১ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১০:৪০

জগন্নাথপুরে পাচারকালে ওএমএসের চাল উদ্ধার

ডিলার যুবলীগ নেতা পলাতক, গ্রেফতার ৩ * কুলাউড়ায় চেয়ারম্যানকে আসামি করে মামলা, গ্রেফতার ৩ * যশোরে ভিজিএফ কার্ডের গম বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ওএমএসের চাল রাতের আঁধারে পাচারকালে আট বস্তা চালসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে চালসহ অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তবে ডিলার যুবলীগ নেতা আবদুল বারিককে গ্রেফতার করতে পারেনি।


মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে দুটি দোকান থেকে ভিজিএফের ১০ বস্তা চাল উদ্ধারের চারদিন পর চেয়ারম্যানকে প্রধান এবং আরও তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলিকে প্রধান আসামি করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন চেয়ারম্যানের স্বামী, সাবেক চেয়ারম্যান ও শ্রমিক লীগ আহ্বায়ক মো. শাহজাহান। আটক আর ছাড়ার নাটকীয়তার পর পুলিশ শেষতক তিন আসামিকে আটক করে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করে।

যশোরে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে বরাদ্দকৃত গম বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বেশিরভাগ কার্ডধারী সরকার নির্ধারিত ১৩ কেজি ৭১০ গ্রাম করে গম পাননি। সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অধিকাংশ ইউনিয়নে ১০-১২ কেজি করে গম কার্ডপ্রতি বিতরণ করা হয়েছে। ওজনে কম দেয়ায় সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন উপকারভোগীরা। অপরদিকে অন্তত ১৮টি ইউনিয়নে ঈদের আগে বরাদ্দের গম পাননি কার্ডধারীরা। আগামীকাল রোববার ওইসব ইউনিয়নে গম বিতরণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এছাড়াও বিতরণকৃত গমের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক ইউনিয়নে পোকায় খাওয়া গমও বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) : আটককৃতরা হলেন- গাড়িচালক হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামের হরমুজ আলী ছেলে বাদল মিয়া, ডিলারের ভাতিজা গোতগাঁও গ্রামের আবদুল আজিবের ছেলে রাজিব হোসেন ও তার ভাই আক্তার হোসেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামিম আল-ইমরান ও থানা পুলিশের অভিযানকালে ওএমএসের ডিলার যুবলীগ নেতা আবদুল বারিককে পাওয়া যায়নি।

জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের ওএমএসের ডিলার উপজেলা যুবলীগ নেতা ওই ইউনিয়নের গোতগাঁও গ্রামের আবদুল বারিক বুধবার ও বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে দুই টন ওএমএসের চাল ১৫ টাকা দরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র লোকজনের মধ্যে বেচার জন্য নেন। কিন্তু এসব চাল খোলাবাজারে দরিদ্র লোকদের মধ্যে বিক্রি না করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাশের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ বাজারে পাচারকালে স্থানীয় লোকজন তা আটক করে উপজেলা প্রশাসনকে খবর দেয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহর নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীম আল-ইমরান উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ধীরাজ কুমার চৌধুরী ও এসআই অরুন সিংহের নেতৃত্বে একদল পুলিশ শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে সরকারি চাল, গাড়ি ও গাড়ির চালকসহ তিন জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের দুটি দোকান থেকে দু’দফা অভিযান চালিয়ে ১০ বস্তা ভিজিএফ চাল ও ১৩টি খালি বস্তা উদ্ধার পুলিশ। ঘটনার সময় তিনজনকে আটক করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পরে আটক তিন ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়।

চাল আটক ও জড়িতদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। ফলে ঘটনার চারদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলিকে প্রধান আসামি করে চারজনের নামে মামলা রেকর্ড করে। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার তালিকাভুক্ত আসামি ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার জমির আলী, ইউনিয়নের চৌকিদার ও দোকান মালিক মিলন মল্লিক এবং অপর দোকান মালিক সন্ন্যাসী নাইড়ুকে আটক করে।

এসব অপকর্মের অন্যতম হোতা চেয়ারম্যানের স্বামী, সাবেক চেয়ারম্যান ও শ্রমিক লীগ আহ্বায়ক মো. শাহজাহানকে মামলায় আসামি না করায় এবং মামলার ১নং আসামি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলি এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও তাকে গ্রেফতার না করায় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

যশোর : জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় যশোর জেলায় তিন লাখ ৯ হাজার ২৫৮ জন কার্ডধারীর বিপরীতে তিন হাজার ৯২ দশমিক ৫৮ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঈদের আগে মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ গম উত্তোলন করা হয়। বাকি ২০ শতাংশ ঈদের পর থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। ১৮টি ইউনিয়নে আগামীকাল রোববার থেকে গম বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম।

যশোরের কেশবপুর, সদর, চৌগাছা, মণিরামপুর, ঝিকরগাছা, অভয়নগর বাঘারপাড়ায় ভিজিএফ কার্ডের গম বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কার্ডপ্রতি ১০ কেজি চালের সমানুপাতিক হারে ১৩ কেজি ৭১০ গ্রাম গম বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ইউনিয়নে ১০-১২ কেজি হারে গম দেয়া হয়েছে। এতে কার্ডধারীরা তিন থেকে প্রায় চার কেজি হারে গম কম পেয়েছেন। চৌগাছায় অধিকাংশ ইউনিয়নে ১০ কেজি হারে এবং যশোর সদরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ১০-১২ কেজি হারে গম বিতরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মণিরামপুর ও ঝিকরগাছা উপজেলায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে।

যশোর সদরের কাশিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান সাগর বলেন, আমার ইউনিয়নে কার্ডপ্রতি ১২ কেজি হারে গম বিতরণ করা হয়েছে। তবে শুনেছি অনেক ইউনিয়নে ১০ কেজিও বিতরণ করা হয়েছে। তবে ওজনে কম দেয়া হলেও সেটি কেউ মেরে খায়নি। কার্ডের বাইরেও অনেকে বস্তা নিয়ে পরিষদে হাজির হয়। তাদের খালি হাতে ফেরানো সম্ভব হয় না। এজন্য অনেক চেয়ারম্যান কার্ডধারীদের একটু কম দিয়ে হলেও সবাইকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। এজন্য হয়তো কম দিতে পারে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নকিব সাদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ গম উত্তোলন হয়েছে। বাকি গম ঈদের পর থেকে জনপ্রতিনিধিরা উত্তোলন করছেন। কয়েকদিনের মধ্যে সব গম উত্তোলন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, মজুদ না থাকায় খুলনা থেকে এনে গম দেয়া হচ্ছে। এজন্য ঈদের আগে সব ইউনিয়নে চাল পৌঁছায়নি। অচিরেই বরাদ্দের সব গম উত্তোলন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, জেলার ১৮টি ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ডের গম বিতরণ বাকি আছে। আগামী রোববার থেকে ওইসব ইউনিয়নে গম বিতরণ শুরু হবে।

তিনি বলেন, ওজনে কম দেয়ার ব্যাপারে এখনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কোথাও কোথাও নিন্মমানের গম সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/01/135794/