১ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১০:৩৮

চট্টগ্রামে সড়ক মেরামতের মান নিয়ে অসন্তোষ

পানিতেই বিটুমিন মিশ্রিত পাথর ঢালছে চসিক

জুন মাসের শুরুর দিকে ভারী বৃষ্টিপাতের পর লণ্ডভণ্ড হওয়া চট্টগ্রাম নগরীর সড়কগুলো এখনো পরিপূর্ণ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলো আগের অবস্থাতেই রয়ে গেছে। কোথাও কোথাও এসব সড়কের অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে।

রমজানের শেষে সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল বেশি। এর মধ্যেই অনেক সড়কে মেরামতের চেষ্টা চালিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে অপরিকল্পিত এই সংস্কার তেমন কাজে আসছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভারী বৃষ্টিপাতের সময় আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, নিমতলা পোর্ট কানেকটিং রোড, ফিরিঙ্গিবাজারের মেরিনার্স রোর্ড, কাপাসগোলা রোড, সিডিএ অ্যাভেনিউর বিভিন্ন এলাকার সড়কে বড় আকারের গর্ত দেখা দেয়। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো সড়ক বৃষ্টির পানিতে কয়েকদিন তলিয়ে ছিল। এবার বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির কারণেও কিছু সড়কে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।

চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, নগরীতে বর্তমানে ৬২০ কিলোমিটার পিচঢালা সড়ক রয়েছে। সড়ক সংস্কার একটি চলমান কাজ। ভারী বর্ষণের পর থেকে চসিকের নিজস্ব অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থেকে বিটুমিন মেশানো পাথর এনে সড়কগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। তবে ঈদের সময় সড়কে যানবাহনের চাপ সামলে সংস্কার কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তাই এখনো অনেক সড়কে সংস্কার কাজ চলছে।

এদিকে সংস্কার কাজ নিয়ে অনেককে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেতাই করে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। ফলে সংস্কারের কিছুদিনের মাথায় এসব সড়কের অবস্থা আগের মতো হয়ে যায় বলে দাবি করেছেন তারা ।

নাগরিকদের এমন অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার চসিকের কর্মীরা দেওয়ানহাট এলাকায় শেখ মুজিব রোডের সংস্কার কাজ করছিলেন। সেখানে দেখা গেছে, কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টিপাতের ফলে সড়কের গর্তগুলোতে পানি জমে যায়। আর সেই পানিতেই চসিক কর্মীরা বিটুমিন মিশ্রিত পাথর ঢালছিল। বিষয়টি দেখে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম উল্যাহ ইত্তেফাককে জানান, চসিকের এমন কাজের মধ্যে দিয়ে নাগরিকদের দেয়া করের টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে। পানির নিচে থাকা খানাখন্দে ইটের খোয়া দিয়ে জরুরিভিত্তিতে ভরাট করলেই যথেষ্ট। পানিতে বিটুমিন মিশ্রিত পাথর ঢালার কোনো মানেই নেই। এর থেকেই বোঝা যায়, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কতোটা উদাসীন।

যদিও এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিস্ট তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থেকে বিটুমিন মিশ্রিত পাথরকুচি আনার পর সেটি ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে হয়তো হঠাত্ বৃষ্টির কারণে যেখানে বিটুমিন দেওয়ার কথা সেখানে পানি জমে গেছে। তাই শ্রমিকরা বিটুমিন মেশানো পাথরকুচি ফেলে না দিয়ে গর্ত ভরাটের কাজে ব্যবহার করেছে।

জানা গেছে, সাগরিকায় স্থাপিত চসিকের নিজস্ব অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থেকে বিটুমিন ও পাথরকুচি মেশানো কার্পেটিং সামগ্রী আনা হয় এ কাজে। নির্ধারিত তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করার পর নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যেই দিতে হয় এসব কার্পেটিং সামগ্রী। নয়তো গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। বিটুমিনের বাঁধন আলগা হয়ে সড়ক আবারো নষ্ট হয়ে যায়।

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/last-page/2017/07/01/205515.html