২ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ১০:০৩

বিনিয়োগ স্থবিরতায় ৬ মাসে কমেছে ব্যাংকের মুনাফার প্রবৃদ্ধি

মুনাফার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারছে না দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বেশির ভাগ ব্যাংকই গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) মুনাফার প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বিনিয়োগ স্থবিরতায় অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো ব্যাংকের মুনাফায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শেষ মুহূর্তে কাটছাঁট করে কিছু কিছু ব্যাংক পরিচালন মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেশি দেখানোর চেষ্টা করলেও নিট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে যাবে বলে কয়েকজন ব্যাংকার জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বেসরকারি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৬০ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংক চলতি ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩২০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২৫৫ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ২৬৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২২৫ কোটি টাকা।
ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ২৪৩ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১৯৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ৫০ কোটি টাকা, ডাচ্-বাংলা ৩৫০ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৪০৮ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ৩০৭ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ২৬০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২০৯ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক ৭৩ কোটি টাকা, মেঘনা ব্যাংক ৬৮ কোটি টাকা ও সাউথ বাংলা ব্যাংক মুনাফা করেছে ৬৫ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকের একটি উল্লেখযোগ্য আয় আসে পণ্য আমদানির (এলসি) কমিশন থেকে। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন করে ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য মুনাফা করে। কিন্তু বিদ্যুৎ গ্যাস সঙ্কটের পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। এ কারণে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ সামগ্রিক আমদানি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে মুনাফায়। এ ছাড়া হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, বেসিক ব্যাংকসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনার রেশ এখনো ব্যাংকিং খাতে কাটেনি। পাশাপাশি আবাসন ও তৈরী পোশাক খাতে ঋণ দিয়ে অনেক ব্যাংকেরই ঋণ আটকে গেছে। বিনিয়োগ স্থবিরতায় এসব খাতের উদ্যোক্তা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিতে পারছেন না।
সবমিলে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। আর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের প্রভিশন রাখতে হয়েছে বেশি। যেহেতু প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় খাত থেকে টাকা টেনে, এ কারণে অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকের মুনাফার ওপর প্রভাব পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, গতবারের মতো এবার খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক অলিখিতভাবে কিছু ছাড় দিয়েছে। বড় বড় ঋণ পুনর্গঠন করা হচ্ছে। নামেমাত্র ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ঋণ নবায়ন করা হচ্ছে। এর বাইরে রয়েছে ঋণ অবলোপন। সব মিলে বছরের শেষ সময়ে এসে মুনাফায় কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পরিচালন মুনাফা প্রকৃত মুনাফা নয়। প্রকৃত মুনাফা নির্ধারণের আগে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ, মুনাফা থেকে সাড়ে ৪২ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করার পর অবশিষ্টাংশ প্রকৃত মুনাফা হিসেবে গণ্য হয়।
এ ছাড়া গত ছয় মাসে বেসিক ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৬০ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০০ কোটি টাকা, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০৯ কোটি টাকা, শাহাজালাল ব্যাংক ১৭৩ কোটি টাকা এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭৬ কোটি টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/232246