২৯ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৩

চিকুনগুনিয়ায় অনেক পরিবারে ঈদ আনন্দম্লান

রাজধানীবাসীর ঈদ আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে চিকুনগুনিয়া। ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পূর্ব পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় বাড়ি যেতে পারেননি অনেকে। চিকুনগুনিয়া বিড়ম্বনায় শুধু ঈদের আনন্দই ম্লান হয়নি নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডও ব্যাহত হয়েছে। সাধারণত ঈদের সাথে সঙ্গতি রেখে গ্রামের বাড়িতে অনেকেই নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।

বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট চেম্বার ও চিকিৎসকদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে জানা গেছে, তারা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত প্রচুর রোগী পেয়েছেন ঈদের আগে ও পরে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অসচেতনতার জন্যই মানুষ মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় ঘুমের মধ্যেই বেশি কামড়ে থাকে এডিস মশা। এ সময় মশারি টানিয়ে ঘুমালে এ থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়। দেখা যায়, সকালে সূর্য ওঠার পর আলো ঘরে প্রবেশ করতেই অনেকে মশারিটা খুলে ঘুমাতে চান। এ সময় অনেকের কাছে মশারির ভেতরে থেকে ঘুমাতে অস্বস্তি বোধ হয়। সতেজ বাতাসে আরামে ঘুমাতে গিয়েই এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হন তারা। এডিস মশারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সকালে সূর্য ওঠার পরপরই এবং বিকেলে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় কামড়াতে পছন্দ করে। একটু অস্বস্তি বোধ হলেও মশারি টানিয়ে ঘুমালে চিকুনগুনিয়া অথবা ডেঙ্গু জ্বর থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

এক সময় রাজধানীর হাতিরপুল, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান ও রামপুরা এলাকায় চিকুনগুনিয়া সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন পুরো রাজধানীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কোনো এলাকা নেই যে যেখান থেকে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী আসছেনা।
রাজধানীর আরামবাগ এলাকায় মুশফিকার এক বছরের মেয়ে ‘রোজ’ ঈদের আগের দিন থেকে আক্রান্ত হয়েছে। জ্বরের প্রচণ্ডতায় তাকে শাজাহানপুরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। ছোট শিশুটি মুখে কোনো কথা বলতে না পারলেও খিচুনিতে এক সময় তার শরীর শক্ত হয়ে গেলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। রাজধানীর বনশ্রী এলাকার গৃহবধূ মোশায়ারা খাতুন আক্রান্ত হয়েছেন চিকুনগুনিয়ায়। জ্বর দুই দিন পর সেরে গেলেও এখন পর্যন্ত তিনি দুই হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারেন না। শরীরের প্রতিটি জোড়ায় এমন ব্যথা যে তিনি হাঁটতেও পারতেন না। তাকে বাথরুমে নিতে হয়েছে ধরে। মিজানুর রহমান থাকেন মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায়। তিনি ঈদের এক সপ্তাহ আগে জ্বরে ভুগলেও এখন পর্যন্ত তার শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে থাকেন ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফিয়াল সার্জারির বিশিষ্ট সার্জন অধ্যাপক ডা: মতিউর রহমান মোল্লা। তিনি ঈদের দুই দিন আগে থেকে চিকুনগুনিয়ায় ভুগছেন। তিনি বলেন, জ্বর ছিল মাত্র তিন দিন তবে ব্যথার কথা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তার ভাষায়Ñ এটা একটি সুইসাইডাল পেইন। ওপরের ত্বক থেকে শরীরের গভীরের হাড় পর্যন্ত ব্যথা। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, এমনকি টয়লেটে যেতে কষ্ট হয়। অনেক দুর্বলতায় ভুগছি। চিকিৎসা বলতে তেমন কিছু নেই কেবল প্যারাসিটামল।

মিরপুরের সাদিয়া জাহাঙ্গীরও অসহ্য ব্যথায় নড়াচড়া করতে পারছেন না। পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে এমন অবস্থা। জ্বরটা তেমন না হলেও জোড়ায় ভয়াবহ ব্যথা। কষ্টে নড়াচড়া করা যায় না। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তিনি যেতে পারেননি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজধানীতে সচেতনতা বাড়ানো ও এডিস মশা বাস করে অথবা ডিম ছাড়ে এমন পরিবেশ নষ্ট করে ফেলার অভিযান চালিয়েছিল। রামপুরার বিশিষ্ট সমাজসেবক জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘরের মশা তাড়াতে হলে ঘরের মানুষকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘরে অথবা এর আশপাশে পানি থাকে এমন গর্ত অথবা পাত্রগুলো থেকে পানি ফেলে দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। রাজধানীবাসীর সমস্যা হলো ঘরের বাইরে তারা কখনো মশার স্থান নষ্ট করার উদ্যোগ নিজে থেকে নেন না।

চিকুনগুনিয়া রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়লেও তা এখনো গ্রামে যায়নি। ঈদের আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, গ্রামে অল্প কয়েকটা কেস পাওয়া গেলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা ঢাকায় এসেছিলেন। এখান থেকেই সংক্রমিত হয়ে গ্রামে যাওয়ার পর জ্বর এসেছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর মতো চিকুনগুনিয়াও শহুরে জ্বর। এ মশাগুলো শহুরে এলাকায় বংশবিস্তার করে থাকে। শহরে এডিস মশা বেড়ে ওঠার যে পরিবেশ থাকে গ্রামে তা থাকে না বলে গ্রামে সাধারণত এডিস থাকতে পারে না। তবে তিনি বলেন, একটু সতর্ক থাকলেই চিকুনগুনিয়া হোক আর ডেঙ্গু হোক তা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। দিনে ঘুমালে সর্বদাই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। তাহলে বেঁচে থাকা সম্ভব।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/231573