৩ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১:১৭

জামায়াতসহ বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন চলছেই

জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব বেশি দূরে নয়। সরকারি দল ইতোমধ্যে ভোট চাইতে শুরু করেছে। অপরদিকে বিরোধী দলের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন বেড়েছে। অথচ বিরোধী দলও নির্বাচনের অংশ। সরকারি দল ভোট চাইছে, সভা সমাবেশ করছে। তাদের পক্ষে জনগণের সমর্থন চাইছে। অপরদিকে বিরোধী দলকে তার কোনোটাই করতে দিচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে ২০ দলীয় জোট বা বিএনপিকে রাজধানীতে কোনো সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে কোনো কারণ ছাড়াই তল্লাশীর নামে তছনছ করা হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সভা সমাবেশ তো দূরের কথা, ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর কার্যালয়। খুলছে না বিভিন্ন মহানগরসহ জেলা উপজেলার কার্যালয়গুলো। মাঠে ময়দানে তো দূরের কথা, বৈঠকাদিও করতে দেয়া হচ্ছে না। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, নিপীড়ন বন্ধ করে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা দরকার। 

রাজনীতিতে নির্বাচনের আবহ বইছে। সরকারি দল ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উদগ্রিব জনগণ। নির্বাচনে কাজ করার জন্য সব দলেরই সমান সুযোগ থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমানেও বিরোধী দলের উপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি তো দূরের কথা, সভা সমাবেশও করতে পারছে না বিরোধী দল। গুম, গ্রেফতার, জেল, জুলুম চলছেই। নিজেদের বাড়িতেও থাকতে পারছেন না তারা। বানোয়াট অভিযোগে মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের জেলে পুরে রাখা হচ্ছে।
গ্রামের মানুষ দেখছে, ভালো মানুষদের ধরে ধরে জেলে নেয়া হচ্ছে। ইফতার মাহফিলের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানও করতে দেয়া হয়নি। সেখান থেকেও রোজাদারদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এর হাত থেকে অসহায় নারীরাও রেহায় পায়নি। শিক্ষিত শ্রেণী, প্রশাগণ, এমনকি ক্ষমতাসীনদের মধ্যেও এ ধরনের আচরণকে ভালো চোখে দেখছে না। জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, আদালত কর্তৃক কোনো অভিযোগ প্রমাণিতও হয়নি, নিষিদ্ধও করা হয়নি, তারপরও অফিস করতে দেয়া হচ্ছে না, সভা সমাবেশও করতে দিচ্ছে না।
ইফতার মাহফিল সব দলই করেছে। অথচ অতীতে সকল সংসদেই যাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল, বিভিন্ন সময় সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করেছে, সন্ত্রাস বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে, সেই জামায়াতে ইসলামীকে ইফতার মাহফিলের মতো অনুষ্ঠান করতে দেয়া হয়নি। এবার কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে বুকিং দেয়াও হয়েছিল। অতিথিদের আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন তারা। সরকার এই ইফতার মাহফিল নিয়ে প্রকাশ্য কিছু না বললেও বুকিং বাতিল করতে বাধ্য করা হয় বলে দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়।
গত ৭ জুন দেয়া বিবৃতিতে অদৃশ্য শক্তির হাতের ইঙ্গিতে ইফতার মাহফিল করতে না পারায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে দেশের জনগণের সকল মৌলিক অধিকার ও ধর্মীয় অধিকার ভূলুণ্ঠিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১৯৭৯ সালে তার জন্মলগ্ন থেকেই প্রতি বছর পবিত্র রামাদান মাসে দেশের সম্মানিত রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদগণের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আসছে। গত ২০১৬ সালেও আমরা সম্মানিত রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদগণের সম্মানে পৃথক পৃথক ২টি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের অনাকাক্সিক্ষত ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের কারণে সে ইফতার মাহফিল দু’টি সম্পন্ন হতে পারেনি। তিনি বলেন, এ বছরও আমরা সম্মানিত রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের সম্মানে আগামী ১২ জুন ইফতার মাহফিল করার জন্য একটি হল ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, অদৃশ্য শক্তির হাতের ইশারায় ভাড়া নেয়া হল কর্তৃপক্ষের অপারগতায় আমাদের পক্ষে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
কিছুদিন পূর্বে গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়টি ‘তছনছ’ করে পুলিশ। কথিত রাষ্ট্রবিরোধী ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী নাশকতা সামগ্রী তল্লাশীর নামে গত ২০ মে সকাল ৭টা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত গুলশান থানা পুলিশ অভিযান চালায়। কার্যালয়ে রাষ্ট্রবিরোধী তথ্য আছে বলে এক ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক। তবে অভিযান শেষে পুলিশ তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, অভিযানকালে কার্যালয়ের ভেতরে নাশকতার কোনো সামগ্রী পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে সরকার বিরোধী প্রচারণা হয়নি? বিরোধী দল সরকার বিরোধী প্রচারণা চালাবে না? সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে করবে না? সরকার বিরোধী প্রচারণা কী রাষ্ট্র বিরোধী প্রচারণা? আসলে আইন বর্হিভূত, চালাকীপূর্ণভাবে কৌশলের মাধ্যমে বিরোধী দলকে কাজ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
মানুষ মনে করছে, সরকার কী জামায়াতকে ভয় পাচ্ছে? এর আগে সব সময় সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। অথচ তাদেরকেই মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না। রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এ ধরনের পদক্ষেপ হিতে বিপরীত হয়। গত ৯ বছরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ফল কী? হামলা, মামলা, গ্রেফতার আতংকের মধ্যেও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ীর সংখ্যা বিবেচনায় জামায়াতের অবস্থান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরই।
অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী ছিল ক্ষমতায় যাওয়ার একটা ফ্যাক্টর। কেন না ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন দেয়ার কারণে তারা ক্ষমতায় আসীন হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন না দেয়ায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আবার ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী চারদলীয় জোট গঠনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসে। চারদলীয় জোটের বিরোধীদের বিশ্লেষণ ছিল এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০০৬ সালের নির্বাচনেও এই জোট পুনরায় ক্ষমতায় আসবে। এ কারণেই সেই নির্বাচন হতে দেয়া হয়নি। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ১/১১ ঘটানোর মধ্য দিয়ে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়।
এতো কিছুর পরও জামায়াতের রয়েছে সেই কর্মী, সমর্থক, জনসমর্থন। যার প্রতিফলন আমরা দেখেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। বিশেষ করে ২০০৮ সালের পরপর যেসব উপজেলা নির্বাচন, পৌর নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার সবগুলোতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করে এবং বিজয়ীও হয়। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন জামায়াতের ৪ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এই ফলাফল প্রমাণ করে সীমাহীন জুলুম নির্যাতনের পর জামায়াতের জনসমর্থন দিন দিন বাড়ছে।
জামায়াতের কার্যক্রমের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা : ২০০৯ সালে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর বিরোধীদলের সভা সমাবেশে বাধা দেয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর সভা সমাবেশ অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। ধীরে ধীরে ঘরোয়া বৈঠক বন্ধ করে দেয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে। ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালে জামায়াতকে মাঠেই নামতে দেয়নি সরকার। ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া বা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এরপর ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্বরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী। সে সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়নি বলে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ হলেও কোনো ধরনের ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটেনি। বরং সে সমাবেশে জামায়াতের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছে রাজধানীবাসী।
জামায়াত কার্যালয়ে পুলিশী অভিযান : ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে পুলিশ জামায়াতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মগবাজারের ওয়্যারলেস রেলগেটের এফ টাওয়ারস্থ বাসা ঘিরে ফেলে। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। একই সময় পুলিশ মগবাজারস্থ জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস ঘিরে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক তাগণীম আলম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহসহ ২৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই দিনে রাত ৮টার দিকে পল্টন থানা পুলিশ মহানগর জামায়াত অফিস থেকে বেশ কয়েকজন স্টাফকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ মহানগর অফিসে তল্লাশির তা-ব চালায়। তারা অফিস তছনছ করে।
পরে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ এক বিবৃতিতে জানান, ১৯ তারিখ রাতে ২ দফা জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসে পুলিশী তল্লাাশির নামে সংগঠনের কম্পিউটার, ফাইলপত্রসহ অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর, লুটতরাজ করেছে। তিনি বলেন, তল্লাশির নামে লুটতরাজ ভাংচুর নগদ অর্থ ও মোবাইল হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় গোটা জাতি বিস্মিত ও হতবাক।
দফায় দফায় তল্লাশি : দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও মহানগর অফিসে ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর তল্লাশি চালায় পুলিশ। রাজধানীর বড় মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও পুরানা পল্টনে বিকাল ৪টায় জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ের সামনে প্রায় শতাধিক পুলিশ অবস্থান গ্রহণ করে। এ সময় অফিসের আশপাশের এলাকায় গ্রেফতারি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ অনেক পথচারীর দেহতল্লাশি চালায় ও হেনস্থা করে। পরে পল্টন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম জামায়াতের মহানগর অফিসের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে ওই অফিসের ভেতরের বিভিন্ন আলমারি ভাংচুর চালায়। পুলিশ সেখান থেকে কোনো কথিত নাশকতামূলক কাজের আলামত উদ্ধার করতে পারেনি। প্রায় একই সময় বড় মগবাজরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখানে অফিসের আলমারি ভাংচুর ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তছনছ করা হয়। একইভাবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আরো ৩ দফা তল্লাশি চালায় আইন শৃংখলা বাহিনী।
২০১১ সালের ৭ নবেম্বর ঈদুল আজহার দিন পুরানা পল্টনস্থ জামায়াতে ইসলামীর মহানগরী অফিস স্টাফদের খাওয়া-দাওয়ার সময় পুলিশ হামলা চালায়। এতে অনেকে আহত হন। খাবারও নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। ২৩ নবেম্বর অফিসে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায়। তারা দলের মহানগরী সেক্রেটারি ও কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ মিনিটের মধ্যে অফিস থেকে বের না হলে গ্রেফতার করার হুমকি দেয় এবং তিন কর্মচারীকে ধরে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পরদিন ২৪ নবেম্বর আবারও অফিসে হানা দেয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ সময় তারা অফিস স্টাফদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, অশ্লীল গালিগালাজ ও ধরপাকড়ের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে চতুর্থ তলায় অবস্থিত জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ এমপির সংসদীয় কার্যালয়েও প্রবেশ করে তাকে অফিস থেকে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করে পুলিশ। ওপরের নির্দেশে তারা এসেছে বলে ওই সময় জামায়াত নেতাদের জানায়। ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি গভীর রাতে মহানগরী জামায়াতের অফিসে পুলিশ তল্লাশির নামে কর্মচারীদের মারধর, জিনিসপত্র তছনছ এবং স্টাফসহ ৭ জনকে আটক করে। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে পুলিশ দিগন্ত টিভির ক্যামেরাম্যানকে মারধর করে এবং রিপোর্টারসহ দু’জনকে আটক করে নিয়ে যায়।
হাইকোর্টের রুল : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর অফিস পুলিশের দ্বারা অবরুদ্ধ করে রাখা এবং অফিসে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দেয়া কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে ২০১২ সালের ১৭ জুলাই রুল জারি করে হাইকোর্ট। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর তৎকালীন নায়েবে আমির হামিদুর রহমান আজাদ এবং তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক এবং রমনা ও পল্টন থানার ওসিকে জবাব দিতে বলা হয়।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আইনজীবী প্রতিনিধি দল : হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে নিবন্ধন বাতিলের রিট সংক্রান্ত ডকুমেন্ট নিতে ২০১৩ সালের ২০ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন আইনজীবীরা। পুলিশ কর্তৃক অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেয়ার দেড় বছরের মাথায় হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পেলেন তারা। ওইদিন দুপুর ১২টায় জামায়াতের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলাম ও এডভোকেট সাইফুর রহমান মগবাজার ওয়্যারলেস রেলগেট সংলগ্ন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। খবর পেয়ে আগে থেকে সাদা পোশাকধারী পুলিশের বেশকিছু সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরা সেখানে হাজির হন। আইনজীবীরা জামায়াত অফিসের কর্মচারীদের সহায়তায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খোঁজ করেন। এ সময় আইনজীবীদের সঙ্গে বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

http://www.dailysangram.com/post/290015-