২৩ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩২

ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগে নাকাল ঘরমুখী যাত্রীরা

দুর্ভোগকে সঙ্গী করে ঈদ যাত্রা শুরু করেছে লাখ লাখ মানুষ। স্বজনদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়ে বেশির ভাগ মানুষ রাজধানী ছাড়াতে শুরু করেছে। এছাড়া বিভাগীয় শহর থেকে অনেকে গ্রামের বাড়িতে যাত্রা শুরু করছে। কিন্ত পথে পথে বিড়ম্বনার শেষ নেই তাদের। টার্মিনাল থেকে শুরু করে মহাসড়কের ঘাটে ঘাটে মহাদুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনেকে আটকে আছেন মহাসড়কে। রওনা দিয়ে কখন বাড়ি ফিরবেন তা কেউই বলতে পারছে না।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৬ জুন উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। গতকাল থেকেই শুরু হয় ঈদযাত্রার আসল চাপ। লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন। মহাসড়কে বাড়ছে ভিড়।
ঈদযাত্রায় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রতিবছর। এবার ব্যতিক্রম নয়। যানজটে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মহাসড়কের পুরনো সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি, তাই এবার ভোগান্তির শঙ্কা কমেনি। বরং বেড়েছে।
কারণ হিসেবে জানা গেছে, মহাসড়কের কোথাও ভাঙাচোরা, আবার কোথাও চলছে উন্নয়নের কাজ। কোনো স্থানে সড়ক ভালো তো, সেতুতে সমস্যায় এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরেই মহাসড়কে যাত্রীদের ভুগতে হচ্ছে। তাই এবার ঈদে ঢাকা ছাড়ার ক্ষেত্রে মানুষের মনে ভয় জাগাচ্ছে মহাসড়ক।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, মহাসড়কের ২৫ ভাগ ভাঙাচোরা। জেলা সড়ক হিসাবে নিলে দেশের মোট সড়কের ৩৭ ভাগেরই অবস্থা বেহাল। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও স্বীকার করে বলেছেন, ‘জেলা সড়কের অবস্থা মহাসড়কের তুলনায় খারাপ।’ প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ যখন দুয়ারে, তখন সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। সওজ কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন, এতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। টানা বৃষ্টিতে সংস্কারকাজ ‘ভেসে’ যাচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, মেরামতের কাজ যথাসময়ে শেষ হয়েছে। এখন যে কাজ চলছে, তা মেরামত নয়। কোথাও বিটুমিনের কাজ হচ্ছে না। সড়কের যেসব অংশ ভাঙাচোরা, সেখানে বালু ও ইট ফেলা হচ্ছে। এগুলো সাময়িক ব্যবস্থা, মেরামত নয়।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন মহাসড়কে ছোট-বড় গর্ত ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত রোববার সরেজমিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী সেতু থেকে চৌরাস্তা অংশে একই অবস্থা দেখা গেছে। বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশও। গত রোববার টঙ্গী সেতু থেকে চৌরাস্তা অংশে ইট ফেলে গর্ত ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সংস্কার কাজ পরিদর্শন করতে যান সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। জলাবদ্ধতার কারণে এতে কোনো লাভ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যানবাহন চালকরা। তারা বলছেন, মহাসড়কের দুই পাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মূল সড়ক সরু হয়ে গেছে, এতেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা অংশ চার লেন উন্নীত করার কাজ চলছে। প্রতিবছর এ মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি যাত্রী দুর্ভোগ হয়। এ মহাসড়কে ভোগরা, চন্দ্রা, এলেঙ্গায় ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় প্রতিনিয়ত। গতকালও চন্দ্রা, কোনাবাড়ী, মির্জাপুরে ছিল দীর্ঘ যানজট।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে বহুল প্রত্যাশিত এ মহাসড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের সুফল আটকে আছে কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুতে। গত সপ্তাহ থেকে গোমতী ও মেঘনা সেতুতে ওয়েব বেইজড টোল পদ্ধতি চালুর পর টোল প্লাজা থেকে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। ঈদযাত্রায় যানজট আরও বাড়ছে।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রতি ঈদেই টোল প্লাজার কারণে এই দুই সেতুতে দীর্ঘ যানজট হয়। সরকার যদি ঈদের আগে ও পরে কয়েক দিনের জন্য টোল মওকুফ করে, তাহলে এ সমস্যা থাকত না। সরকারের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হলেও যাত্রীরা স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
ঢাকা-সিলেটে মহাসড়কের প্রবেশপথ নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে যানজট হচ্ছে। গতকালও ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজের কারণে যানবাহন থেমে থেমে চলে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুলতা ও গোলাকান্দাইল এলাকা। সেখানে দীর্ঘসময় ধরে যানজটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীসহ মালামাল পরিবহন শ্রমিকদের।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে প্রতিদিনের মতো গতকালও সকাল থেকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সড়কটিতে যানজটের প্রধান কারণ হল, ভুলতা ফ্লাইওভার ও রাস্তার নির্মাণকাজ, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা, চালকরা নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানো, হাটবাজারে মালপত্র লোড-আনলোড, অবৈধ ফুটপাতের দোকান, স্থানীয় চাঁদাবাজদের গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায়, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। এ কারণে সারাদিন এ সড়কে যানজট লেগেই ছিল। দুই সন্তান নিয়ে ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে গতকাল রওনা দেন সুফিয়া বেগম। তিনি জানান, সকাল ৯টায় সায়েদাবাদ থেকে বাস ছেড়ে ভুলতা এসে ২ ঘণ্টা যানজটে পড়ে আটকে আছি। কখন যে বাড়ি পৌঁছব জানি না।
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি শুরু হয়েছে আরিচা ও মাওয়া ফেরিঘাটে। দুই ফেরিঘাটে পদ্মা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার যাত্রীরা ঢাকা ছাড়েন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের অবস্থা তুলনামূলক ভালো হলেও ফেরিঘাটে পারাপারের বাস-ট্রাকের দীর্ঘ সারি তৈরি হচ্ছে। গতকালও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। ঈদ কেন্দ্রিয় এ সংস্কার কাজের কারণে যানজট বেড়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/289198-