২৪ জুন ২০১৭, শনিবার, ১২:১৭

চরম অব্যবস্থাপনায় ঘরমুখো মানুষের অসহনীয় দুর্ভোগ

ঢাকা থেকে বের হতেই লাগছে কয়েক ঘণ্টা

চরম অব্যবস্থাপনা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, ট্রাফিক সিগন্যাল, রাস্তায় যানবাহন চলাচল, কোনো স্থানেই শৃঙ্খলা নেই। যে কারণে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার যাত্রীদের যে ভোগান্তি হয়েছে গতকাল সেই ভোগান্তির মাত্রা ছিল আরো অনেক বেশি। ঢাকা থেকে বের হতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগেছে মানুষের। তিন-চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে গাড়ির নাগাল পেতে হয়েছে। আর যারা দূরপাল্লার বাসের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের নির্দিষ্ট গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
গতকাল ফজরের নামাজ আদায় করেই বাসা থেকে বের হন পটুয়াখালীর বিল্লাল। ভেবেছিলেন, গুলিস্তান থেকে বাসে চড়ে শিমুলিয়া ঘাটে যাবেন। সেখান থেকে ওপারে গিয়ে বরিশালের গাড়িতে উঠবেন। ভোর ৫টার দিকে গুলিস্তান গিয়ে দেখেন কয়েক হাজার মানুষ। গাড়ির জন্য লাইন দিয়েছেন তারা। একটি করে গাড়ি আসছে, আর যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছে। সেই লাইন দিয়ে গাড়িতে উঠতে তার দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। শিমুলিয়া যেতে ঘাটে ঘাটে থেমেছে গাড়িটি। প্রায় ২ ঘণ্টা পরে গাড়িটি শিমুলিয়া ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থান নেয়। কিন্তু গাড়ি আর চলছে না। সেই সকালে শিমুলিয়া ঘাটে প্রায় এক শ’ গাড়ির জট। বিল্লাল জানান, এ রাস্তাটুকু হেঁটে যেতে হয়েছে। ঘাটে গিয়ে দেখেন আরো করুণ দশা। হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন লঞ্চ ও স্পিডবোটের জন্য। স্পিডবোটের সিরিয়ালে রয়েছেন অন্তত দু শ’ মানুষ। প্রায় ১ ঘণ্টা লেগেছে স্পিডবোটে চড়তে। ওপারে কাঠালতলী গিয়ে দেখেন মানুষের দীর্ঘ লাইন বাসে চড়ার। প্রতিটি কাউন্টার থেকে অন্তত পাঁচটি বাসের অগ্রিম টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। বেলা ১টার দিকে তিনি গাড়ি পান। তিনি বলেন, এমন ভোগান্তি হবে তা ভাবতেও পারিনি।
এ দিকে, বিল্লাল জানান, পরিবহনগুলোতেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে শিমুলিয়ার ভাড়া ৭০ টাকা। সেখানে গতকাল রাখা হয় এক শ’ টাকা। স্পিডবোটের ভাড়া রাখা হয়েছে দ্বিগুন। ওপারে কাঠালতলী থেকে বরিশালের ভাড়া নন এসি দু শ’। আর এসি আড়াই শ’ টাকা। গতকাল রাখা হয়েছে পাঁচশ টাকা। একাধিক যাত্রী বলেন, গুলিস্তান, শিমুলিয়া ঘাট, কাঠালতলী পরিবহন কাউন্টার কোথাও শৃঙ্খলা নেই। বিশৃঙ্খলার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। যাত্রীরা জানান, গতবার ঈদের তিন দিন আগে ও পরে এই রুটে ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু এবার ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা হয়নি। ভুক্তভোগীরা বলছেন, দিন যতো বাড়তে থাকে শিমুলিয়া ঘাটের যানজটও ততোই বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে কাওসার নামের এক যাত্রী জানান, ঘাটে তিন কিলোমিটার যানজট। সেখানে অন্তত ছয় শ’ গাড়ি আটকে পড়েছে। গতকাল বিকেলে খবর পাওয়া গেছে, ঘাটে তখনো তিন শ’য়ের মতো গাড়ি আটকে আছে।
এ দিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডেও গতকাল তীব্র যানজট লক্ষ করা গেছে। এক যাত্রী জানান, মেঘনা থেকে গোমতি ব্রিজ পর্যন্ত গতকাল দিনভর যানজট লেগেছিল।
এ দিকে, ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে গতকাল তীব্র পরিবহন সঙ্কট লক্ষ করা গেছে। গাবতলী টার্মিনালে গিয়ে সকালে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ পাটুরিয়া ঘাটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন কিন্তু গাড়ি নেই। যে দু’একটি গাড়ি আছে তাতে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ।
এ দিকে, দূরপাল্লার বাসে যারা অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন তারাও পড়েন চরম বিপাকে। গতকাল সকালে গাবতলী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ অপেক্ষা করছেন গাড়ির জন্য। বেশির ভাগ কাউন্টারেই নির্দিষ্ট সময়ে গতকাল গাড়ি পাওয়া যায়নি। ফলে যাত্রীদেরকে ঘন্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেকে বলেছেন, তারা ঝামেলা এড়ানোর জন্য সেহরি সেরেই টার্মিনালের উদ্দেশে এসেছেন কিন্তু গাড়ি না পেয়ে এখন হতাশ।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক বলছেন, পথে পথে তাদেরকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এই টাকাতো আর মালিক দিবেন না। তাই বাধ্য হয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও গতকাল তীব্র যানজট ছিল। একাধিক যাত্রী মোবাইল ফোনে জানান, গাড়ি ধীর গতিতে চলছে। এই চলছে, এই থামছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবেই তারা বাসের মধ্যে রয়েছেন।
এ দিকে, যাত্রীদের অনেকেই বলেছেন, গাড়ির চালক রাস্তার ওপর গাড়ি থামিয়ে মহাসড়কেও যাত্রী তুলছে। যে কারণে কোথাও কোথাও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঘাটগুলোতে বাড়তি টাকার জন্য কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে রাখা হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এ দিকে, বিপ্লবী সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, রাস্তায় যানবাহনের খুব চাপ। যে কারণে কোথাও কোথাও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
লঞ্চ টার্মিনালেও ছিল চরম বিশৃঙ্খলা। একাধিক যাত্রী বলেন, টার্মিনালে পৌঁছতেই তাদেরকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। গতকাল পল্টন মোড় থেকেই যানজট লক্ষ যায়। বিকেলে শত শত যাত্রীকে এই পল্টন মোড় থেকে সদরঘাট টার্মিনালের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/230990