৩০ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩৮

শুষ্ক মওসুমের আগে মেরামত সম্ভব নয় : ডিএনসিসি

বর্ষায় সুখবর নেই রামপুরা-বনশ্রী সড়কে

বর্ষায় সুখবর নেই রামপুরা-বনশ্রী সড়কের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুষ্ক মওসুমের আগে সড়কটির উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে সাময়িকভাবে ইট-বালুর তৈরি ম্যাকাডম দিয়ে বর্ষা মওসুমে সড়কটিকে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চলছে।
২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডেমরা-রামপুরা সড়কের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সড়কটির বেশির ভাগ অংশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) মালিকানাধীন। রামপুরা ব্রিজ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত অংশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন। সড়কটি উদ্বোধনের পর ভারী যানবাহন চলাচল না করার নির্দেশনা দিয়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে চালু হওয়ার পর থেকেই সড়কটি দিয়ে ভারী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি, ফুয়েল ট্যাংকার ও অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচল শুরু করে। ফলে অল্পসময়ের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল, গর্ত সৃষ্টি হয়ে ভেঙেচুরে গেছে। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে সড়কটিতে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রায়ই সড়কে গাড়ি উল্টে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া গভীর রাত পর্যন্ত সড়কটিতে ভয়াবহ যানজট লেগেই থাকে।
গত ২০ এপ্রিল ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেহেদী ইকবাল রাস্তাটি রায় সহযোগিতার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার, রামপুরা ও খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ দায়িত্বশীল আটজনকে চিঠি দেন। ওই কর্মকর্তা জানান, রাস্তাটি সর্বোচ্চ পাঁচ টন ভারবাহী যানবাহন চলাচলের উপযোগী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে চরম অবহেলা ও তদারকির অভাবে এ রাস্তা দিয়ে চলছে ৩০ থেকে ৪০ টনের পণ্যবাহী যান। এতে রাস্তাটি নির্মাণের এক বছরের মধ্যে ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।
গত ৪ জুন রামপুরা বনশ্রীর স্থানীয় বাসিন্দা এ এফ এম কামরুল হাসান খান পাঠান হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী হয়ে আমুলিয়া পর্যন্ত সড়কটি রায় ভারী যানবাহন চলাচলে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। একই সাথে এ রাস্তা দিয়ে ভারী যান চলাচলের েেত্র বাধা প্রদান এবং রাস্তাটি ধ্বংসের হাত থেকে রা করতে বিবাদিদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে নাÑ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জাহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে চার সপ্তাহের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, পুলিশ কমিশনার, রামপুরা থানার ওসি, খিলগাঁও থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তবে আদালতের সেই নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না ভারী যানবাহনের চালকেরা। রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত গত কয়েকদিনে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আদালতের দেয়া নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তাটিতে চলাচল করছে ভারী যানবাহন। যে কারণে রাস্তাটি এখন বিশাল খানাখন্দে ভরে গেছে। এসব গর্তে পানি জমে কোথায় গর্ত আর কোথায় ভাঙা তা বোঝার উপায় নেই। সড়কটির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েটি স্থানে যান চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর পরও হালকা যানবাহনের পাশাপাশি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ভারী যানবাহন।
সোহেল নামে এক লরিচালক বলেন, আদালতের নির্দেশনা আমার জানা নেই। এ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশও আমাদের বাধা দেয়নি। সবুজ নামে এক ট্রাকচালক বলেন, তিনি চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকটি চালিয়ে আমুলিয়া-বনশ্রী-রামপুরা হয়ে যাচ্ছেন তেজগাঁও এলাকায়। রাস্তার অবস্থা দেখে তিনি নিজেও অসহায়ত্বের কথা জানান। বলেন, রাস্তার এমন অবস্থা জানলে এ পথ দিয়ে আসতাম না। দীর্ঘ যানজটে আটকা আছি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কুদরতউল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, বনশ্রী এলাকা নিয়ে সীমানা জটিলতার কারণে সেখানকার কল্যাণ সমিতি মামলা করে রেখেছে। ওই এলাকা থেকে সিটি করপোরেশন ঠিকমতো ট্যাক্সও পায় না। এ কারণে এত দিন ডিএনসিসি ওই সড়কে কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। ফলে সড়কটির অনেক খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে। তবে এখন বনশ্রী কল্যাণ সমিতি মেয়রের কাছে রাস্তা মেরামতের আবেদন করেছে। তারা ট্যাক্স দিতেও রাজি হয়েছে। এ কারণে সেখানে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে এখন বর্ষা মওসুম চলায় স্থায়ী কোনো কাজ করা সম্ভব হবে না। ইট-বালুর ম্যাকাডম দিয়ে আপাতত রাস্তায় গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুষ্ক মওসুম এলে তখন পুরোদমে কাজ করা হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/231753