কেউ কেউ বাড়িভাড়ার বিষয়ে সেখনকার বাড়ি মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছে। ঈদের পর মাত্র অফিসগুলো খুলেছে। এজেন্সিগুলো সৌদি আরব যাচ্ছেন। বাড়ি ভাড়ার আনুষ্ঠানিকতা শিগগিরই তারা সম্পন্ন করে বারকোড নিয়ে ফিরবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ্ব শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী ২৪ জুলাই থেকে হজের ফ্লাইট শুরু হবে। ৪১৯ জন হজ্বযাত্রী নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি ১০১১) প্রথম হজ্ব ফ্লাইটটি ২৪ জুলাই সকাল ৮টায় ঢাকার শাহজ্বালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। সৌদিয়ার এয়ারলাইন্সও একই সময় হজ্ব ফ্লাইট শুরু হবে।

http://www.dailysangram.com/post/290166-