ঈদে বাড়ি ফেরার তাড়া। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে গাদাগাদি করে ঢাকা ছাড়ার চিত্র : নূর হোসেন পিপুল
২৫ জুন ২০১৭, রবিবার, ১২:৩৩

স্বপ্ন যাবে বাড়ি ছুটছে মানুষ

অনেক ঝক্কি-ঝামেলা, দুর্ভোগ। অনেক পথ। পথে পথে ভোগান্তি। তার পরেও যেতে হবে। নাড়ির টানে বাড়ি ছুটছে মানুষ। গত দু’দিনে রাজধানী বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। মানুষের সেই চাপ পড়েছে মহাসড়কে। বাড়ি ফিরতে পদে পদে তারা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তার পরেও স্বজনের টানে তারা যাচ্ছেন। বাস, ট্রেন এবং লঞ্চের ছাদেও উপচে পড়া ভিড়। তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। ছাদেও স্থান না হওয়ায় অনেকে ছুটছেন বিকল্প পথে। তার পরেও যেতে হবে স্বজনের কাছে।
গতকাল রাজধানীর বাস টার্মিনাল, লঞ্চ স্টেশন এবং রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষের তৃতীয় দিনের মতো উপচে পড়া ভিড়। ভেতরে জায়গা না হওয়ায় অনেকেই চড়েছেন ছাদে। বিশেষ করে লঞ্চ এবং ট্রেনের ছাদে ছিল অসংখ্য যাত্রী। জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে এ যাত্রীদের ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। আজ সকালেও এমন ভিড় হবে রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে।
ঘরমুখো এই মানুষ বাসা থেকে বের হয়েই পড়ছেন নানা বিপাকে। পথে পথে তাদের ভোগান্তি ছিল চরম। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেও মানুষকে পথে পথে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বাস লঞ্চে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় হয়েছে বলেও অভিযোগ মিলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখের সামনেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং বাস-লঞ্চের ছাদে যাত্রী চাপছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। এ দিকে, সরকার নিয়ন্ত্রিত বিআরটিসি বাসেও রাখা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
রাজধানী ফাঁকা : গত দু’দিনে রাজধানী বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার একেবারেই ফাঁকা লক্ষ্য করা গেছে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোও। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গত বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা। গতকালও রাজধানীর স্টেশনগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দৃশ্য চোখে পড়ে।
মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে দীর্ঘ জট : এক দিকে ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী, অপর দিকে জট বাড়ছে মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে। সকাল থেকেই দেখা যায় রাজধানীর বের হওয়ার পথগুলোতে তীব্র যানজট। গাবতলী এবং যাত্রাবাড়ী এলাকায় তীব্র জট ছিল সকাল থেকেই। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের বেশকিছু এলাকায় যানজট ছিল। কোনো কোনো রাস্তায় যানবাহনের ধীরগতির কারণে যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।
গতকাল সকাল থেকে শত শত যানবাহন জড়ো হয় শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। সূত্র জানায়, গতকাল দিনভর ফেরিঘাটগুলোতে তীব্র জট ছিল। সিরিয়াল ভেঙে যানবাহন পারাপারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘাট নিয়ন্ত্রকরা টাকার বিনিময়ে যানবাহন ফেরিতে তুলছেন বলে অভিযোগ। এ দিকে, ঘাটগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী একজন জানিয়েছেন, টাকা না দিলে গাড়ির সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না ঘাটে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় : এমন কোনো পরিবহন নেই যেটিতে বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, গুলিস্তান থেকে শিমুলিয়া পর্যন্ত গাড়ির ভাড়া হচ্ছে ৭০ টাকা। এখন কমপক্ষে ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। শিমুলিয়া এবং পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ ও সি বোটগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও দু-তিন গুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। সি বোটগুলোতে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। টিকিট কাটার পরেও বোট চালক ও লাইনম্যানের ইচ্ছে অনুযায়ী যাত্রী তোলা হচ্ছে বোটে। এ নিয়ে দিনভর যাত্রীদের সাথে ঝগড়া হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কর্ণপাত করছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। যাত্রীরা জানান, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও তারা শান্তিমতো যেতে পারছেন না। পারলে পরিবহন শ্রমিকেরা তাদের পকেট থেকে টাকা থাবা মেরে নিয়ে যায়Ñ এই অবস্থা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। তাদের সামনেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও সবাই নিশ্চুপ।
লঞ্চ ও ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় : লঞ্চ এবং ট্রেনে গতকাল উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী এবং ছাদে চড়া যাত্রীদের সংখ্যাই বেশি। কোনো রকমে মানুষ ট্রেনে উঠছেন। নারী এবং শিশুদেরকে নিয়ে ট্রেনে উঠতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগেভাগে যারা টিকিট কেটেছেন তাদের অনেকেই সিটে বসতে পারেননি বলেও অভিযোগ মিলেছে। ভেতরে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার যাত্রী ট্রেনের ছাদে চড়ে ছুটছেন বাড়িতে।
লঞ্চেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া নিষেধ থাকলেও প্রতিটি লঞ্চেই দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে। লঞ্চগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে।
অনেকে ছুটছেন বিকল্প পথে : লঞ্চ, বাস এবং ট্রেনে জায়গা না পেয়ে অনেকেই ছুটছেন বিকল্প পথে। কেউ খোলা ট্রাকে, আবার কেউ কেউ মাইক্রোবাস বা মিনিবাস ভাড়া করে। এভাবে যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও অনেকেই বলেছেন তাদের কোনো উপায় নেই। মালবাহী ট্রাকেও যাচ্ছেন। অনেকে ছোট ছোট পিকআপ ভাড়া করে বাড়ি যাচ্ছেন।
বিআরটিসি হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়তি অর্থ : বিআরটিসি বাসের বেশির ভাগ রুটে আগে থেকে কোনো টিকিট বিক্রি করা হয়নি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এখন মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে।
ঘরে ফেরা যাত্রীদের অনেকেই মোবাইলে জানিয়েছেন, যাত্রা পথে কোথাও না কোথাও তাদের ভোগান্তি হয়েছে। যাদের সাথে নারী-শিশু ও বয়স্করা ছিলেন তাদের ভোগান্তি ছিল চরমে। তার পরেও তারা বাড়িতে গিয়েছেন স্বজনের সাথে ঈদ করবেনÑ এটাই বড় পাওয়া।

http://m.dailynayadiganta.com/detail/news/231258