রংপুরের বদরগঞ্জে মানিক রাহার গোডাউনে রাখা ভিজিএফের গম উদ্ধারে অভিযান চালাতে গেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসি ল্যান্ডকে বাধা দেন পৌরমেয়র উত্তম কুমার সাহা; ইনসেটে নিখিল রাহার গোডাউন থেকে উদ্ধার করা গম ;নয়া দিগন্ত
৩০ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩৬

বদরগঞ্জে ভিজিএফের ১৪৭ বস্তা গম জব্দ

অভিযান চালাতে পৌরমেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাধা ; ছবি তোলায় সাংবাদিকদের বাধা ও হুমকি

রংপুরের বদরগঞ্জের সরকারি খাদ্যগুদাম সংলগ্ন ডাক্তারপাড়ায় গতকাল দুপুরে একটি গুদামে কালোবাজারে বিক্রির জন্য রাখা খাদ্য অধিদফতরের সিল দেয়া ১৪৭ বস্তা ভিজিএফের গম জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে আরো একটি গুদামে অভিযান চালাতে গেলে পৌরমেয়র এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বাধা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ছবি তোলায় তারা হুমকি-ধমকি প্রদান করেন এবং আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসি ল্যান্ড আবুল কালাম আজাদ জানান, দুপুরে স্থানীয় সরকারি খাদ্যগুদাম সংলগ্ন ব্যবসায়ী এস এ মতিনের মালিকানাধীন মিলচাতালের গুদামে অভিযান চালিয়ে ১৪৭ বস্তা গম জব্দ করা হয়। ওই গোডাউন ভাড়া নিয়ে নিখিল কুণ্ডু নামে এক ব্যবসায়ী গম সংরক্ষণ করেছিলেন। জব্দকৃত সব গম ভিজিএফের। এগুলো ঈদের আগে দুস্থদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। গমের বস্তার ওপর খাদ্য অধিদফতরের সিল ছিল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া।
এ দিকে স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, এ ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান উত্তম কুমার সাহা ও পৌরমেয়র ফজলে রাব্বী সুইট ঘটনাস্থলে আসেন এবং আরেকটি গোডাউনে অভিযানে বাধা দেন। এ সময় পৌরমেয়র উত্তম কুমার সাহা হাত উঁচিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে কথা শোনান। ম্যাজিস্ট্রেট তখন মাথা নিচু করে মুখে হাত দিয়ে তার কথা অবাক হয়ে শোনেন। তাদের বাধার মুখে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিপুল গম থাকার পরও মানিক রাহার গুদামে অভিযান চালাতে পারেননি। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাথে থাকায় এবং বাধা দেয়ার ছবি ধারণ করায় সাংবাদিকদেরও লক্ষ্য করে আপত্তিকর মন্তব্য করার পাশাপাশি নানা ধরনের হুমকি দেন পৌরমেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান।
তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসি ল্যান্ড আবুল কালাম আজাদ অভিযানে বাধাপ্রাপ্তির কথা অস্বীকার করে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সীমাবদ্ধতা থাকায় অন্য গুদামে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, তিন ঘণ্টা অবস্থানের পরও মালিক না আসায় ১৪৭ বস্তা গম জব্দ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপর গুদামটি তালাবদ্ধ থাকায় সেখানে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে কেউ উদ্বুদ্ধ হয়ে মামলা করতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
এ দিকে ভিজিএফের গম গোডাউনে রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ী নিখিল কুণ্ডু বলেন, ওই গম ভিজিএফ কার্ডধারীদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। কয়েকজন ভিজিএফ কার্ডধারী মিলে এক বস্তা (৫০ কেজি) গম পেয়েছেন। এ কারণে বস্তাসহ তাদের গম কেনা হয়েছে যাতে খাদ্য অধিদফতরের সিল রয়েছে।
এ ঘটনার পর আড়ালে চলে গিয়ে মোবাইল বন্ধ রাখায় অপর ব্যবসায়ী মানিক রাহার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে অভিযোগের ব্যাপারে পৌরমেয়র উত্তম কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকেরা টাকা না পেলেই উল্টাপাল্টা রিপোর্ট করবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, একজন ব্যবসায়ী তো আর চুরি করে গম আনেননি। কেউ না কেউ তার কাছে বিক্রি করেছেন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কী আছে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকদের কারণে এমনিতেই একজন ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমি বাধা না দিলে আরো এক ব্যবসায়ী আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ত।
উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইট জানতে চান, সাংবাদিকরা কোথাও গেলেই ক্যামেরা অন করে ব্যাপারটা কী। একজন ব্যবসায়ী ভিজিএফের গম কিনতেই পারেন। তাই বলে সেটা পত্রিকায় ছাপা হবে এটা কি মানা যায়। কী হয়েছে যে এভাবে ভিডিও বা ছবি তুলতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/231774