২৯ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১২:০৮

বিতর্কিত ভ্যাট আইন দুই বছর স্থগিত

ভ্যাট আইনে পরিবর্তন আসছে না। ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিতর্কিত ভ্যাট আইনের কার্যকারিতা আরও দু’বছরের জন্য স্থগিত করেছে সরকার। যদিও আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের পক্ষে অনড় ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু সংসদে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে না। এই দু’বছর বিদ্যমান ভ্যাট আইনেই রাজস্ব আদায় করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল এ পরিবর্তন এনে সংসদে বুধবার অর্থবিল ২০১৭ পাস করেছে সরকার।

এ ছাড়া বাজেট উপস্থাপনের পরপরই ভ্যাট আইনের পাশাপাশি ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক নিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নতুন বছরে ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাবও কার্যকর হচ্ছে না। তুলনামূলক স্বল্প আমানতের ক্ষেত্রে তা কমানো হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে এক লাখ এক টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক ১৫০ টাকা এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত মোট তিনটি স্তরে আবগারি শুল্ক আদায় করা হবে। অর্থাৎ ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক আমানতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হবে না।

১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সব পণ্য বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরেই ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছিলেন। বিশাল বাজেটের এই খরচ মেটাতে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে কর ও শুল্ক হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা ছিল অর্থমন্ত্রীর। এর মধ্যে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর থেকে আদায়ের লক্ষ্য ধরেছিলেন তিনি। ফলে এখন তার পরিকল্পনা দৃশ্যত বাধাগ্রস্ত হল।

বাজেট প্রস্তাবের পর থেকেই ভ্যাট আইন নিয়ে বিপুল সমালোচনায় পড়তে হয় মুহিতকে। ব্যবসায়ীদের আপত্তি এবং জনসাধারণের উদ্বেগের মধ্যে সরকারের শেষ সময়ে এসে ভ্যাট আইন কার্যকরের বিরোধিতা আসে সরকারি দলের নেতা, এমনকি মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বাজেট আলোচনায় সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেই আইনটি আমরা করে দিই ২০১২ সালে। এখন সবাই ভুলেই গেছে যে, আইনটি আমরা পাস করে দিয়েছিলাম। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে যেহেতু কথা উঠেছে, ব্যবসায়ীরাও এই আইনে তেমন সাড়া দিচ্ছেন না, সে কারণে আমি মনে করি- এ আইন আগে যেমন ছিল আগামী দু’বছরও তেমনই থাকবে।’

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পরামর্শে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ আইনটি কার্যকর করে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেয়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু তখন ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা এক বছর পিছিয়ে দিয়েছিল সরকার, এখন আরও দু’বছর পেছাল। ফলে ২০১২ সালে প্রণীত ভ্যাট আইনটি আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার আমলে আর কার্যকর হচ্ছে না।

১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী পণ্য ও সেবাভেদে বিশেষ ছাড় দিয়ে সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে একাধিক হারে ভ্যাট আদায় করা হয়। এতে রেয়াত নেয়ার পদ্ধতি নেই। নতুন আইনে সব ক্ষেত্রেই ১৫ শতাংশের একক হার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এতে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় যেখানে কম হারে ভ্যাট কার্যকর ছিল সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাটে মূল্যস্ফীতি হওয়ার প্রবল ঝুঁকি ছিল। হিসাব করে দেখা গেছে, ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে ১ জুলাই থেকে অনেক জরুরি পণ্যে ও সেবায় কমপক্ষে ১০-১২ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বেড়ে যাবে। নির্বাচনের আগের বছরে এ ধরনের মূল্যস্ফীতি হলে তা জনগণের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে এ আশঙ্কায় সরকার নতুন অর্থবছর থেকে আইনটি আর কার্যকর করার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। ফলে বিপুল অংকের রাজস্ব ক্ষতি মেনে নিয়ে শুধু ভোটার তুষ্টির জন্যই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এদিকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হলে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ প্রকল্প চালুর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৫৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প চালু করা হয়। ২৩ মার্চ এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। জানা যায়, এর মধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যয় হয়েছে কেনাকাটায়, প্রশিক্ষণ আর কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে।
ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক : এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় সমাপনী বক্তৃতায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে কয়েকটি পরামর্শ দেন। এর মধ্যে বহু বিতর্কিত ব্যাংক হিসাবের লেনেদেনে আবগারি শুল্ক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্বে এমন ছিল যে ২০ হাজার ১ টাকা হলেই আবগারি শুল্ক দিতে হতো। অর্থমন্ত্রী এক লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ী হিসাবকে শুল্কমুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই বুঝেছে উল্টো এবং অপপ্রচার হয়েছে যে, এক লাখ টাকা থাকলেই এক হাজার টাকা কাটা হবে। এই যে এক লাখ টাকা তিনি শুল্কমুক্ত করে দিয়েছেন, এই গরিবহিতৈষী প্রস্তাবের জন্য আমি অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছি যে, এক লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত তিনটি স্তর করে দিয়ে তিনি যেন শুল্ক হার আর না বাড়ান। আমি আশা করি, সেই ব্যবস্থা তিনি নেবেন এবং এটা ব্যাখ্যা করবেন সে সময় কত টাকা দিতে হতো এবং এখন তিনি তা কত কমিয়ে দিয়েছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থাৎ এক লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত শুল্ক হার, সেটাও কিন্তু তিনি কমিয়ে দিয়েছেন। কাজেই মনে হয়, এটা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকবে না। কারণ এক লাখ এক টাকা থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত- যেটা আগে ৫০০ টাকা দিতে হতো, এখন মাত্র দেড়শ’ টাকা কাটা হবে। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা যেটা ৮০০ টাকা করা হয়েছিল, সেটাকে ৫০০ টাকা করা হবে।’ এর পরপরই মুহিত তার সমাপনী বক্তব্যে তার প্রস্তাবিত বাজেটে আবগারি শুল্কসহ কিছু বিষয়ে সংশোধন আনেন।

এ ছাড়া খাদ্য পরিস্থিতি এবং আমদানি শুল্কের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে খাদ্যশস্যের সরকারি-বেসরকারি মজুদ ১ লাখ টনের বেশি। চাল আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ করা হয়েছে। যত দিন চাল আমদানি প্রয়োজন, তত দিন এটাই থাকবে।
অন্যান্য পরিবর্তন : ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক শিল্পের কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে অপরিবর্তিত থাকছে উৎসে কর হার। ফলে আগামী অর্থবছর থেকে রফতানির বিপরীতে ১ শতাংশ হারে কর দিতে হবে পোশাক শিল্প মালিকদের। ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে মেডিটেশন সেবায়, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে। সোলার প্যানেলের আমদানি শুল্ক গত বছরের মতো রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ভোক্তাদের স্বার্থে মসলাজাতীয় পণ্যের ট্যারিফ মূল্য বহাল রাখা হয়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনার ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ বহাল থাকবে। তবে সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে আয়কর হার ১০ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। এর আগে ১ জুন বাজেট ঘোষণার সময় পোশাক শিল্পের কর্পোরেট কর ১৫ শতাংশ এবং সবুজ কারখানার জন্য ১৪ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি নতুন ভ্যাট আইনে মেডিটেশন সেবার ভ্যাট আগামী ২ বছরের জন্য অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এ ছাড়া কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও এর যন্ত্রাংশকে ভ্যাট অব্যাহতির প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা, জাহাজ ভাঙা শিল্পের প্রজ্ঞাপন বহাল, সফটওয়্যার আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি, প্লাস্টিক ও গ্লাস ফাইবার নির্মিত এলপিজি কনটেইনার আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে দেশীয় শিল্পের স্বার্থে লৌহ নির্মিত এলপিজি সিলিন্ডার আমদানিতে ভ্যাট বহাল রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
সোলার প্যানেল আমদানির শুল্ক চলতি বছরের মতো রাখার প্রস্তাব দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে সোলার প্যানেল তৈরি শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও এ ক্ষেত্রে আমরা আমদানিনির্ভর। এই বাজেটে প্রস্তাবিত অধিক হারে সোলার প্যানেলের ওপর যে আমদানি শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল সেটি বাদ দেয়ার প্রস্তাব করছি।

এ ছাড়া সিগারেটের কর কাঠামো নির্ধারণের নতুন এসআরও জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া মরিচ, হলুদ, ধনিয়াজাতীয় গুঁড়া মসলার ট্যারিফ মূল্য বহাল রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
সব শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থকে তুচ্ছ করে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার না করে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো দেশই উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হতে পারেনি। দেশকে উন্নত করতে হলে আমাদেরও একইভাবে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের মাধ্যমে জাতির জনকের স্বপ্নপূরণে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সব দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় দু-চারটি শুল্ক বা কর হার বৃদ্ধির ওপর। এর মধ্যে ব্যাংকের লেনদেন হিসাবের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি ছিল বিতর্কের বিষয়। কেউ কেউ বলেছেন, এই বাজেটটি একটি শ্রেষ্ঠ তামাশা। ভ্যাট আইন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইনটি প্রবর্তিত হয় ১৯৯১ সালে। সেটা পুরোপুরি সংশোধন করে একটি খসড়া ২০০৮ সালেই প্রস্তুত হয়। ২০১২ সালে আইনটি পাস করা হয়। তবে বলে দিই যে, এইটি কার্যকর হবে ২০১৬ সালে। পরে এর কার্যকারিতা আরও এক বছর পিছিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও মনে হয় করদাতাদের সন্তুষ্ট করতে পারিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদ কমছে। এতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না বলে অনেকেই মতপ্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ত্রৈমাসিক শ্রম জরিপ ২০১৫-১৬ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ২০১৩ সালের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ ২০১৫-১৬ সালের শেষ প্রান্তিকে ৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা যে কোনো বিচারে উল্লেখ করার মতো। কর্মসংস্থান সঞ্চারি প্রবৃদ্ধি না হলে বেকারত্বের হার কমা সম্ভব হতো না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অনন্তকালের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্দিষ্ট থাকতে পারে না। সুদের হারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে, মূল্যস্ফীতি বাড়লে সুদের হার বাড়ে আর মূল্যস্ফীতি কমলে সুদের হার কমে। বিষয়টি তাই আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর কোনো কোনোটিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছে এবং বিচারাধীন আছে যা এর আগে কখনও হয়নি। ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা ও চালু রাখার স্বার্থে অর্থায়নের প্রয়োজন হয়। ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত মূলধন ক্রাইসিসের কারণে আন্তর্জাতিক লেনদেনে প্রকট সমস্যা হচ্ছিল। কোনো ব্যাংক মূলধনের অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারী জনগণ ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। এ বিবেচনায় জনস্বার্থেই মূলধন পুনর্ভরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সৌভাগ্য যে স্মরণকালে কোনো ব্যাংকের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়নি। একটি ব্যাংকই যদি ‘লালবাতি জ্বালায়’ তাহলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি বেকায়দায় পড়ে যায়।
বেসিক ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠনের পর শ্রেণিকৃত ঋণ অনেক কমেছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সরকার দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীর জন্য যৌক্তিক মূল্যে মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ জন্য ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান-২০১০ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে নির্মাণাধীন ১১ হাজার ২১৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত ১১ হাজার ১২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি।

তিনি বলেন, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে রামপাল, মাতারবাড়ী, পটুয়াখালীর পায়রা এবং বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ অব্যাহত থাকবে। ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন এবং ১ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও টেকসই জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গ্যাসের মজুদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে বাপেক্স কর্তৃক ৫৩টি অনুসন্ধান কূপ, ৩৫টি উন্নয়ন কূপ এবং ২০টি ওয়ার্কওভার কূপ খনন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাজেট বক্তব্যেই আমি বলেছি যে, ২০১৮ সালে গ্যাস আমদানি শুরু হলে গ্যাসের আন্তর্জাতিক মূল্যে তা ক্রয় করতে হবে। ফলে গ্যাসের ওপর বর্তমান কর যৌক্তিকীকরণ করলে বিদ্যুতের ন্যায় ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দামে ভর্তুকি প্রদানের প্রয়োজন হবে।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/06/29/135413