২৫ জুন ২০১৭, রবিবার, ১২:৩১

ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়, ভোগান্তি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

নিরাপদ বাহন’ অধিকাংশ ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লেও কমলাপুর স্টেশনের মনিটরিং স্ক্রিনে সেগুলোর বেশিরভাগ উল্লেখ করা হচ্ছে না। এর মধ্যে যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই স্টেশনে এলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুধু তাই নয়, স্টেশনে কোনো কোনো ট্রেনের বগি প্লাটফরমে থাকলেও ইঞ্জিন আসছে অনেক পরে। যার কারণে যাত্রার আগেই ট্রেনের ভেতর ও ছাদের উপরে গাদাগাদি করে নারী, পুরুষ ও শিশুদের চরম ভোগান্তির মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে। এতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।

এদিকে ট্রেনের ছাদে হাজার হাজার যাত্রী ‘বিনা টিকেটে’ উঠে ঝুকিপূর্ণ যাত্রা অব্যাহত রাখলেও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে আজও কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং তাদের সামনেই যাত্রীরা বগির ছাদে উঠছেন।

এব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, কেউ যাতে ছাদে না উঠে সেটি মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের কথা কেউই শুনছে না। এখন দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের এখানে কি করার থাকতে পারে?

আজ শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে পাওয়া যায় এসব তথ্য।
একই অবস্থা বিরাজ করছে ঢাকার অদুরে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের মাস্টার শাহ চন্দ্র বাবু বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে শনিবার ভোর ৪টা থেকে বিকেল পর্যন্ত মোট ৬৩টি ট্রেন চলাচল করেছে। এর মধ্যে আন্তঃনগর রুটে ৩০টি, ঈদ স্পেশাল পাবর্তীপুর, রাজশাহীসহ তিনটি, লোকাল মেইল ট্রেন ২০টি এবং ঢাকা নারায়নগঞ্জ রুটে ১৬টি।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। কোনো ধরনের সমস্যা এখন পর্যন্ত হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার দাবি করলেও নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না পৌঁছানোর কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনেই যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে সময় কাটাতে হয়েছে। এর মধ্যে এক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ছে বলে কমলাপুর স্টেশন সংশ্লিষ্ট ও ভূক্তভোগী যাত্রীরা জানান।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি শনিবার সকাল ৯টায় কমলাপুর স্টেশন ত্যাগ করার কথা ছিলো। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর উদ্বিগ্ন যাত্রীরা ট্রেন না ছাড়ার কারণ জানতে স্টেশন মাস্টারের রুমে ধর্না দিচ্ছিলেন। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে হৈ চৈ শুরু করেন। এরপর কর্তৃপক্ষ ট্রেনের গন্তব্য জেনে সম্ভাব্য সময় ১২টা ৪০ মিনিট উল্লেখ করে স্ক্রীন বোর্ডে দেয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু ওই সময়েও ট্রেন ছাড়তে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অবশেষে পাঁচ ঘণ্টা পর ট্রেনটি ২টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ত্যাগ করে।

একই অবস্থা দেখা গেছে জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনে। এই ট্রেনটি ৩টা ৪০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ার কথা। কিন্তু সেটি বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্টেশনে ইঞ্জিন ছাড়াই পড়ে থাকে। আর সেই বগিগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি যাত্রী উঠে পড়ে। ছাদেও রোদের মধ্যে শত শত যাত্রী ঠায় বসে থাকে। ট্রেনটিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। পরে ট্রেনটি পৌণে এক ঘণ্টা বিলম্বে ৪টা ২০ মিনিটে স্টেশন ত্যাগ করে।

যদিও কোনো ট্রেনের বিলম্বের সূচি কমলাপুর স্টেশনের স্ক্রিনে দেখা মেলেনি।

সেখানে দেখা গেছে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়ার সময়-কুমিল্লা কমিউটার ১৩.৩০ মিনিট, রাজশাহী সিল্ক সিটি ১৪টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সম্ভাব্য সময় ১৫টা ১০ মিনিট ছাড়া বাকী ট্রেনের পাশে উপকুল এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল ও তিতাস কমিউটার যথাসময়ে ছেড়ে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো কোনো ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পৌণে এক ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যেতে দেখা যায়।

জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনের সামনে দাঁড়িযে হ্যান্ড মাইকিং করছিলেন কমলাপুর জিআরপি থানা পুলিশের কন্সটেবল রেজাউল।

তিনি বলছিলেন, কেউ ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠবেন না। মাইকিং করার সময়েই যে যেভাবে পারছিল ছাদে উঠতে থাকে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ কন্সটেবল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার কাজ হলো শুধু মাইকিং করে যাত্রীদের সচেতন করা। এখন ছাদে উঠে যাত্রা করে কেউ মরলো কি-না তা দেখার বিষয় না।

তিনি বলেন, ‘দেখছেন না, মাইকিং করার পরও কেউ কথা শুনছে না।’

এরপর তিনি বলেন, ‘ঈদ করার জন্য সবাই বাড়ি যেতে চায়। এখন কি তাদের পিটুনি দিয়ে ছাদ থেকে নামাবো? তাই বাধা দিচ্ছি না।’

একই অবস্থা দেখা গেছে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে। একইভাবে শত শত যাত্রী ছাদে উঠে পরে। পরে ওই ট্রেনের চালকের কাছে গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাত ১০টা ২০ মিনিটে পৌঁছানোর কথা। এখন কতক্ষণে পৌঁছতে পারবো সেটি একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন। এরপরই তিনি ট্রেনের হুইসেল বাজিয়ে রওয়ানা দেন।

এর আগে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রীরা একটানা পাঁচ ঘণ্টার শিডিউল বিপর্যয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

তারা বলেন, প্রতিবছর স্টেশনে এসে তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এখানেই যদি পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকি তাহলে বাড়ি পৌঁছাবো কখন?

যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদের অগ্রীম টিকেটের যাত্রা শুরু হওয়ার দিন থেকেই শুনছি এক থেকে দুই এমনকি ৪/৫ ঘণ্টা পর্যন্ত শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। আজ সেটি দেখলাম। তারা বলেন, এছাড়া যেসব ট্রেন ঢাকায় শিডিউল বিপয়য়ে পড়ছে সেগুলো পৌছাচ্ছে অতিরিক্ত সময় নিয়েই।

রংপুরগামী যাত্রী শাহজাহান ও তার স্ত্রী রূপা বেগম এ প্রতিবেদকের কাছে চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, মেয়েকে নিয়ে এবার ঈদ করতে রংপুরে যাচ্ছি। সেজন্যে সকাল সাড়ে ৭টায় আমরা স্টেশনে চলে এসেছি। আমাদের ট্রেন ছাড়ার কথা সকাল ৯টায়। কিন্তু স্টেশনে এসে জানলাম বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে। স্টেশনে এভাবে বসে থাকতে থাকতে আমরা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। রোজা রেখে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা যায়?

আরেক যাত্রী শোভন আক্তার বলেন, প্রতি ঈদে বাড়ি ফেরায় ভোগান্তির শেষ থাকে না, এটা ঠিক। সকাল থেকে এসে স্টেশনে বসে আছি। এখনও ট্রেনই এলো না। যাবো কখন?

কমলাপুর স্টেশনের মাস্টার শাহ চন্দ্র বাবু নয়া দিগন্তকে রংপুর এক্সপ্রেস পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, এই ট্রেনটি রংপুর থেকেই বিলম্বে এসে পৌঁছেছে। তাই এটি বিলম্বে ছেড়ে গেছে। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।

তিনি বলেন, এবার আমাদের ট্রেনের সার্ভিস গতবারের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। কারণ রেলের কর্মকর্তা কর্মচারি ছাড়াও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি মুহূর্ত নজরদারীর মধ্যে রাখছে পুরো টার্মিনাল।

http://m.dailynayadiganta.com/detail/news/231120