৩ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১২:৩৮

পল্লী দারিদ্র্যবিমোচন ফাউন্ডেশন

বড় আত্মসাতে চাকরি বহাল, ছোট আত্মসাতে খতম

৩১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত। তারপরও চাকরি যায়নি সহকারী দারিদ্র্যবিমোচন কর্মকর্তা ছবি রাণী রায়ের। বরং বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে ভালো পদে পদায়ন করা হয়েছে। আর অর্থ ফেরতের জন্য তিনশ’ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে একই প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করায় শিক্ষানবিশ মাঠসংগঠক মো. রাকিবুল ইসলামকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ)-এ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পদে মদন মোহন সাহা যোগদানের পরই নানা অনিয়ম বাসা বেঁধেছে সেখানে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মদন মোহন সাহা মানবজমিনকে বলেন, টাকা আদায়ের স্বার্থে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেলেও চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। তবে ছোট আত্মসাতের কারণে কেন দুজনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে এ বিষয়ে কোনো জবাব দিতে পারেননি তিনি। বলেন, রাকিবুল নতুন কর্মী, তাই অপসারণ। আরেকজন শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক আগে অপসারণ করা হয়েছে। কাগজপত্র দেখে বলা যাবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বড় অংকের অর্থ আত্মসাৎ করলেও এ পর্যন্ত ৫ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। তবে ছোট অংকের অর্থ আত্মসাতের পরও চাকরি খুইয়েছেন দুজন। এর মধ্যে একজনের পক্ষে সরকারি দলের প্রভাবশালী এক সংসদ সদস্য তদবির করেও কিছু করতে পারেননি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছবি রাণী রায়ের বিরুদ্ধে পিডিবিএফের বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১০টি অভিযোগের মধ্যে ১০টিরই সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ২১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এ অপরাধে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ৫ই ফেব্রুয়ারি পিডিবিএফ থেকে এমডি স্বাক্ষরিত জারি করা আদেশে বলা হয়, ব্যক্তিগত শুনানিতে ছবি রাণীর বিগত সময়ের পারফরম্যান্সের কথা বিবেচনা করে তার শাস্তি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এছাড়া আদেশ জারির দিন থেকেই তার বরখাস্ত আদেশ বাতিল হলো। একই আদেশে ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে আত্মসাৎ করা অর্থ জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিডিবিএফের মাঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল আলম খান ১২ লাখ ৭৭ হাজার ১৮২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনা ছয় অভিযোগের মধ্যে ছয়টিই প্রমাণিত হয়। এরপরও তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়নি। খায়রুলের বিভাগীয় মামলার বিপরীতে অফিস আদেশে বলা হয়, খায়রুল আলম খানকে নিচের পদে নামিয়ে দেয়া হলো। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আত্মসাৎ করা অর্থ পরিশোধে শর্ত দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মকর্তা নিতীশ কুমার সরদারের বিরুদ্ধে আট লাখ ৬৪ হাজার ৭৩০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে বেতনের সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী অক্টোবরের মধ্যে আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে আট লাখ ৬৪ হাজার ৭৩০ টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও মাঠ কর্মকর্তা নিতীশ কুমার সরকারকে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। গত ১০ই এপ্রিল পিডিবিএফ থেকে জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন ও রেকর্ডপত্র মূলে নিতীশের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধগুলো প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় মানবিক দিক বিবেচনা করে তার শাস্তি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। আত্মসাৎকৃত আট লাখ ২৪ হাজার ৮৮০ টাকা আগামী অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হলো। এছাড়া গত এপ্রিলে ঊর্ধ্বতন মাঠ কর্মকর্তা সঞ্জিত নন্দীকে প্রতিষ্ঠানের চার লাখ ৭৩ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন। আত্মসাতের জন্য বিভাগীয় মামলায় নিয়োগকারী তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। এরপরও তাকে চাকরিতে বহাল রেখে পিরোজপুর অঞ্চলের বাগেরহাট সদর উপজেলায় নিয়োগ করা হয়েছে। পিডিবিএফ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭শে মার্চ ঝর্ণা রানী মণ্ডলের বরখাস্ত আদেশ বাতিল করে চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। যদিও তার বিরুদ্ধে ১৬ লাখ চার হাজার ৬৫২ টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর তাকে অপসারণ না করে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে। বড় আত্মসাৎকারীদের পুনর্বহাল করা হলেও মাত্র চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করায় পিডিবিএফের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শেখ মুজিবুর রহমানকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। যদিও শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা ২৪টির মধ্যে ২৩টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে চার লাখ ৯৮ হাজার ৬৭৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পান। গত ২৩শে মার্চ পিডিবিএফ থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে চার লাখ ৯৮ হাজার ৬৭৬ টাকা আত্মসাৎ প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=72305&cat=2/