৩০ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩১

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প বহাল থাকবে

বিতর্কিত ভ্যাট আইন স্থগিত থাকলেও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প বিলুপ্ত হচ্ছে না। তবে কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আগামী দুই অর্থবছর পুরনো আইনে ভ্যাট আদায় করা হলেও ব্যবসায়ীদের অনলাইনে ৯ ডিজিটের নিবন্ধন নম্বর নিতে হবে। তবে আমদানি-রফতানিসহ ব্যবসার সুবিধার্থে পুরনো ১১ ডিজিটের ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) সচল থাকবে। এ ছাড়া অনলাইনে রিটার্ন দাখিলও করতে পারবেন।


এ ছাড়া বিভিন্ন পণ্যে বিদ্যমান ট্যারিফ ভ্যালু, প্যাকেজ ভ্যাট, সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে সেবা খাতে ভ্যাট আদায় বহাল থাকবে। বর্তমানে ২০টি সেবা খাতে সংকুচিত হারে ভ্যাট আদায় করা হয়। এর মধ্যে আবাসন খাতে দেড় থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ, নির্মাণ সংস্থা ৬ শতাংশ, আসবাবপত্র ৬ ও ৪ শতাংশ, জুয়েলারি ৫ শতাংশ, পরিবহন ঠিকাদার সাড়ে ৪ ও ১০ শতাংশ, বিদ্যুৎ ৫ শতাংশ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সাড়ে ৭ শতাংশ। অন্যদিকে গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, কেক, চাটনি, জুস, নিউজপেপার, ইট, জেনারেটর, সয়াবিন তেলসহ ১৭৯টি পণ্যে ট্যারিফ ভ্যালুর আওতায় ভ্যাট আদায় করা হতো।

এনবিআর সূত্র আরও জানায়, সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রাক্কলিত রাজস্ব আদায় নিয়ে সংশয় রয়েছে। এখন বাড়তি ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনাসহ মনিটরিং বাড়ানো হবে। এ ছাড়া নতুন কয়েকটি এসআরও জারি করে কয়েকটি খাতে ভ্যাটের হার বাড়ানো হবে। আজ-কালের মধ্যে এসব এসআরও জারি হবে।

নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় অনলাইনে নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এর অংশ হিসেবে ১ জুলাইয়ের পর থেকে পুরনো ১১ ডিজিটের বিআইএন কার্যকর থাকবে না বলে এনবিআর আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নতুন ভ্যাট আইনে ৯ ডিজিটের ই-বিআইএন নেয়। কিন্তু নানা নাটকীয়তা

শেষে নতুন আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় অনলাইনে নিবন্ধন নেয়া ৯ ডিজিটের বিআইএনের কার্যকারিতা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক রেজাউল হাসান যুগান্তরকে বলেন, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন চলমান থাকবে। সেটা বিদ্যমান আইনের অধীনেই করা হবে। একই সঙ্গে রিটার্নও অনলাইনে নেয়া হবে। এ জন্য সিস্টেম পরিবর্তন করা হবে। তবে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে কিনা সেটা পরে ব্যাখ্যার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। তিনি জানান, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প বাতিল হবে না। কারণ এটা সরকারের একটি অবকাঠামো।

তিনি আরও বলেন, নতুন ৯ ডিজিটের ই-বিআইএন যারা নিয়েছেন তাদের ব্যবসা পরিচালনায় সমস্যা হবে না। বরং যারা নেননি তাদের সমস্যা হতে পারে। কারণ আগেই বলা হয়েছিল ৯ ডিজিটের বিআইএন ছাড়া ১ জুলাইয়ের পর থেকে ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না।

এনবিআর সূত্র জানায়, পুরনো আইনে রাজস্ব আদায় করা হলেও অনলাইনে বিআইএন নম্বর নেয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে আমদানি-রফতানি, টেন্ডার, ঠিকাদারি, সরবরাহকারীসহ সব ব্যবসার সুবিধার্থে ৯ ডিজিটের নতুন এবং ১১ ডিজিটের পুরনো উভয় বিআইএন সচল থাকবে। এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যাখ্যাসংবলিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯১ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে ভ্যাটের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বাড়তি ২৩ হাজার কোটি টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে দু-একটি খাত ছাড়া নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে না। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যে হারে ভ্যাট আদায় করা হতো সে হারেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় করা হবে।

বর্তমানে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ২৮ হাজার টাকা, অন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২০ হাজার টাকা, জেলা শহরের পৌর এলাকায় ১৪ হাজার টাকা ও দেশের অন্য এলাকার ব্যবসায়ীরা ৭ হাজার টাকা হারে প্যাকেজ ভ্যাট দিচ্ছে।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের মহাসচিব আবু মোতালেব বলেন, সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থে পুরনো ভ্যাট আইন বহাল রাখায় সাধুবাদ জানাই। এনবিআর চাইলে প্যাকেজ ভ্যাট আদায়ে ব্যবসায়ীরা সব ধরনের সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি সব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে প্যাকেজ ভ্যাট দিতে উৎসাহিত করব।



http://www.jugantor.com/last-page/2017/06/30/135614/