২ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ১০:০০

স্বীকৃতি পাচ্ছে না মহাস্থানগড়, রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত হবে?

বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র না করতে আপত্তি জানিয়ে আসছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। সরকারের অনড় অবস্থানের মধ্যে গত মে মাসে ইউনেসকো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান বাতিল করে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও করে। বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান বাতিল করা হয় যে বার্ষিক সাধারণ সভায়, ইউনেসকোর সেই গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক সভা আজ রবিবার থেকে পোল্যান্ডে শুরু হচ্ছে। সভার আলোচনায় উঠে আসবে বহুল আলোচিত রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্প নিয়েও। সভায় অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পোল্যান্ডে গেছে।

বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থানে বগুড়ার মহাস্থানগড়কে এবারের সাধারণ সভায় ঘোষণার জন্য নাম পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পায়নি মহাস্থানগড়। ফলে এবারের সাধারণ সভায় মহাস্থানগড় বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে অনুমোদন পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ইউনেসকো বাংলাদেশের তিনটি স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেগুলো হলো বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, সুন্দরবন এবং পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। মঙ্গল শোভাযাত্রাকেও সম্প্রতি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো।
প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) একজন সদস্য। পোল্যান্ডের ক্রাকাউ শহরে ইউনেসকোর ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত।
সূত্র বলছে, পোল্যান্ডের ক্রাকাউয়ে ইউনেসকোর সভায় ৩৫টি নতুন স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান দেওয়ার জন্য উত্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সাতটি প্রাকৃতিক স্থান। একটি প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক মিশ্রণে। আর বাকি ২৭টি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মহাস্থানগড়ের বিষয়ে ইউনেসকো থেকে বলা হয়েছে, প্রস্তাবটি এখনো অসম্পূর্ণ। তাই মনোনয়নের জন প্রস্তাবটি উঠছে না। এ ছাড়া বিশ্বের কোন কোন ঐতিহ্যের স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হবে তা সিদ্ধান্ত হবে এই সাধারণ সভায়। এ ছাড়া অনেক ঐতিহ্য স্থান নিয়ে পর্যালোচনা হবে। আবার অনেক ঐতিহ্য স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে বাদ দেওয়ারও কথা রয়েছে। ফলে ১০ দিনব্যাপী সাধারণ সভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পোল্যান্ড যাওয়ার আগে একাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বললে তাঁরা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যদিও ইউনেসকোর উদ্দেশ্যে বিশ্বের ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের পাঠানো চিঠিতে সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণার দাবি ছিল। সুন্দরবন রক্ষায় সরকারকে ১০টি সুপারিশ করেছিল খোদ ইউনেসকো নিজেও। সেই ১০ সুপারিশের মধ্যে বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করা হয়নি। অবশ্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরবনকে যাতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা না দেওয়া হয়, সে বিষয়ে তত্পর ছিল সরকার। রামপালে বিদ্যুেকন্দ্র হলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না, ইউনেসকোর কর্মকর্তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। ধাপে ধাপে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত বছর সেপ্টেম্বরে এবং এ বছরের মে মাসে প্যারিসে ইউনেসকোর সদর দপ্তরে যায়। উদ্দেশ্য ছিল, সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বোঝানো যে রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ হলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। এ সময়ে সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে সংক্রান্ত প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, রামপাল নিয়ে বরাবরই আপত্তি জানিয়ে আসছে ইউনেসকো। রামপাল প্রকল্প বাতিলের জন্য ইউনেসকো প্রথম ২০১৩ সালে তারপর ২০১৪ এবং গত বছর সর্বমোট তিন দফায় সরকারকে সুপারিশ করেছিল। গত বছর মার্চে সংস্থাটির একটি পর্যবেক্ষক দল সুন্দরবন সফর করে। তারা এই প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলে মত দেয়। একই সঙ্গে প্রকল্পটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
ইউনেসকোর কাছে বিশ্বের ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠন প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব দরবারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। এই দুই দেশের উচিত যৌথভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে উদ্যোগ নেওয়া। তা না করে এই দুই দেশ যৌথভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ করছে, যা একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়ে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা ঘোষণা করার মতো কিছুই হয়নি।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/07/02/514428