৩০ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩৯

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আমানত ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা

এক বছরে বেড়েছে ১১৫০ কোটি

বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হচ্ছে না; বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। এবার সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) এক বছরে বাংলাদেশী সঞ্চয় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশীদের সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৮৫ টাকা হিসাবে)। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে তা ছিল ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গতকাল সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, দণি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। তবে কোনো বাংলাদেশী তার নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করলে তার তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই।
এর আগে গত এপ্রিলে অর্থপাচার তথ্য নিয়ে কাজ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থপাচারের ভয়াবহ তথ্য দিয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গত ১০ বছরেই বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৪ সালেই পাচার হয়েছে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। দেশ থেকে প্রতি বছরই অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এ অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৬ সালেই সবচেয়ে বেশি আমানত আসে সুইস ব্যাংকে। আলোচ্য সময়ে আমানতের পরিমাণ ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ০৮ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে যা ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্র্যাংক। স্বর্ণালঙ্কার, শিল্পকর্ম এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে আমানতে যোগ হয় না।
বাংলাদেশীদের আমানত : সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, প্রতিবেশী ভারতের সুইস ব্যাংকে আমানত কমলেও বাংলাদেশীদের আমানত প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০২ সালে ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০০৪ সালে ৪ কোটি ১০ লাখ, ২০০৫ সালে ৯ কোটি ৭০ লাখ, ২০০৬ সালে ১২ কোটি ৪০ লাখ, ২০০৭ সালে ২৪ কোটি ৩০ লাখ, ২০০৮ সালে ১০ কোটি ৭০ লাখ, ২০০৯ সালে ১৪ কোটি ৯০ লাখ এবং ২০১০ সালে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক রয়েছে।
মোট আমানত : প্রতিবেদন অনুসারে আলোচ্য সময়ে বিশ্বের সবগুলো দেশের আমানত কমেছে। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকে বিদেশীদের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ হিসাবে মোট আমানত কমেছে ৫ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি, ২০১২ সালে ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ ছাড়া ২০১১ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি, ২০১০ সালে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি এবং ২০০৯ সালে ছিল ১ হাজার ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আনুযায়ী এখন পর্যন্ত কাউকে বিদেশে টাকা জমা রাখার অনুমোদন দেয়া হয়নি। কোনো প্রবাসীও সরকারকে জানাননি যে তিনি সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছেন। ফলে সুইস ব্যাংকে জমা পুরো টাকাটাই দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। এর আগেও আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপেও বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা উঠে এসেছে।


http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/231795