৪ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:৫৫

চলার চাকা বারবার পাংচার হলে জাতি এগুবে কিভাবে?

|| অধ্যক্ষ ডা. মিজানুর রহমান || বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতিকে অভয় দিয়ে লিখেছিলেন “মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে”। আর জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম লিখেছেন “ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত আমরা আনিব রাঙ্গা প্রভাত- আমরা টুটাব তিমির রাত বাধার বিন্ধাচল”। খণ্ডিত চাঁদ-তারার পরিবর্তে লাল-সবুজের পতাকাবাহী ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বাংলাদেশ দীর্ঘ ৪৬ বছর যাবত সে আশা নিয়েই দিনাতিপাত করেছে, কিন্তু কাক্সিক্ষত সূর্যের হাসিমুখ এখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি। দেশ যখনি একটু আশার আলো দেখা শুরু করে ঠিক তখনি অমানিশার কালো মেঘের ঘনঘটা ম্লান করে দেয় সকল সফলতা ও অর্জন। 

নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের বদৌলতে বিশ্বের মানচিত্রে যে দেশটি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছিল, কালের বিবর্তনে সে দেশটি বিশ্বের দরবারে একটি খনিজ সমৃদ্ধ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ও অসাধারণ সফলতার ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে। বিশেষ করে সমুদ্র সীমানার ব্যাসার্ধ, যমুনা সেতু ও পদ্মা সেতু নির্মাণের অগ্রগতিসহ খাদ্য-বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য যোগাযোগ, যাতায়াত, কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য ও সংস্কৃতিতে পূর্বের তুলনায় অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে। এ ধারাবাহিকতা চলমান থাকলে বাংলাদেশ একদিন ঠিকই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিগণিত হবে।
কিন্তু বর্তমানের চলমান পরিবেশ পরিস্থিতি সে ইঙ্গিত বহন করে না। দেশে আজ আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার নেই। গণতন্ত্র নেই। মানবাধিকার নেই। ফলে দেশের একশ্রেণির মানুষ অমিতাচার, অনাচার, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, খুন, গুম, ধর্ষণ, বিচারের নামে প্রহসন, বিনা বিচারে মানুষ হত্যা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পেশীশক্তির ব্যবহার, লোভ হিংসা, অহংকারের মাত্রা যে হারে বাড়াচ্ছে তাতে মনে হয় জাতির সভ্যতার প্রতীকীচাকা বার বার পাংচার হতে হতে এখন আর টিউবে পট্টি দেয়ার জায়গাটুকুন অবশিষ্ট নেই। এভাবে জাতীয় উন্নয়নের প্রতীক সভ্যতার চাকা বার বার পাংচার হলে জাতি এগুবে কিভাবে? এপ্রশ্ন এখন জাতীয় প্রশ্নে রূপ নিয়েছে।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকা ইলেকক্ট্রনিক মিডিয়া দেখলেই প্রতিয়মান হয় যে, আমরা যতটা না সভ্য হচ্ছে তার চেয়ে ঢেড় অসভ্যতায় রূপান্তরিত হচ্ছি। অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীর উত্তীর্ণের হার বৃদ্ধি পেলেই জাতি সভ্য হয় না। প্রকৃত সভ্য হতে হলে অসভ্যতাকে জয় করতে হয়।
বর্তমান সময় প্রেক্ষাপটে সমাজে সর্বত্র যে পরিমাণ অবক্ষয় চলছে তাতে শুধু সাধারণ মানুষ নয় পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের সর্বত্র আতংঙ্ক আর হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে। অবক্ষয়ের যে বীভৎসরূপ প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে তাতে করে দেশের মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে পারে না। সামাজিক অবক্ষয় আর দেশের নানা প্রান্তে সে সবের ভয়ঙ্কর সংবাদ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ভীতি আর হতাশা দারুণভাবে পীড়া দিচ্ছে। এধরনের প্রেক্ষাপটে মনোবিজ্ঞানী সমাজ বিজ্ঞানীসহ দেশের সুশীল সমাজ ও বিশিষ্ট জনের মধ্যেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। অভিজ্ঞমহল ও বিশিষ্ট জনেরা মনে করেন সামাজিক অবক্ষয়সহ নানাবিধ বিপর্যয় ও নৈরাজ্য রোধ করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।
বর্তমান সমাজ অবকাঠামোকে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন হলো রাষ্ট্রশক্তি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তারা যদি এদিকে মনোযোগী হতেন তাহলে সমাজে এভাবে দ্রুত এতো বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়তো না।
বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম ব্যাপকভাবে পরিবর্তনের কারণে কমলমতি শিশুসহ সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ধর্মীয় অনুভূতিও পরকালে ভালো মন্দের হিসেব দেয়ার গুরুত্ববিষয়ক জ্ঞান বিতরণের কোন পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। ফলে প্রকৃত আলোকিত সৎ ও যোগ্য মানুষ তৈরি হচ্ছে না। অপর দিকে বয়োসন্ধিকালে এক শ্রেণির শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত অশ্লীল ভিডিও পর্ণ ছবি দেখে দেখে তা পরিবারে, সমাজে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথা সর্বত্র রপ্ত করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রতিকার হীনতায় সর্বস্তরে বিরাজ করছে সর্বস্তরে হতাশা আর অবক্ষয় ।
দেশে প্রতিদিন কোনো না কোনো ভয়াবহ বা অমানবিক ঘটনা একাধারে ঘটে চলেছে। প্রতিটি ঘটনায় মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক, বিভীষিকাময়। প্রতিনিয়ত মিডিয়ায় বা পত্রপত্রিকায় বিকৃত যৌন নির্যাতনের নির্মমতার ছবি মানবতাবাদীদের হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করছে। অহরহ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশু, তরুণী, কর্মজীবী নারী, গৃহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মহিলারা। চলমান ধর্ষণের মাত্রা এতোই বেড়ে গেছে যে, ধর্ষিতা নারীর চিৎকার আর্তনাদ এখন আর কাউকে আলোড়িত ও ব্যথিত করে না। সবাই যেন বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করেন।
দেশের আইনশৃংখলার চরম অবনতিহেতু দেশে শিশু অপহরণ, শিশু হত্যা, গুম ও খুনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নারায়ণগঞ্জের সোনার গাঁয়েই গত দু’মাসে ২৩ বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংক কোম্পানীর আইন পরিবর্তনের ফলে দেশে ব্যাংকিং অর্থনীতি দুর্নীতি লুটপাটের অসনি সংকেত বহন করছে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদরা।
দেশে চলমান জঙ্গিবাদ, ভুয়া দুদক চক্র, ভুয়া চিকিৎসক, ভুয়া পুলিশ ও ভুয়া মেজিস্ট্রেট, ভুয়া সাংবাদিক, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দৌরত্ম্য এখন ওপেন সিক্রেট।
সাম্প্রদায়িক চেতনা ও উম্মুক্ত সংস্কৃতির নামে পরদেশী অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ও নষ্টামির চর্চা এতবেশী বেড়ে গেছে যে দেশীয় সংস্কৃতি ম্লান হবার উপক্রম হয়ে পড়েছে। যে বাংলা ভাষার জন্য জাতি রক্ত দিয়ে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষার গৌরব অর্জন করেছে সে দেশই হিন্দী ভাষার ছবি ও গানের জগতের চর্চা কোন অংশে কম নয়। ব্লু-ফিল্ম, পর্ণসাহিত্য, অশ্লীল ম্যাগাজিন ও ছায়াছবি, অশালিন পোশাক পরিচ্ছদ, বিজাতীয় আকাশ সংস্কৃতি, ফেসবুক, ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশা দেশটির সুস্থ পরিবেশ নষ্ট করছে প্রতিনিয়ত।
অতি সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়া, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয় ও সংবাদের বিশ্লেষণে দেখা যায় দেশটি নানা দুর্যোগের শিকার হয়েছে পড়েছে।
দেশ যখন মাজা সোজা হয়ে দাঁড়াতে চায়, একটু এগুতে চায় ঠিক তখনি দেশে নানা রকম অনাক্সিক্ষত দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে থাকে। এরমধ্যে একটি প্রাকৃতিক অপরটি বৈশ্বিক ও সামাজিক। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় তথা অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ঝড়, সাইক্লোন, বন্যা, নদী ভাঙ্গন, খরা ইত্যাদি কারণে চলমান অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব বিপর্যয় মোকাবেলা করার পরিকল্পনা ও প্রকল্প সঠিকভাবে কাজে আসছে না। প্রকল্পের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ কাগজে কলমে প্রাক্কলিত ব্যয় দেখিয়ে এক শ্রেণি স্বার্থান্বেষী মহল আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র এসব হরিলুট দেখেও না দেখার ভান করছে।
অতি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও ইলেকট্টনিক্স মিডিয়ায় যে সকল সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে বা হয়েছে সে সব সংবাদের শিরোনামগুলো আমাদের জাতীয় সভ্যতা ও উন্নতির পথে প্রতিবন্ধকতার মৌলিক কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেমন- (১) ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা দুর্ধর্ষ ক্যাডার জসিমউদ্দিন মানিকের ১০০ ছাত্রীকে ধর্ষণের সেঞ্চুরি। (২) অসংখ্য সাংবাদিক হত্যা। (৩) কালো টাকা বৈধতা প্রদান। (৪) সমকামীতার অপরাধে ২৮ যুবক গ্রেফতার। (৫) মোবাইলের ক্ষতিকর রেডিয়েশনে তের কোটি মানুষ আক্রান্ত। (৬) বিচারের নামে নিরপরাধ মানুষ হত্যা। (৭) ক্রস ফ্যায়ারে মানুষ হত্যা। (৮) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত মহড়া। (৯) দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বাজার দর। (১০) বিদ্যুৎ বিভ্রাট। (১১) বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। (১২) সুদ (১৩) ঘুষ (১৪) দুর্নীতি। (১৫) অর্থনৈতিক অসমপ্রতিযোগিতা। (১৬) ক্ষুদ্র ও মাঝাড়ি শিল্প-কারখানা বন্ধের নজির। (১৭) ভুয়া মশার কয়েলের কারখানা। (১৮) সাড়ে ১৩ মণ স¦র্ণালংকার ও ৪২৭ গ্রাম হীরার অবৈধ মওজুদ। (১৯) পরকীয়া প্রেম, যৌনাচার, অমিতাচার, আত্মহত্যা, খুন, গুম। (২০) প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে আট বছরে আড়াই হাজার পোশাক শিল্প বন্ধ। (২১) ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তনে দুর্নীতি লুটপাট বৃদ্ধির আশঙ্কা। (২২) স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে তের কোটি গ্রাহক। (২৩) অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স। (২৪) ফিটনেস বিহীন যানবাহন। (২৫) আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। (২৬) নিম্ন আদালতের পর সুপ্রিম কোর্টও কব্জা করতে চায় সরকার। (২৭) জঙ্গি আস্তানায় অভিযান, হত্যা, আত্মহত্যা, গ্রেফতার, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার। (২৮) মায়ের হাতে সন্তান খুন, ছেলের হাতে মা, মা ও মেয়েকে পালা করে ধর্ষণ। (২৯) অকারণে গর্ভবতী রমনীর সিজার। (৩০) শিশুদের খাবারে কেমিক্যাল। (৩১) সীমান্ত হত্যা (৩২) নিয়োগ বাণিজ্য। (৩৩) কোচিং ব্যবসা। (৩৪) টেন্ডারবাজি। (৩৫) কালোবাজারি। (৩৬) চাঁদাবাজি। (৩৭) গ্রেফতারবাজি, (৩৮) জুয়াবাজি। (৩৯) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে স্নায়ুযুদ্ধ। (৪০) সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য মূর্তি। (৪১) ব্যাংকিং খাতে অসনি সংকেত। (৪২) চলতি বাজেটের ঘাটতি মেটাতে টার্গেটের ডবল ঋণ সঞ্চয়পত্র থেকে। (৪৩) আরব শীর্ষ সম্মেলনে অভিমত-বাংলাদেশ জটিল মরু ঝড়ের মধ্যে পড়বেনাতো? (৪৪) দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে বিদেশী পণ্যের বাজার হয়ে যাচ্ছে। (৪৫) প্রসব জনিত কারণে মারা যাচ্ছে দিনে ১৪ জন। (৪৬) বাবা মেয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপদিয়ে আত্মহত্যা। (৪৭) ভারতের উজানে সব নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। (৪৮) ইসলামী ব্যাংকের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ-অস্থিরতা। (৪৯) তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বেশামাল। (৫০) আবারো কি গণতন্ত্রের হত্যার দায় নেবে আওয়ামী লীগ। (৫১) সরকারকে অন্যায় অত্যাচারের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। (৫২) খেলাপী ঋণ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। (৫৩) লোড সেডিং-এ তীব্র দাবদাহ-জনজীবন বিপর্যস্ত। (৫৪) ঋণের চাপে এলাকা ছাড়ছে হাওরবাসী। (৫৫) খুন আতংকে বিএনপি নেতারা। (৫৬) রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সরকার অন্যায়ভাবে মাওলানা সাইদী ও নেতৃবৃন্দকে বন্দী করে রেখেছে। (৫৭) দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বেড়েছে ক্রস ফায়ার-জেল-জুলুম, ফাঁসির ঘটনা। (৫৮) পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা। (৫৯) সিডিপির তৃতীয় পর্যালোচনা-সামগ্রিক অর্থনীতি নাজুক “ ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যাংকিংখাতে সুশাসনের অভাব। (৬০) জাতির কাছে এখন বড় প্রশ্ন এই সরকারকে আসলে চালাচ্ছে কে? (৬১) বেপরোয়া ছিনতাই কারীরা লাখ লাখ টাকা লুটপাট। (৬২) ভারত সফর বিষয়ে দি টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট-আশাহত হয়ে ফিরেছেন হাসিনা বিচলিত নরেন্দ্র মোদিও। (৬৩) সড়ক দুর্ঘটনায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু-কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। (৬৪) রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। (৬৫) ফল-মূল ও শাক-সবজিতে ফরমালিন। (৬৬) সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকিতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠান। (৬৭) সাইবার ক্রাইমের শিকার নারী সমাজ। (৬৮) প্রভাবশালীদের কারণে নিয়ন্ত্রণহীন গণপরিবহন। (৬৯) মূর্তি নিয়ে লুকোচুরি-জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের সাথে তামাশা। (৬০) দেশের বেকার সাড়ে ৪ কোটি। (৬১) বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে কিভাবে। (৬২) বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না-প্রধান বিচারপতি। (৬৩) ষোড়শ সংশোধনী সংবিধান পরিপন্থী- ড. কামাল হোসেন। (৬৪) বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ¦ কাম্য নয়-আইনজীবী মইনুল হোসেন। (৬৫) পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ও সমাজ জীবন গঠনে আল কুরআনের শিক্ষার বিকল্প নেই।
উপরোক্ত সংবাদ শিরোনামগুলোর আলোকে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে এটি পরিষ্কার বোঝা যায় যে-দেশে চলমান অত্যাচার, অবিচার ও গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, সৈরাচারী মনোভাব, প্রতিহিংসার রাজনীতি, অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন, অপসংস্কৃতির গোলামী গোটা দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি বর্তমানে বিভীষিকাময় ও অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এক চরম অসভ্যতার চর্চা ও দৌরাত্ম্য পূর্বের তুলনায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বপরি দেশ এক মহাক্রাতিকাল অতিক্রম করছে। মহাঅপকর্মযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর পিছনে দেশি-বিদেশি অনেক চক্র থাকতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল ধারণা করছেন।
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতীক সভ্যতার টিউবএ উপর্যুপরি পাংচারের কারণে পুরোনো টিউবটিতে পট্টি মারার আর জায়গা অবশিষ্ট নেই। এখন তাই নতুন দিনের টেকসই টিউব প্রয়োজন। যে মজবুত টিউবের উপর ভর করে দেশটি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন, ইনসাফপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা তৈরী হবে সৎ ও যোগ্য নাগরিক। যারা হাল ধরবে গণতন্ত্রের, দেশ শাসনের। কিন্তু সে আশা আজও পুরোপরি পূরণ হয়নি। তারপরও আশাহত হয়নি এদেশের জনগণ। তারা মেঘ দেখে ভয় পায় না বরং মেঘের আড়ালে লুকানো সূর্যের হাসি দেখতে চায়। সে হাসি দেখাবার জন্য দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের মিশন, ভিশন দেশটাকে কোন পথে, কোন দিকে নিয়ে যায় সেটি দেখার জন্য এখন আমজনতার সুধুই অপেক্ষার পালা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। তবে অপেক্ষার একটা মাত্রা আছে। মাত্রা অতিক্রম হলে কবি নজরুল ইসলামের রাঙ্গাপ্রভাত আনতে জনগণ লৌহকপাট ভাংতে রাজপথে একযোগে বেরিয়ে পরলে ক্ষমতার মসনদ অবৈধভাবে দখল করে রাখা সম্ভব নয়, এটি অনাদিকালের ইতিহাস। 

http://www.dailysangram.com/post/290207-